নানা কারণে আওয়ামী লীগ নেতারা নিষ্ক্রিয় অথবা দলীয় কর্মকান্ডে নেই। কেউ কেউ বহিষ্কৃত হয়েছেন, অব্যাহতি পেয়েছেন। কিন্তু আগামী কাউন্সিলে এবং আগামী নির্বাচনের আগে তারা আবার আওয়ামী লীগে ফিরে আসছেন, এমন গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এই সমস্ত নেতারা নিজেরাও এখন ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় এবং নিজেদের একান্তজনের কাছে ফেরার অপেক্ষায় কথা বলছেন।
আগামী কাউন্সিলে বা তার আগেই এই সমস্ত নেতারা ফিরতে পারেন বলে আওয়ামী লীগের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। এদের প্রত্যেকেরই অফুরন্ত সম্ভাবনা আছে, ছিল এবং নানারকম কারণে তারা মূলধারা থেকে ছিটকে পড়ে গেছেন। এখন কি তারা ফিরবেন? এরকম ফেরার অপেক্ষায় যারা আছেন তাদের কয়েকজনের মধ্যে আছেন-
সোহেল তাজ
সোহেল তাজ জাতীয় চার নেতা বাংলাদেশ প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের পুত্র। তিনি ২০০৯ সালের মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। এই সময়ে শুরুতেই তিনি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে চমক দেখিয়েছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে তিনি একটি অনভিপ্রেত ঘটনার প্রেক্ষিতে তিনি পদত্যাগ করেন। এরপর তিনি সংসদ সদস্য হিসেবেও ইস্তফা দেন। কিন্তু জাতীয় চার নেতার প্রতি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতির গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে।
সোহেল তাজকেও শেখ হাসিনা অত্যন্ত পছন্দ করতেন, ভালোবাসতেন, স্নেহ করতেন। এ কারণে সোহেল তাজের অনেক পাগলামি তিনি সহ্য করেছেন। তাকে এখনও তিনি স্নেহ করেন, এমন খবর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা প্রায়ই বলে থাকেন। সেই সোহেল তাজের ফিরে আসার গুঞ্জন শুরু হয়েছে। কিছুদিন আগে তিনি তার ছেলের বিয়ের দাওয়াত দিতে ধানমন্ডির ৩ নাম্বারে গিয়েছিলেন। তারও কদিন আগে তিনি গণভবন অভিমুখে একটি র্যালি করেছিলেন এবং সেখানে একটি তিনি স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। সবকিছু মিলিয়ে রাজনীতিতে তিনি আবার উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছেন।
কেউ কেউ মনে করছেন যে, সোহেল তাজ আওয়ামী লীগের ফিরে আসবেন। কেননা খায়রুজ্জামান লিটন ছাড়া জাতীয় চার নেতার উত্তরসূরিদের কেউই আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নেই। তাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর একটা আলাদা স্নেহ রয়েছে। এই বিবেচনা থেকে সোহেল তাজ আসতে পারেন। তবে সোহেল তাজ সবসময় আনপ্রেডিক্টেবল একজন ব্যক্তি। তিনি শেষ পর্যন্ত আবার কি করবেন বা তিনি আদৌ আসবেন কিনা, সে নিয়েও অনেকের মধ্যে সংশয় রয়েছে।
ওমর ফারুক চৌধুরী
ওমর ফারুক চৌধুরী যুবলীগের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে যুবলীগ মেধামননের চর্চা শুরু করেছিল। বিভিন্ন প্রকাশনা তৈরি করা, ক্রোড়পত্র তৈরি করা ইত্যাদির মাধ্যমে যুবলীগকে তিনি একটি নতুন মাত্রা দিয়েছিলেন। বিশেষ করে দেয়াল লিখন, রাজপথে ব্যানার-ফেস্টুন ইত্যাদির বদলে জ্ঞানভিত্তিক রাজনীতির একটি ধারা প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি প্রশংসিত হয়েছিলেন।
তবে তার সমালোচনাও ছিলো। ক্যাসিনো বাণিজ্যের অভিযোগ যখন যুবলীগকে আক্রান্ত করে, সম্রাট-খালেদসহ বিভিন্ন যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, তখন ওমর ফারুকও সমালোচনার মুখে পড়েন। যদিও এসব কোনো কিছুর সঙ্গেই ওমর ফারুক চৌধুরীর কোনো সম্পর্ক ছিল না। এর পরপরই যুবলীগের কংগ্রেসের (সম্মেলন) তারিখ ঘোষণা করা হয় এবং সে সময় তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এরপর থেকে এক ধরনের নীরবতা পালন করছেন ওমর ফারুক চৌধুরী। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করে এবং এই তদন্তে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন।
তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই শেষ পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি। এখন তিনি ব্যক্তিগত ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের মধ্যে জোর গুঞ্জন ওমর ফারুক চৌধুরী ফিরে আসছেন। এবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তাকে দেখা গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
মোল্লা কাওছার
মোল্লা কাওছার ছিলেন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ক্যাসিনো অভিযানের সময় তার বিরুদ্ধেও অভিযোগ উত্থাপিত হয় এবং তাকেও পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তবে বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, মোল্লা আবু কাওছারের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগগুলো উত্থাপন করা হয়েছিল তিনি তার ধারেকাছেও ছিলেন না। এ কারণে আবার আওয়ামী লীগে তিনি ফিরে আসবে তবে তিনি কিভাবে ফিরে আসবেন এ সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জাহাঙ্গীর আলম
জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ছিলেন। তার একটি বিতর্কিত বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি তাকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়। একই সাথে মেয়র পদ থেকে অপসারণ করা হয়।
তবে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন তার ব্যাপারে অনেকটাই নমনীয় এবং তাকে ফিরে আসার ব্যাপারে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে জাহাঙ্গীর তার বহিষ্কারাদেশ জন্য আবেদন করেছেন। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে আগামী কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে তিনি ফিরে আসতে পারেন বলে অনেকেই ধারণা করছেন।
একুশে সংবাদ/সফি/এসএপি
আপনার মতামত লিখুন :