আল-আমিন এম তাওহীদ: জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে শুক্রবার সকাল থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস ও ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পরিবহণ মালিকরা। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার যাত্রী পরিবহণ সংগঠনগুলোর নেতারা তাদের এ অনানুষ্ঠানিক এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে পণ্য পরিবহণের একটি সংগঠন। বৃহস্পতিবারই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন রুটে বাসে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়। নৌপথের লঞ্চ চলাচল বন্ধ না হলেও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে শুক্রবার বৈঠক ডেকেছেন মালিকরা। তেলের বাড়তি দাম প্রত্যাহার অথবা বাসের ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে সরকারকে চিঠি দিয়েছেন পরিবহণ মালিকরা।
পরিবহণ নেতারা বলেন, প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর ঘটনা ইতিহাসের প্রথম। এছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতু ও মুক্তারপুর সেতুর টোল ২৫৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এতে বাস ও ট্রাকের প্রতি ট্রিপেই খরচ বেড়ে গেছে কয়েক হাজার টাকা। এর মাশুল গুনতে হবে সাধারণ যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সভাপতি বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণে গণপরিবহণ তিন মাস বন্ধ ছিল। ওই লোকসান এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এর মধ্যে হঠাৎ প্রতি লিটারে ১৫ টাকা দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তে মালিকদের মাথায় বজ্রপাতের মতো হয়েছে। এভাবে দাম বাড়ানোর কারণে প্রতি ট্রিপে কয়েক হাজার টাকা বাড়তি ব্যয় হবে। এর প্রতিবাদে মালিকরা কী সিদ্ধান্ত নেবেন, তা জানি না। তবে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
দুটি সেতুর টোল ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে পণ্য পরিবহণ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, ট্যাংকলরি প্রাইম মুভার মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ। তেজগাঁও সংগঠনের কার্যালয়ে এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় নেতারা বলেন, দুই বছর করোনার দীর্ঘ মেয়াদের প্রভাবের কারণে বেশির ভাগ পরিবহণ বন্ধ ছিল। এর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে না উঠতে তেলের দাম বাড়িয়ে পরিবহণ মালিকদের ব্যবসায় বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতু ও মুক্তারপুর সেতুর টোল ২৫৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কয়েকগুণ বাড়বে। এর প্রতিবাদে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য পণ্য পরিবহণ বন্ধ রাখা হবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকালে বাস মালিকরা বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে ধর্মঘট ডাকা না হলেও অনানুষ্ঠানিকভাবে বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মালিকরা ফোন করে তাদের বাস বন্ধ রাখতে শ্রমিকদের নির্দেশ দেন।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, আমরা ধর্মঘট ডাকিনি। তেলের দাম বাড়ায় বাস চালিয়ে লোকসান হবে বলে মনে করছেন মালিকরা। তারা বাস চালাতে রাজি নন। তবে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত দিইনি।
এছাড়াও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যালয়ে সংগঠনের সিনিয়র নেতারা বৈঠক করেন। সেখানে অনানুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়- শ্রমিকরা আজ কোনো বাস-ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চালাবেন না।
এদিকে বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, সরকার যেভাবে তেলের দাম বাড়িয়েছে তাতে ব্যবসা করা যাবে না। আগের তেলের দামের সঙ্গে ভাড়া বাড়ানো হয়নি। আমরা দীর্ঘদিন ভাড়া বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছি। এর মধ্যে আবার তেলের দাম প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানো হলো। বিষয়টি নিয়ে মালিকরা বৈঠকে বসবেন। ওই বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।
একুশে সংবাদ/এএমটি
আপনার মতামত লিখুন :