AB Bank
  • ঢাকা
  • রবিবার, ০৬ জুলাই, ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

বিপন্নের পথে লাজুক পাখি হরিয়াল


Ekushey Sangbad
হৃদয় দেবনাথ
০১:৪৮ পিএম, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪

বিপন্নের পথে লাজুক পাখি হরিয়াল

প্রকৃতি থেকে ধীরে ধীরে বিপন্ন হতে চলছে লাজুক পাখি খ্যাত হরিয়াল। লাজুক প্রকৃতির বৃক্ষবাসী রূপসী পাখির নাম হরিয়াল। একসময় এদের প্রচুর দেখা মিলত গ্রামে গঞ্জে ও বনাঞ্চলে। দল বেঁধে উড়ে এসে বসত গ্রাম এবং বনাঞ্চলের বিভিন্ন গাছের ডালে। বটগাছের লাল ফলই খাবারের তালিকায় প্রথম পছন্দ এই লাজুক  হরিয়াল পাখিদের। লাজুক রকৃতির সেই সেই হরিয়াল পাখিদের  এখন  আর খুব একটা খুঁজেও পাওয়া যায় না। 

পাহাড়ি জনপদে বিপন্ন পাখিদের মধ্যে অন্যতম হলুদ পায়ের সবুজ পাখি ‘হরিয়াল’। এক ধরনের কবুতর জাতীয় পাখি ‘হরিয়াল’ ফলভোগী বৃক্ষচারী পাখি। সাধারণত হলদে, জলপাই ও সবুজ রঙের হয়ে থাকে। পাখিটির দৈর্ঘ্য ২৫ থেকে ২৮ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। আকারের দিক থেকে স্ত্রী পাখি সামান্য ছোট ও গায়ের রং পুরুষ পাখির চেয়ে ফিকে হয়ে থাকে।তথ্যমতে, পৃথিবীতে ২৩ প্রজাতির হরিয়াল রয়েছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে হলুদ পায়ের সবুজ পাখি ‘হরিয়াল’।

বন নষ্ট আর প্রকৃতি ধ্বংসের ফলে প্রাণিকূলের বিপর্যয়ের তালিকায় যুক্ত হয়েছে ‘হরিয়াল’। প্রকৃতি ধ্বংসের পাশাপাশি বেড়েছে বন্যপ্রাণি শিকারীদের উৎপাত। আর সেই কারণেই পাহাড়ে দিন দিন কমছে বণ্যপ্রাণিসহ নানা প্রজাতির পশু-পাখি। এছাড়া মানুষের খাদ্য তালিকায় থাকা পশু-পাখিগুলো দ্রুত বিলুপ্ত হচ্ছে। অতীতে পাহাড়ে বিপুল পশু পাখির অভয়ারণ্য থাকলেও বর্তমানে অনেকটাই বন শূন্য। ফলে আবাস হারাচ্ছে প্রাণিকূল। হলুদ, বেগুনি আর কমলা রঙের বাহারি হরিয়াল আমতলীসহ উপকূলীয় এলাকার গাছে দেখা যেত। বর্ষাকালে হরিয়াল বাসা বাঁধে ও ডিম পাড়ে।হরিয়ালের ইংরেজি নাম ‘গ্রিন পিজন’ এবং বৈজ্ঞানিক নাম ‘ট্রেরন। গ্রামাঞ্চলে বটগাছ, ডুমুর (বহই) গাছে বসত। দল বেঁধে উড়ত। খড়কুটো, মরা ডালপালা, পাতা দিয়ে এরা বাসা বাঁধে। এদের প্রধান খাদ্য ফল। এ ছাড়া বাদাম ও বিভিন্ন ফসলের বীজ খেতে পছন্দ করে এরা। এদের ডানা লম্বা, গোলাকার। বলিষ্ঠ পা, বেশ খাটো। পায়ের তলায় মাংস গদি থাকে, যা চলাফেরায় উপযোগী। স্ত্রী ও পুরুষ হরিয়ালের চেহারায় পার্থক্য রয়েছে। গ্রামের বড় বটগাছ ও ডুমুর (বহই) গাছ ইটভাটায় ধ্বংস হওয়ায় হরিয়াল পাখি মূলত এখন বিপন্ন প্রজাতির পাখি। 

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি সৈয়দ আফজাল হোসেন বলেন, যেকোনো প্রাণীর প্রধান অগ্রাধিকার খাদ্য ও বাসস্থান। যখন এ দুটির সংকট হয় তখনই এরা হয় অন্যত্র সরে যায় অথবা বিলুপ্ত হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা তো প্রকৃতি ধ্বংসে মেতেছি। কাজেই হরিয়াল কেন, অনেক কিছুই হারাব।’ 

প্রকৃতি ও পাখি প্রেমীরা বলেন, এ পাখি আগে সচরাচর দেখা গেলেও এখন আর তেমন দেখা যায় না, মানুষের প্রয়োজনে বট, খেজুর, ডুমুরগাছ কেটে ফেলার কারণে এদের আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। গাছ সংরক্ষণ ও জনসচেতনতা গড়ে তুলতে পারলে এই বিরল প্রজাতির পাখি সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল হাসান খান বলেন, একসময় গভীর অরণ্য ছাড়াও গ্রাম-গঞ্জের বড় গাছে দল বেঁধে ‘হরিয়াল’ ঝাঁক বেঁধে বসতো এবং একসঙ্গে ঘুরে বেড়ালেও বর্তমানে এই পাখির দেখা মেলা ভার। পাকা বা কাঁচা ফল খেতেই হলুদ পায়ের সবুজ পাখি ‘হরিয়াল’র দল ছুটে বেড়ায় গাছের ডালে ডালে। বট, অশ্ব কিংবা শিমুলের ডালে ঘুরে বেড়ানো হরিয়াল পাখি মাটিতে খুব কমই নামে। নিরবতা হরিয়ালের পছন্দ। লোকজনের আওয়াজ শুনলেই নিজেদের আড়াল করে নিত হরিয়াল। শরীরের রঙ সবুজ হওয়ায় পাতার রঙের সঙ্গে মিশে যায়। দিন শেষে হরিয়ালের দল চোখ ধাঁধিয়ে উড়ে যায়।হরিয়ালকে ছাত্রজীবনে গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন বট, ডুমুরগাছে ঝুলে ঝুলে ফল খেতে দেখতে পাওয়া যেতো। 

জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রকৃতিগত কারণে অনেক দিন ধরে এই হরিয়াল পাখিটি এখন প্রায়  বিলুপ্তির পথে।

 

হৃদয় দেবনাথ: প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণী বিষয়ক লেখক সাংবাদিক। 

রিপোর্টার গাজী টেলিভিশন লিঃ

Link copied!