ভারতের তরুণ জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগই এখনও কাজ করার মতো পরিণত বয়সে পৌঁছায়নি। অন্যদিকে এক বিপুল জনগোষ্ঠী পৌঁছে গেছে বার্ধক্যে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জন্মহার কমে যাওয়ার মতো সমস্যা। এই সবকিছু মিলিয়ে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সামনের দিনগুলোতে বিরাট ঝুঁকির মুখে পড়বে ভারতের অর্থনীতি। কমে যাবে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন উল্লেখ করে হিন্দু বলেছে, ২০৩১ সালের মধ্যে ভারতের বয়স্ক জনগোষ্ঠী অন্তত ৪১ শতাংশ বাড়বে। আর ২০৪৬ সালের মধ্যে দেশটির বয়স্ক মানুষের সংখ্যা হবে শিশুদের তুলনায় অনেক বেশি।
২০২১ সালের জরিপ বলছে, ভারতে প্রতি ১০০ শিশুর বিপরীতে ৩৯ জন বয়স্ক ব্যক্তি রয়েছেন। প্রতি ১০০ জন কর্মক্ষম ব্যক্তির বিপরীতে বয়স্ক ব্যক্তি রয়েছেন ১৬ জন। জাতিসংঘ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, ২০৫০ সালের মধ্যে ভারতের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশই হবে প্রবীণ। শতাব্দীর শেষে প্রবীণ মানুষের হার হবে ৩৬ শতাংশ। এর অর্থ হচ্ছে, ভারতের এক–তৃতীয়াংশের বেশি মানুষের বয়স হবে ৬০ বছরের বেশি।
এদিকে ভারতের ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভিস গত বছর যে প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ প্রদেশেই নারীদের জন্মদান ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। শহরাঞ্চলেও নারীদের জন্মদান হার কমে ১ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী কমে যাওয়ার সমস্যা উন্নত দেশগুলো যেভাবে কাটিয়ে উঠতে পেরেছে, ভারতের পক্ষে তা কঠিন হবে। কারণ অধিকাংশ উন্নত দেশই তাদের জনগোষ্ঠী প্রবীণ হতে শুরু করার আগেই মাথাপিছু আয় বাড়িয়ে নিয়েছে। ফলে তারা অর্থনৈতিক চাপ সামলে নিতে পেরেছে। কিন্তু ভারত এখনও সেই অবস্থায় যায়নি। ভারত এখনও উন্নয়নশীল দেশের তালিকাতেই রয়েছে।
অর্থনীতিবিদেরা ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছেন, আগামী দশকে ভারতের অর্থনীতি সম্প্রসারিত হবে। কিন্তু জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করার স্বপ্নটি অধরা থেকে যাবে। কারণ তরুণেরা ততদিনে বৃদ্ধ হয়ে কর্মক্ষমতা হারাবে। যেহেতু পর্যাপ্ত কর্মক্ষম তরুণ থাকবে না, সেহেতু ভোগান্তিতে পড়বে পুরো জাতি।
তবে অর্থনীতিবিদ ড্যারন আসেমগলু ও প্যাসকুয়াল রেসট্রেপো ২০১৭ সালে এক গবেষণাপত্রে দেখিয়েছেন, কিছু কিছু দেশে বয়স্ক মানুষ বেড়ে যাওয়ার পরেও অর্থনীতি ঝুঁকির মধ্যে পড়েনি, কারণ তারা দ্রুত প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকে গিয়েছিল। ফলে কর্মক্ষম ব্যক্তির অভাব পূরণ করেছে রোবট ও অন্যান্য যন্ত্র। তরুণ প্রজন্ম কমে যাওয়ার ফলে যতটা কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর ঘাটতি দেখা দিয়েছিল, তা পূরণ করেছে প্রযুক্তি। ভারতও সেই পথে হাঁটবে কি না, তা এখনই স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।
একুশে সংবাদ/আ.হ.ভূ/না.স
আপনার মতামত লিখুন :