জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপন সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের ১৩ বছরের কারাদণ্ড প্রত্যাশা করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে এই রাজনীতিকের আইনজীবীর দাবি, তার অপরাধ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে দুদক। তিনি আশা করেন, খালাস পাবেন মির্জা আব্বাস।
মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক মঞ্জুরুল ইমামের আদালত মামলাটির রায় ঘোষণা করবেন। গত ২২ নভেম্বর যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার জন্য ৩০ নভেম্বর তারিখ ধার্য করেছিলেন। তবে ওই দিন আদালত রায় প্রস্তুত করতে না পারায় ১২ ডিসেম্বর রায়ের জন্য নতুন করে এই তারিখ ধার্য করেন।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, রায়ে মির্জা আব্বাসের ১৩ বছরের সাজা প্রত্যাশা করছি। দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৬(২) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছরের কারাদণ্ড ও ২৭(১) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের সর্বোচ্চ কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আমরা আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি, সংশ্লিষ্ট আইনের ধারা অনুযায়ী তার সর্বোচ্চ ১৩ বছরের কারাদণ্ড ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হতে পারে।
তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী মহিউদ্দিন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনীত অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। আদালতকে সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে আমরা বোঝাতে সক্ষম হয়েছি মির্জা আব্বাস নির্দোষ, তিনি আদৌও কোনও অপরাধ করেননি। আশা করছি, এই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস খালাস পাবেন।
তিনি আরও বলেন, এটাই মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে প্রথম রায়। তবে ওয়ান ইলেভেন-এ একটি মামলার রায় হয়েছিল। সেই মামলায় তিনি উচ্চ আদালত থেকে খালাস পেয়েছেন। আমার আত্মবিশ্বাস বিচারক মির্জা আব্বাসকে খালাস দেবেন। এই মামলায় কোনও কিছুই প্রমাণ হয়নি। শুরু থেকেই আয়কর রিটার্ন দাখিল করে আসছেন মির্জা আব্বাস। এখানেই প্রমাণিত হয় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের (ঘ) বিধি অনুযায়ী— যদি কোনও ব্যক্তি নৈতিক স্খলনজনিত কোনও ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্তত দুই বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তার মুক্তি লাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না পর্যন্ত সংসদে নির্বাচিত হওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
ঢাকা জজ কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী যদি কোনও ব্যক্তি সর্বনিম্ম দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং মুক্তি লাভের ৫ বছর অতিবাহিত না পর্যন্ত তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য বলে গণ্য হবেন।
তবে মির্জা আব্বাসের দল বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় এবার তার প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
রাজধানীর রমনা থানায় মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ১৬ আগস্ট আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৭ কোটি ৫৪ লাখ ৩২ হাজার ২৯০ টাকার সম্পদ অর্জন এবং ৫৭ লাখ ২৬ হাজার ৫৭১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুদকের উপপরিচালক মো. শফিউল আলম মামলাটি দায়ের করেন।
মামলাটি তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ২৪ মে দুদকের উপপরিচালক মো. খায়রুল হুদা আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। তদন্তে তার বিরুদ্ধে ৪ কোটি ২৩ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ২২ লাখ টাকার সম্পত্তির তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়।
২০০৮ সালের ১৬ জুন মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। মামলাটির বিচার চলাকালীন আদালত ২৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।
জানা গেছে, রাজধানীর শাহজাহানপুর থানার নাশকতার এক মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলটির শীর্ষ নেতা মির্জা আব্বাসকে গত ৩১ অক্টোবর আটক করে পুলিশ। এরপর গত ১ নভেম্বর মির্জা আব্বাসের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ৫ নভেম্বর রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
সর্বশেষ গত ২৯ নভেম্বর এই মামলায় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতও তার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন। নাশকতার মামলাটি উচ্চ আদালতে আপিল শুনানির পর্যায়ে রযেছে।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :