AB Bank
ঢাকা সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৩, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ইতিহাসের একটি কলঙ্কিত দিন


ইতিহাসের একটি কলঙ্কিত দিন

১৫ আগস্ট ইতিহাসের শোকাবহ দিন। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের এ দিনে সপরিবার নির্মম হত্যাকা-ের শিকার হন। এটি শুধু বাংলাদেশেই নয় বিশ্ব ইতিহাসে সবচেয়ে অশ্রুভেজা কলঙ্কময় রাত। 


বিশাল হৃদয়ের যে মানুষকে কারাগারে বন্দি রেখেও স্পর্শ করার সাহস দেখাতে পারেনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, অথচ স্বাধীন বাংলার মাটিতেই তাকে  দেশীয় কতিপয় নরাধমের হাতে নির্মমভাবে জীবন দিতে হয়েছে। জাতির পিতাকে হারানোর সেই দুঃসহ স্মৃতি বয়ে চলেছেন তাঁর সুযোগ্য উত্তরাধিকারী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা। রক্তের সিঁড়ি বেয়েই রাজনীতিতে পথ চলছেন শেখ হাসিনার। যিনি আজ পিতার স্বপ্ন লালন করে তাঁর আদর্শ বুকে ধারন করে  মানুষের পক্ষে কাজ করছেন।


বাংলাদেশের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন প্রবাদ পুরুষ। বঙ্গবন্ধু একদিনে তৈরি হননি, তিনি নিজেকে তিলে তিলে তৈরি করেছিলেন সংগ্রামী জীবনযাপনের মধ্যদিয়ে। মানুষের হৃদয়ের গহীনে থাকা ভাষাÑ তথা অনুভূতিগুলো তিনি উপলদ্ধি করতে পারতেন। এই বুঝতে পারার বিশেষ গুণটিই তাঁকে জনগণের কাতারে প্রতিষ্ঠা করেছে ইতিহাসের মহানায়কে।


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের লক্ষই ছিলো শোষণহীন সমাজ গঠন। যেখানে ধনী-দরিদ্রের কোনো ব্যবধান থাকবে না। প্রত্যেক মানুষ জীবনের ন্যূনতম প্রয়োজনী তথাÑ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও কাজের সুযোগ পাবে।


সারাবিশে^ বাঙালি জাতির স্বাধীনসত্তাকে সম্মানের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। আর সেই লক্ষ্যে সারাজীবন ত্যাগ-তিতিক্ষা করেছেন, আপসহীন সংগ্রাম করে গেছেন, জেল-জুলুম অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেছেন। ফাঁসির মঞ্চও তাকে তাঁর লক্ষ্য থেকে বিন্দুমাত্র নড়াতে পারেনি। তাঁর এই আপসহীন সংগ্রামী ভূমিকা আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য আদর্শস্থানীয়।


কিন্ত আমরা কি দেখি, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই ঘাতকরা ক্ষ্যান্ত হয়নি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে পর্যন্ত বিকৃত করে ফেলেছে। বঙ্গবন্ধুর অবদান খাটো করা হচ্ছে। ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার ঘৃণ্য চক্রান্ত করেছেÑ এখনও করছে।


বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মূল্যবোধ, আদর্শ, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে সম্পূর্ণভাবে বিসর্জন দেওয়া হলো। স্বাধীনতার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে শুধুমাত্র একটি মানুষের অভাবে। বাংলার মানুুষের এই দুর্ভোগের জন্য দায়ী পরাজিত পাকিদের প্রেতাত্মা খুনি ও তাদের ষড়যন্ত্রকারী দোষররা।

 
সদ্য স্বাধীন দেশটিতে তখন চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল শুধুই ধ্বংসযজ্ঞ, চরদিকে ছিলো বর্বও পাকিস্তান বাহিনীর নৃশংসতার ছাপ। রাষ্ট্রীয় কোষাগার ছিলো শূন্যÑ ছিলো না দক্ষ প্রশাসন। এরই মধ্যে পাকিস্তান কারাগারের ফাঁসির মঞ্চ থেকে ফিরে এসে বঙ্গবন্ধু শুরু করলেন দীর্ঘদিনের আরাধ্য স্বাধীন দেশের পুনর্গঠনের নতুন সংগ্রাম। মাত্র সারে তিন বছরে পাহাড়সম বাধা অতিক্রম করে দেশকে তিনি নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। তার নান্দনিক নেতৃত্বের গুণে বাংলাদেশ ও বিশে^র নিপীড়িত মানুষের মুক্তি এবং উন্নয়নের সংগ্রামে ভরসার ছায়া হয়ে আছেন আজও।


সংগ্রামী এই রাজনৈতিক শিল্পীর ক্যানভাসে উদ্ভাসিত হয়ে আছে বাংলাদেশ নামক এক রঙিন মানচিত্র। এই শিল্পীর ক্যানভাসে ছড়িয়ে আছে মানবপ্রেম, দেশপ্রেম, মুক্তিসংগ্রাম ও দরদি নেতৃত্বের অসামান্য প্রতিচ্ছবি। একটি স্বাধীন দেশের জন্ম দিয়েই তিনি ক্ষ্যান্ত হননি। দেশটিকে কী করে সমৃদ্ধ ও জনবান্ধব করা যায়, এই অর্থনৈতিক মুক্তিসংগ্রামেও তিনি ছিলেন অবিচল। তাই অল্প সময়ের মধ্যেই একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ফিনিক্স পাখির মতো উঠে দাঁড়িয়েছিল।

 

 ছিল খাদ্যাভাব, ছিল দ্রারিদ্র্য, ছিল দুর্নীতি। কিন্তু তিনি পুরো সমাজ ও প্রশাসনের খোল-নলচে বদলে দেওয়ার আমূল সংস্কারবাদী সাহসী উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। নয়া ব্যবস্থায় খাদ্যোৎপাদন বাড়ছিল। তবে আমাদের বড়ই দুর্ভোগ্য যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে এ দেশেরই কতিপয় ক্ষমতালোভী কুচক্রী বাঙালির মুক্তির মহানায়ককে নির্মমভাবে হত্যা করে। তারা ভেবেছিল, এই হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে বাঙালি জাতির হৃদয় থেকে চিরদিনের জন্য তাকে মুছে ফেলা যাবে। 

 

কিন্তু তারা জানতো না ব্যক্তিকে হত্যা করলেও তা নীতি-আদর্শের যবনিকা সম্ভব না। বঙ্গবন্ধু বেঁচে আছেন বাংালার প্রতিটি ঘওে, প্রতিটি মানুষের অন্তরে। তাঁর আদর্শ প্রথিত আমাদেও চিন্তা-চেতনায়।  তিনি বেঁচে আছেন আমাদের নিঃশ^াস-প্রশ^াসে। তিনি চিরজাগ্রত আমাদের গল্পে, কবিতা ও শিল্পীর তুলির আঁচড়ে।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করতে হলে তরুণ প্রজন্মেও প্রয়োজন প্রকৃত ইতিহাস জানা।

 

 ইতিহাসের আলোকেই আগামীর প্রজন্মকে এগিয়ে যেতে হবে। সাথে সাথে মুক্তিবুদ্ধির চর্চা এবং দেশের মানুষের প্রতি মমত্ববোধ হৃদয়ে লালন করলেই প্রজন্মের মাঝে স্বদেশপ্রেম এবং জাতির জনকের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জাগরুক থাকবে। বঙ্গবন্ধু আমাদের যে জীবনদর্শন দিয়ে গেছেনÑ আদর্শ ছড়িয়ে গেছেন তা অমলিন।

 

 তিনি অমর হয়ে থাকবেন তরুণ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উৎকর্ষতায়। জাতির পিতা যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন আমাদের দায়িত্ব হবে সে লক্ষ্যে কাজ করে তার স্বপ্নপূরণ করা। তাহলেই তার বিদেহী আত্মা শান্তি পাবে।


রক্তাক্ত আগস্ট হোক বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে লালন করারÑ ধারন করার প্রত্যয়; মুক্তিযুদ্ধ আর দেশপ্রেমের আদর্শ লালন ও চর্চার শপথ।


লেখক: এ জিহাদুর রহমান জিহাদ
সাংগঠনিক সম্পাদক ঢাকা সংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)
 

Link copied!