AB Bank
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী
প্রতিবেশী

ঋণ করে ঘি খেয়ে বিপাকে পাকিস্তান


Ekushey Sangbad
সাব্বির আহমেদ
০৯:৩৪ পিএম, ১২ মার্চ, ২০২৩
ঋণ করে ঘি খেয়ে বিপাকে পাকিস্তান

তীব্র অর্থনৈতিক সংকট চলছে পাকিস্তানে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নেমে গেছে ৩ বিলিয়ন ডলারের নিচে, যা দিয়ে মাত্র ১৮ দিনের পণ্য আমদানির দায় মেটানো যায়। ডলারের বিপরীতে ২ মার্চ পাকিস্তানি মুদ্রার দাম ছিল ২৮১ দশমিক ৪ রুপি। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাড়াতে হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম; সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে গেছে অন্য সবকিছুর দাম। এমনিতেই দেশটিতে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা নেই; যা আছে তাও চালানো যাচ্ছে না ডলার নেই বলে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ নেই, পেট্রোল পাম্পে তেল নেই, ওষুধসহ অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল নেই। অনেক কারখানা পুরোপুরি, কোনো কোনোটা আংশিক বন্ধ থাকছে। প্রধান খাদ্যশস্য গমের দাম গত বছরের তুলনায় দেড় গুণ বেড়েছে। শাকসবজি, মাংস, পেঁয়াজ, মরিচ, ভোজ্যতেল– সবকিছুর দাম আকাশ ছুঁয়েছে।

 

দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ফেব্রুয়ারি মাসে ৪৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। পণ্যের উৎপাদন আর চাহিদা দুই-ই কমে গেছে। কাজ হারাচ্ছে মানুষ। অনেক শিক্ষার্থী এখন স্কুলে না গিয়ে কিছু আয় করে পরিবারের রুটি জোগাড়ের চেষ্টা করছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও দেউলিয়া ঘোষিত না হলেও দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ ফেব্রুয়ারি মাসে বলেছেন, ‘ইতোমধ্যে পাকিস্তান দেউলিয়া হয়ে গেছে।’ গত সাত দশকে সংবিধানকে পাশ কাটানো এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারাকে তিনি এই দেউলিয়া হওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

 

পাকিস্তানে তীব্র অর্থনৈতিক সংকট এবারই প্রথম নয়। গত ৬৪ বছরে ২২ বার আইএমএফ পাকিস্তানকে খাদে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করেছে। তবে এবারের পরিস্থিতি আগের যে কোনো সংকটের চেয়ে খারাপ। সংকট কাটাতে দরকার ডলার। আইএমএফ নতুন করে ঋণ চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে এসেছিল। তাদের শর্তাবলি মানতে পাকিস্তান রাজি না হওয়ায় আইএমএফ ফিরে গেছে। পাকিস্তান ভেবেছিল অতীতের বন্ধু ও পাওনাদাররা আরও ডলার দেবে। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন দেশে ঘুরেছেন ডলারের জন্য; কেউ রাজি হয়নি। খালি হাতে ফিরে এসে তিনি আইএমএফের শর্ত মানতে রাজি হয়েছেন। আবার আলোচনা শুরু হয়েছে।

 

পাকিস্তানের এমন পরিস্থিতির মূল কারণ বুঝতে হলে ফিরে যেতে হবে ইতিহাসের কাছে। ১৯৪৭ সালে ভারতভাগের সময় দেশটি পেয়েছিল ১৭ শতাংশ আয়ের উৎস আর ৩৩ শতাংশ সেনাবাহিনী। বর্তমান পৃথিবীর সপ্তম বৃহৎ সেনাবাহিনী নিয়ে এবং ষষ্ঠ পরমাণু শক্তি হিসেবে গর্ব করে দেশটি। এই গর্বই কাল হয়েছে পাকিস্তানের জন্য। ৭৫ বছরের স্বাধীন দেশটিকে রাজনীতিবিদ নয়, বাস্তবিক অর্থে একচ্ছত্র শাসন করেছে ও করছে সেনাবাহিনী। যে ধরনের সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন– রাষ্ট্র, সরকার, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন সবকিছু চলেছে সেনাবাহিনীর তর্জনী হেলনে। তাদের ইচ্ছেমতো চলেছে রাজনীতি, অর্থনীতি। এখনও চলছে। এই দুর্দিনেও শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি করছেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যরা। সাধারণ মানুষ খেতে পাক কি না-পাক, বুলেটপ্রুফ গাড়ি তাঁদের চাই। সেনাবাহিনীর সঙ্গে সঙ্গে ধনী থেকে ধনীতর হয়েছে অভিজাত শ্রেণি।

 

পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে তুষ্ট রাখতে ব্যর্থ হয়ে গদি ছাড়া হয়েছেন এককালের পশ্চিমাদের প্রিয় পাত্র, বিশ্বনন্দিত ক্রিকেটার ইমরান খান। তাঁর ক্ষমতা হারানোর আরেকটি কারণ– মার্কিন পন্থা ছেড়ে চীন-রাশিয়ার দিকে ঝোঁকা। মার্কিনদের অনুগত সেনাবাহিনী ইমরানের এই বেলাইনে চলা পছন্দ করেনি। ইমরানই প্রথম পাকিস্তানি নেতা, যিনি উপলব্ধি করেছেন আফগানিস্তান যুদ্ধে আমেরিকার তাঁবেদারি করে ৮০ হাজার পাকিস্তানির জীবনদানের অসারতা। এ কথা তিনি জনসমক্ষে বলেছেনও বহুবার। তিনিই প্রথম কোনো পাকিস্তানি নেতা, যিনি আমেরিকা ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন।

 

পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ হোক আর সরাসরি সেনা শাসন হোক– যে যখন ক্ষমতায় এসেছে, সে তখন ক্ষমতা উপভোগ করেছে। জনগণের জন্য কিছুই করেনি। ১৯৯৩ থেকে ২০২০– এই ২৭ বছরের মধ্যে তাদের অর্থনীতি মাত্র দু’বার ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে স্বৈরশাসক পারভেজ মোশাররফের সময়ে। ২০০১ সালে সেপ্টেম্বরে আমেরিকার পেন্টাগন আর টুইন টাওয়ারের ওপর আল কায়দা হামলা চালালে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে আমেরিকা। ওয়াশিংটনের সঙ্গে ইসলামাবাদের তখন গলায় গলায় খাতির। আফগান যুদ্ধে আমেরিকার ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে পাকিস্তান; সে সুবাদে ডলারের ঢল নামে। বেসরকারি খাতও ব্যাপক বিনিয়োগ করে। হাতে অযাচিত বাড়তি নগদ এলে যা হয় তাই হয়েছে। ক’দিন ফুর্তি-ফার্তা করে আবার যে পাকিস্তান, সেই পাকিস্তান। থেকে গেল মৌলবাদ আর জঙ্গিবাদ। জাতিসংঘের তালিকায় রয়েছে পাকিস্তানের ১৫০টি ছোট-বড় জঙ্গি গোষ্ঠী। এখন পাকিস্তানের সব অঞ্চলে প্রায় প্রতি সপ্তাহে ছোট-বড় জঙ্গি হামলা হয়– মানুষ মরে পড়ে থাকে মসজিদে, বাজারে, স্কুলে। জঙ্গিবাদে বলির সংখ্যা বছরে কয়েক হাজার।

 

চীনের সঙ্গে সিপ্যাক চুক্তি করার পর পাকিস্তানে আরেকবার বাতাসে ডলার উড়েছে। তাও ধরে রাখা যায়নি। যাবে কী করে? তাদের কোনো অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নেই যে! দেশটা সবসময় রপ্তানি থেকে আমদানি বেশি করেছে। অর্থাৎ ধার করে ঘি খেয়েছে। বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে বেশুমার ঋণ করেছে। তাদের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দেশজ আয়ের ৮৯ শতাংশ। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে তাদের ২২ বিলিয়ন ডলার শুধু ঋণের কিস্তিই দিতে হবে। দেশটি আইএমএফের সঙ্গে যে ২২টি ঋণ চুক্তি করেছে, তার একটির শর্তও পূরণ করেনি। ঋণ নেওয়ার সময় তারা অনেক কাগুজে পরিকল্পনা বানায়। টাকা পাওয়ার পর তা আর বাস্তবায়ন করে না।

 

পাকিস্তানে সরকার এসেছে, সরকার গেছে। তারা শুধু দুর্নীতি করেছে, সেনাবাহিনী আর অভিজাতদের সম্পদের পাহাড় বানানোর সুযোগ করে দিয়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেনি। দারিদ্র্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ উন্নয়ন– সবকিছুতেই প্রতিবেশীদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। হয়তো এবারও আইএমএফ পাকিস্তানকে খাদের কিনারা থেকে উদ্ধার করবে। কিন্তু এভাবে আর কত দিন? দিন বদলাতে হলে তাদের রাজনৈতিক সচেতনতা দরকার; জেগে ওঠা দরকার; শাসকগোষ্ঠীর অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করা দরকার। পাকিস্তানিদের চেতনা ফেরানোর চেষ্টা কিছুদিন ধরে ইমরান খান করছেন। সমাজের সচেতন অংশ তাতে তাৎক্ষণিক সাড়াও দিয়েছে। কিন্তু সেনাবাহিনী ও অভিজাততন্ত্র এখন তাঁকেই নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাইছে।

 

একুশে সংবাদ.কম/আ.জ.প্র/জাহাঙ্গীর

Link copied!