AB Bank
  • ঢাকা
  • শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণিঝড়: প্রতিকার ও সচেতনতার নতুন পাঠ


Ekushey Sangbad
একুশে সংবাদ ডেস্ক
১০:৩৬ পিএম, ১৬ মে, ২০২৫

চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণিঝড়: প্রতিকার ও সচেতনতার নতুন পাঠ

বাংলাদেশের উপকূলীয় জনপদগুলো প্রতিবছরই প্রকৃতির এক কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যায়—ঘূর্ণিঝড় নামের এক ভয়াল বাস্তবতা তাদের জন্য নতুন কিছু নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে এই ঘূর্ণিঝড় এখন আগের তুলনায় আরও অপ্রত্যাশিত, তীব্র ও ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া প্রতিটি নিম্নচাপ যেন একটি সম্ভাব্য দুর্যোগের আশঙ্কা নিয়ে আসে।

সাম্প্রতিক সময়েও আবহাওয়া অফিস থেকে ঘূর্ণিঝড়ের আগাম সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় শুধু প্রাকৃতিক ভয়ের মধ্যে বসে থাকা নয়, এখনই দরকার বাস্তবমুখী প্রতিকার ও সচেতনতা।

ঘূর্ণিঝড়: একটি অনিবার্য বাস্তবতা

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানই আমাদের দুর্যোগপ্রবণ করে তুলেছে। বিশেষ করে খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রামসহ দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা ও চরাঞ্চলসমূহ প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও বন্যার মুখোমুখি হয়।

ঘূর্ণিঝড় সিডর (২০০৭), আইলা (২০০৯), রোয়ানু (২০১৬), ফণী (২০১৯), আম্পান (২০২০)—এসব ঘূর্ণিঝড় আমাদের দেখিয়েছে কীভাবে কয়েক ঘণ্টার দুর্যোগে হাজারো মানুষের জীবন ও জীবিকা লণ্ডভণ্ড হয়ে যেতে পারে। ঘরবাড়ি, ফসল, মাছের ঘের, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান—সবই পড়ে বিপর্যয়ের মুখে।

কিন্তু আমরা যদি শুধু ভয় পেয়ে বসে থাকি, তবে সমাধান হবে না। ঘূর্ণিঝড়কে মোকাবিলা করতে হলে দরকার সংগঠিত প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা ও ব্যাপক সচেতনতা।

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রতিকার

ঘূর্ণিঝড় একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, কিন্তু এর ভয়াবহতা কতটা হবে, তা নির্ভর করে আমাদের প্রস্তুতির ওপর। কিছু প্রধান প্রতিকারমূলক ব্যবস্থার কথা নিচে উল্লেখ করা হলো:

১. আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা

বাংলাদেশে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়লেও এখনো অনেক স্থানে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। অনেক পুরনো কেন্দ্র রয়েছে, যেগুলো ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

নতুন আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পানি, বিদ্যুৎ, শৌচাগার, নারীদের জন্য আলাদা জায়গা এবং প্রতিবন্ধীদের প্রবেশযোগ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। শিশুদের জন্য খাবার ও নিরাপত্তার ব্যবস্থাও থাকতে হবে।

২. দ্রুত তথ্য প্রচার ব্যবস্থা

অনেক সময় দুর্যোগ আসার আগেই মানুষ ঠিকঠাক বার্তা পায় না বা গুরুত্ব দেয় না। তাই সময়োপযোগী তথ্য আদান-প্রদানের ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করতে হবে। মোবাইল ফোনে সতর্কবার্তা, কমিউনিটি রেডিও, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, স্থানীয় মসজিদের মাইকে প্রচার—সব মাধ্যমকে কাজে লাগাতে হবে।

৩. স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দল প্রস্তুত করা

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (CPP)-এর কার্যক্রমকে আরও বিস্তৃত করতে হবে। স্থানীয় যুব সমাজকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দুর্যোগকালীন উদ্ধার ও সেবা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তারা সবচেয়ে দ্রুত পৌঁছাতে পারে দুর্গত মানুষের কাছে।

৪. পরিবেশভিত্তিক প্রতিরক্ষা গড়ে তোলা

প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলো যেমন ম্যানগ্রোভ বন (সুন্দরবন), বাঁধ, জলাশয়—এসব রক্ষায় তৎপর হতে হবে। উপকূলে কৃত্রিম বাঁধ নির্মাণ ও পুরোনো বাঁধের সংস্কার জরুরি। একসঙ্গে বন সংরক্ষণ ও বনায়নও চালিয়ে যেতে হবে।

সচেতনতা: প্রতিরোধের মূল অস্ত্র

ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস এলেও অনেক সময় মানুষ সেটিকে গুরুত্ব দেয় না। কেউ পশুপালন ফেলে যেতে চায় না, কেউ আবার আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে দ্বিধা বোধ করে। এর পেছনে রয়েছে সচেতনতার ঘাটতি এবং কখনো কখনো স্থানীয় বিশ্বাস বা কুসংস্কার।

এই সংকট মোকাবিলায় সচেতনতাই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ:

  • স্কুল-কলেজে দুর্যোগ প্রস্তুতি বিষয়ে শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। শিশু-কিশোরদের শুরু থেকে সচেতন করতে পারলে ভবিষ্যতে একটি প্রস্তুত জাতি গড়া সম্ভব।

  • স্থানীয় এনজিও, ইউপি সদস্য, গ্রাম পুলিশ ও ধর্মীয় নেতাদের মাধ্যমে নিয়মিত জনসচেতনতা সভা, মহড়া ও প্রশিক্ষণ চালানো যেতে পারে।

  • সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সচেতনতামূলক ভিডিও, অ্যানিমেশন ও তথ্যচিত্র তৈরি করে তরুণদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করতে হবে।

 দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা: জলবায়ু সুবিচার ও অর্থায়ন

ঘূর্ণিঝড়ের ঘনঘন আগমন শুধু আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফল নয়, এটি এক জলবায়ু সংকটের অংশ। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেটি বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে খুব কম অবদান রাখলেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।

এমন বাস্তবতায় আমাদের দরকার জলবায়ু সুবিচার। উন্নত দেশগুলোর উচিত ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য উপযুক্ত অর্থায়ন ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে এ দাবি জানিয়ে আসছে—এই অবস্থান আরও জোরদার করতে হবে।

করণীয়: এখনই সময়, নয়তো দেরি হয়ে যাবে

১. উপকূলীয় বাঁধসমূহ দ্রুত সংস্কার ও শক্তিশালীকরণ
২. প্রত্যন্ত অঞ্চলে আধুনিক আশ্রয়কেন্দ্র ও মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন
৩. স্কুল পর্যায়ে দুর্যোগ শিক্ষা পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্তকরণ
৪. দুর্যোগকালীন সময়ের জন্য স্থানীয় ত্রাণ ভান্ডার গঠন
৫. পরিবেশবান্ধব অবকাঠামোতে সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি
৬. নারীদের জন্য আলাদা দুর্যোগ প্রশিক্ষণ এবং নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা
৭. মিডিয়ায় গুজব প্রতিরোধ ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে সক্রিয় পদক্ষেপ

 উপসংহার

ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। কিন্তু প্রতিবারই সেটি যেন নতুন করে ভয় দেখায়, নতুন করে বিপদ ডেকে আনে। তবে ভয় নয়, প্রতিরোধই আমাদের একমাত্র পথ।

প্রশাসন, স্থানীয় সরকার, সাধারণ মানুষ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়—সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কারণ দুর্যোগ কোনো একক সমস্যার নাম নয়; এটি একটি জাতিগত ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। প্রস্তুতি থাকলে বিপদ আসলেও ক্ষয়ক্ষতি সীমিত রাখা যায়।

প্রকৃতি যে সময় দিচ্ছে, তা কাজে লাগানোই আমাদের দায়িত্ব।

 

লেখা -মোঃ আল যাবিদ, সাব-এডিটর,একুশে সংবাদ.কম

 

একুশে সংবাদ//এ.জে

Shwapno
Link copied!