AB Bank
ঢাকা মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা’


Ekushey Sangbad
ফেরদৌস আরা বেগম
০৮:০৯ পিএম, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা’

বেশ কিছুদিন ধরেই দেশের অর্থনীতিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। মূল্যস্ফীতির হার প্রায় ডাবল ডিজিটের কাছাকাছি রয়েছে। ফলে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে প্রান্তিক আয়ের মানুষগুলোর জীবনধারণ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার নানাভাবে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য চেষ্টা করছে কিন্তু এক্ষেত্রে এখনো পর্যন্ত খুব একটা সাফল্য আসেনি। মূল্যস্ফীতি নির্ধারণের যে সিপিআই (কঞ্জিউমার প্রাইস ইনডেক্স) বাস্কেট আছে, সেখানে শহরের ক্ষেত্রে ৪২২টি এবং পল্লি এলাকার ক্ষেত্রে ৩১৮টি আইটেমকে বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মূল্যস্ফীতি পরিমাপ করে থাকে। কিন্তু এর বাইরেও আরো অনেক পণ্য আছে, যা সাধারণত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীই ব্যবহার করে। এসব পণ্য বিবেচনা নিলে মূল্যস্ফীতির প্রকৃত হার কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরো বেশি হবে।

করোনার সময় ও তারপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রবণতা প্রত্যক্ষ করা গিয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির হার একপর্যায়ে ৯.১ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল, যা ছিল দেশটির বিগত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তুরস্কে মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিক উচ্চমাত্রায় উন্নীত হয়েছিল। শ্রীলঙ্কা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো কোনো দেশে মূল্যস্ফীতির হার অস্বাভাবিক উচ্চ হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট দেশগুলো নানা প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে তাদের উচ্চ মূল্যস্ফীতির হার সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে সমর্থ হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্তত ৭৭টি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি পলিসি রেট একাধিকবার বাড়িয়ে ঋণের সুদহারের সমন্বয় করে মূল্যস্ফীতিকে সহনীয় করার চেষ্টা করেছে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে সফলও হয়েছে।  কোনো কোনো দেশে পলিসি রেট মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষিত মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। জুলাই-ডিসেম্বর মাসের জন্য যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়, সেখানে তিনটি মূল্য লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। সেখানে বলা হয়, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল করা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা, লেনদেনের ভারসাম্য সমন্বয় করা এবং নন-পারফর্মিং লোনের হার কমিয়ে আনা। উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ইন্টারেস্ট রেট করিডোর (আইআরসি) একটি বিষয় নিয়ে আসা হলো। এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে লিকুউডিটি কমিয়ে আনা এবং ঋণের সুদহারকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এর দুটি মূল রেট হলো স্টাডিং লেন্ডিং রেট (এসএলএফ) বা সিলিং রেট এবং স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট রেট (এসডিএফ) বা ফ্লোর রেট। ইন্টারেস্ট রেট করিডোরের মাধ্যমে ইন্টারব্যাংক রেটকে ফ্লোর এবং সিলিং রেটের মাঝে মুভ করানো যায়। পলিসি রেটের পরিবর্তনের কারণ কস্ট অব বরোইং বাড়ানোর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির ওপর নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব। বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই লক্ষ করা যায়, যখন মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে যায়, তখন তারা সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করে। সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির মূল উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য হচ্ছে কীভাবে বাজারে মুদ্রার জোগান কমিয়ে আনা যায়। বাংলাদেশও সেই কাজটিই করেছে। কিন্তু উচ্চ মূল্যস্ফীতি এখনো সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

দেশের অর্থনীতিবিদদের অধিকাংশই ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাজারভিত্তিক করার জন্য পরামর্শ দিলেও তা করা হয়নি। এখন বিলম্বে হলেও আইআরসির মাধ্যমে ঋণের সুদের হারের পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। সুদের হার নির্ধারণের বিষয়টি সম্পূর্ণরূপেই ব্যাংকগুলোর ওপর নির্ভর করে। ব্যাংক ঋণের সুদের হার কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে, তা পলিসি রেট দ্বারা নির্ধারিত হয়। ব্যাংক আমানতকারীদের যে সুদ প্রদান করে এবং ঋণগ্রহীতাদের নিকট থেকে যে সুদ আদায় করবে, এর মাঝে যে গ্যাপ, সেটাই ব্যাংকের স্প্রেড। ব্যাংক ঋণের সুদের হার নির্ধারণের জন্য স্মার্ট রেট রয়েছে। বন্ডের সুদের হারের গড়ের ওপর নির্ভর করে স্মার্ট রেটের পরিবর্তন হয়। বর্তমানে বন্ডের সুদের হার যথেষ্ট বেশি। সম্প্রতি স্মার্ট রেট  বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় সাড়ে আট শতাংশ করা হয়েছে। ফলে এখন ব্যাংকের ঋণের সুদের হার দাঁড়াবে ১২ থেকে সাড়ে ১২ শতাংশ। তার অর্থ হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিডিউল ব্যাংকগুলোর জন্য ঋণপ্রাপ্তি ব্যয়বহুল করে বাজারে মানি সার্কুলেশন কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তবে মুদ্রা ছাপিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারকে অর্থ সরবরাহ করা হলে মূল্যস্ফীতি কীভাকে নিয়ন্ত্রিত হবে? অর্থ ছাপানোর প্রচেষ্টা থেকে সরকার অবশ্য ইতিমধ্যেই সরে এসেছে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের আরো একটি বিষয় হলো বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে নীতিমালা। বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে চারটি রেট চালু আছে। এর মধ্যে একটি হলো, বাংলাদেশ ব্যাংকের রেট। ব্যাংকগুলো যখন রপ্তানিকারকদের ফান্ড দেয়, তখন একরকম রেট নির্ধারণ করা হয়, আবার প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে একধরনের রেট দেওয়া হয়। কার্ব মার্কেটে রয়েছে আর একটি রেট। বৈদেশিক মুদ্রার একক বিনিময় হার প্রবর্তন এবং একে বাজারভিত্তিক করার ক্ষেত্রে অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ ছিল, যাতে হুন্ডির প্রভাব কমানো যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক  পর্যায়ক্রমে বাজারে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের যে একাধিক রেট চালু আছে, তা কমিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করবে, বলা হয়েছে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অর্থনীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে দেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রার ক্রাইসিস চলছে তাই বাংলাদেশ ব্যাংক বিলাসজাত পণ্য আমদানি নিরুত্সাহিত করছে। এর উদ্দেশ্য ছিল লেনদেনের ভারসাম্যকে অনুকূল অবস্থায় নিয়ে আসা। আমদানিব্যয় অনেকটাই কমে এসেছে।

অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে, তা মূলত আগের মুদ্রানীতির ধারাবাহিকতা রেখেই প্রণয়ন করা হয়েছে। সর্বশেষ মুদ্রানীতিতে আরো একটি নতুন বিষয় যোগ করা হলো, তা হচ্ছে ‘ক্রলিং পেগ’। আমরা তিন থেকে চারটি কারেন্সি ব্যবহার করি। কিছুদিন আগে সীমিত পরিসরে হলেও ভারতীয় কারেন্সি ব্যবহার শুরু করা হয়েছে। ক্রলিং পেগ পদ্ধতি এখনো পর্যন্ত বাস্তবায়ন পর্যায়ে আসেনি। ক্রলিং পেগ পদ্ধতি যে খুব একটা কার্যকর হবে, তা মনে করার কোনো কারণ নেই। ক্রলিং পেগের নেতিবাচক প্রভাবও আছে। যারা বৈদেশিক মুদ্রার সুবিধা নিতে চান, বিশেষ করে পণ্য রপ্তানিকারকগণ, তারা মনে করতে পারেন, যেহেতু বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে তাই উপার্জিত অর্থ দেশে আনার ক্ষেত্রে তারা ‘ধীরে চলো’ নীতি অনুসরণ করতে পারেন। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ-স্ফীতি করার প্রচেষ্টা বিঘ্নিত হতে পারে। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, ক্রলিং পেগ পদ্ধতি বিশ্বের অনেক দেশেই ঠিকমতো কাজ করেনি।

মূল্যস্ফীতির সঙ্গে অর্থনীতি জড়িত। এক্ষেত্রে মুদ্রানীতিই কিন্তু সবকিছু নয়, অর্থাত্ শুধু মুদ্রানীতি দিয়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে খুব একটা সফল হওয়া যাবে না। মুদ্রানীতির সঙ্গে ফিস্কেল পলিসির সংযোগ সাধন করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংককে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। অর্থমন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংককে শুধু নিয়ন্ত্রণই করছে না, বিভিন্ন পলিসিও দিচ্ছে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে দেশের অর্থনীতির প্রয়োজন মোতাবেক বিভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সম্ভব হচ্ছে না। আগের মুদ্রানীতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণখেলাপিদের বিষয়ে অনেক কিছু বলেছে। তারা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। কিন্তু ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির তো সংজ্ঞা নেই। আপনি কাকে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি বলবেন? ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি আর প্রকৃত ঋণখেলাপির বিষয়টি ব্যাংকিং সেক্টরে অনেক দিন ধরেই চলে আসছে। কিন্তু এ ব্যাপারে তেমন কিছু করা সম্ভব হয়নি। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের চিহ্নিত করা খুব একটা সহজ কাজ নয়। তাই শুধু পলিসি দিয়ে এর সমাধান করা যাবে না।

ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য এর আগে যে আইনি সংস্কার করা হয়েছে, তার কোনো কোনো বিধান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকে আগে একই পরিবার থেকে একযোগে সর্বোচ্চ দুই জন পরিচালক নিয়োজিত থাকতে পারতেন। তারা অব্যাহতভাবে দুই টার্ম (প্রতি টার্ম তিন বছর করে) দায়িত্ব পালন করতে পারতেন। কিন্তু আইনি পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রতি পরিবার থেকে চার জন পরিচালক নিয়োগের বিধান করা হয়। তারা অব্যাহতভাবে চার টার্ম দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, এমন বিধান করা হয়। কিন্তু আইএমএফয়ের আপত্তির কারণে এই আইন কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন একই পরিবার থেকে তিন জন পরিচালক নিয়োজিত হতে পারছেন। তারা অব্যাহতভাবে চার টার্ম বা ১২ বছর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।

এই মুহূর্তে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার এখন অর্থের প্রয়োজন মেটানোর জন্য বাজারে বন্ড ছাড়ার চিন্তা-ভাবনা করছে। এই মুহূর্তে উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে আনাাটাই অর্থনীতির জন্য একটি অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের সফল হতে হবে। এর জন্য দরকার সুশাসন, সঠিক ও সময়মতো সংস্কার করা এবং রাজনৈতিক দৃঢ় অঙ্গীকার।

 

 

একুশে সংবাদ/ই.ফ.প্র/জাহা

 

Link copied!