AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ঘরোয়া উপায়ে চুল ঝরে যাওয়া থেকে মুক্তির উপায়


Ekushey Sangbad
একুশে সংবাদ ডেস্ক
১২:৪৬ পিএম, ১১ জুলাই, ২০২১
ঘরোয়া উপায়ে চুল ঝরে যাওয়া থেকে মুক্তির উপায়

বর্তমানে চুল পড়ার সমস্যা নারী ও পুরুষ উভয়ের মধ্যেই দৃশ্যমান। মূলতঃ প্রাকৃতিক পরিবর্তন, আবহাওয়া ও আধুনিকতা এসবের জন্যে দায়ী। তবে চুল পড়ার কিছু কিছু প্রাকৃতিক কারণ থাকলেও শারীরিক কিছু সমস্যাও এর কারণ হতে পারে। যেমন হরমোনাল ইমব্যালেন্স, থাইরয়েড, শরীরে পুষ্টির অভাব কিংবা মাথায় রক্ত চলাচল সঠিক ভাবে না হওয়া। চুল পড়াটা একসময় খুব বড় আকার ধারণ করতে পারে। এক্ষেত্রে কখনো মাথায় টাক পড়ে যাওয়ার মতন সমস্যাও দেখা যায়। অত্যধিক চুল পড়ার ফলে পুরুষদের অধিক ক্ষেত্রে মাথার তালুর চুল কমতে দেখা যায়, মহিলাদের ক্ষেত্রে চুলের দৈর্ঘ্য পাতলা হয়ে যায় কিংবা সিঁথি ফাঁকা হয়ে যায়। তবে চুল পড়ার সমস্যা কেবল যে বড়দেরই হয় তা নয়, শিশুদের ক্ষেত্রেও এটি লক্ষ্য করা যায়। প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ টি চুল পড়লে সেটি স্বাভাবিক। কিন্তু এটির পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে সেটিকে চুল পড়ার সমস্যা হিসেবে ধরা হয়। মূলত বালিশের কভারে কিংবা স্নানের তোয়ালেতে যদি চুলের আধিক্য লক্ষ্য করা যায় তবে সে ক্ষেত্রে চুলের পরিচর্যার দিকে নজর দিতে হবে এবং এই পরিমাণ যদি অত্যধিক বৃদ্ধি পায় সে ক্ষেত্রে ডাক্তার দেখাতে হবে। কারণ, কেবলমাত্র বাহ্যিক কারণেই চুলের ক্ষতি হয় না, এর জন্য অন্তর্নিহিত কিছু কারণও থাকতে পারে। এক নজরে জেনে নিন চুল পড়ার কারণ গুলি এবং মিলিয়ে নিন কোন সমস্যাটি আপনার রয়েছে।

অত্যধিক চুল পড়ার পিছনে বেশ কিছু কারণ লক্ষণীয়। জেনে নিন চুল পড়ার গুরুত্বপূর্ণ কিছু কারণ :

১) চুল পড়ার অন্যতম কারণ হল বংশগত। যদি কোন পুরুষ কিংবা মহিলার একটি নির্দিষ্ট বয়সের পরেই চুল পড়ার সমস্যা লক্ষ্য করা যায় এবং তাদের বংশে সেই বিষয়টি ক্রমান্বয়ে দেখা যায়, তবে সেটিকে বংশগত রোগ হিসেবে ধরা হয়।

২) অনেক সময় সন্তান জন্ম দেওয়ার পরে মহিলাদের চুল পড়ার সমস্যা দেখা যায়। এক্ষেত্রে শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে এরূপ সমস্যা লক্ষ্য করা যায়। এই সমস্যা অত্যধিক বৃদ্ধি পেলে প্রয়োজনে ডাক্তারের সাহায্য নিতে হয়।

৩) চুল পড়ার সমস্যার ক্ষেত্রে কিছু কিছু শারীরিক সমস্যা ও কারণ হয়ে থাকে। যেমন কোনরকম অসুস্থতা কিংবা অপারেশনের পরে চুল পড়ার সমস্যা বাড়ে। এক্ষেত্রে চুল যে পরিমাণ ঝরে যায় তার সাথে পাল্লা দিয়ে চুলের বৃদ্ধি ঘটে না। তবে শরীর সুস্থ হয়ে উঠলে এই সমস্যাটির সমাধান হতে পারে।

৪) শরীরে হঠাৎ হরমোনের পরিবর্তনের কারণে চুল ওঠার সমস্যা দেখা দিতে পারে। মূলতঃ গর্ভাবস্থা, প্রসব বা মাসিক বন্ধ হওয়ার পর কিংবা অত্যধিক জন্মনিয়ন্ত্রণ বরি খেলে চুল ওঠার সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৫) থাইরয়েড, অ্যালোপিয়া কিংবা মাথার তালুতে দাদ এর মতন রোগ দেখা দিলে সে ক্ষেত্রে চুল ঝরার সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। মূলতঃ মাথার ত্বক সংক্রমিত হলেই এই সমস্যা লক্ষ্য করা যায়।

৬) ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ, বাত, হৃদপিন্ডের সমস্যা কিংবা মানসিক চাপের কারণে কোন ওষুধ দীর্ঘদিন খেলেও চুল পড়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৭) অত্যধিক চিন্তা কিংবা হঠাৎ কোন মানসিক আঘাত পেলে কিংবা ওজন বৃদ্ধির মত সমস্যাগুলি দেখা দিলে চুল পড়ার সমস্যা বেড়ে যায়। তবে, এগুলির ক্ষেত্রে কেবল যে মাথার চুল ঝরার সমস্যা বেড়ে যায় তা নয়, শরীরের সর্বত্রই যেমন ভ্রু, চোখের পাতা, শরীরের লোম সব জায়গাতেই চুল পাতলা হতে থাকে। এর প্রধান কারণ হল হেয়ার ফলিকলের ওপর এক ধরনের অপুষ্টির অভাব যার ফলে চুল ধীরে ধীরে পাতলা হতে থাকে।

চুল পড়ার লক্ষণ বা উপসর্গ :
চুল পড়ার সমস্যা অধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পেলে বেশ কয়েকটি উপসর্গ আমাদের চোখে পড়ে। তাই এটিকে কেবলমাত্র সাধারণ সমস্যা না বলে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসেবে তুলে ধরা উচিত। এক নজরে জেনে নিন এই উপসর্গগুলি আপনার দেখা দিয়েছে কিনা :

১) মাথার সামনের দিকে এবং তালুতে চুলের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। মাথার পিছনের অংশের থেকে চুল আঁচড়ানোর সময় এই অংশের তালু চিরুনি দ্বারা অধিক আঘাত পাচ্ছে।


২) মাথার মাঝখানে কালো কালো দাগ কিংবা দাদের মত মাথার ত্বকে কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

৩) চুল পড়ার পরিমাণ আগের তুলনায় আরো বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

৪) মাথার চুলের পাশাপাশি ভুরুর চুল কিংবা চোখের পাতা সর্বত্রই অধিক চুল পড়ার সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

৫) মাথার ত্বকে অধিক শুষ্কতা এবং খুশকির সমস্যা বেড়ে গিয়েছে।

এই সমস্যা গুলি যদি অধিক মাত্রায় লক্ষ্য করা যায় সে ক্ষেত্রে চুলের যত্ন অতি মাত্রায় প্রয়োজন। তবে এক্ষেত্রে কেবলমাত্র ঘরোয়া উপায় অবলম্বন না করে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করতে হবে। কেননা চুল পড়ার কারণ অনেক রকমের হয়, তাই চুল পড়া বন্ধ করতে সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।

চুল পড়া বন্ধ করতে ২০টি ঘরোয়া উপায় 
চুল পড়া যেমন একটি গুরুতর সমস্যা তেমনই এই সমস্যার সমাধান আমাদের হাতের কাছেই রয়েছে। বিষয়টিকে আমরা গুরুত্ব দিয়ে ভাবি না বলেই চুল পড়ার সমস্যা আমাদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হয়ে ওঠে। আসুন জেনে নিন কিভাবে আপনার রান্না ঘরে থাকা সামগ্রী দিয়েই হারিয়ে যাওয়া চুল আবার ফিরিয়ে আনতে পারবেন? অর্থাৎ সহজেই চুল পড়া বন্ধ করতে পারবেন।

১) নারকেলের দুধ দিয়েই করুন চুলের যত্ন:

চুল পরিচর্যার জন্য অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল নারকেলের দুধ। এটি চুলের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য অন্যতম উপাদান। এর মধ্যে কোন রাসায়নিক উপাদান না থাকার কারণে এটি চুলকে তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি দিয়ে থাকে। এছাড়াও চুলে ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালনকে দ্রুত করে তোলে। এছাড়াও চুলকে গভীরভাবে পুষ্টি দেয়। (১)

কি কি উপাদান প্রয়োজন?

নারকেল – ১টি
শাওয়ার ক্যাপ – ১ টি

কিভাবে ব্যবহার করবেন ?

নারকেলের দুধ বাজারে যে কোন দোকানেই প্যাকেটে কিংবা গুঁড়ো কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু প্যাকেটজাত নারকেল দুধ ব্যবহার না করে খুব সহজ পদ্ধতিতে ঘরেই বানিয়ে নিন নারকেলের দুধ। 

একটি নারকেল নিন। তারপর নারকেলটি কুড়িয়ে নারকেলের সাদা অংশটি আলাদা করে রাখুন।

এরপর একটি পরিষ্কার সাদা কাপড় নিয়ে তার মধ্যে নারকেলের গুঁড়ো গুলি একসাথে রেখে কাপড়টি শক্ত করে বেঁধে চেপে চেপে সেই নারকেল থেকে দুধ বের করে নিন।
এরপর একটি কাপের এক চতুর্থাংশ নারকেলের দুধ নিয়ে সেটি উষ্ণ গরম করে নিন।
তারপর উষ্ণ গরম হওয়া দুধটি মাথার ত্বকে ১৫ মিনিট ধরে হাতের আঙ্গুল দিয়ে মালিশ করুন।

হয়ে গেলে চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত নারকেলের দুধ লাগিয়ে ৪৫ মিনিটের জন্য তা রেখে দিন এবং মাথায় একটি শাওয়ার ক্যাপ লাগিয়ে রাখুন।

এরপর ৪৫ মিনিট পর আপনি যে শ্যাম্পু ব্যবহার করেন তা দিয়ে মাথা ধুয়ে নিন।
এর ফলে কি হবে?

সপ্তাহে একবার এটি করলে কয়েক বার ব্যবহার এর পরেই চুল এর পার্থক্য বুঝতে পারবেন। এটি চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি চুলকে আরো নরম এবং মসৃণ করবে।

২) নিম পাতা দিয়ে চিরতরে চুল পড়া কমান :
প্রাচীন যুগ থেকেই চুল পরিচর্যায় অন্যতম উপাদান হিসেবে নিমের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। আয়ুর্বেদেও নিমকে চুলের বৃদ্ধি এবং চুল পরিচর্যার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে পরিচিত। নিমে উচ্চমাত্রায় ফ্যাটি অ্যাসিড থাকার কারণে তা মাথার ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। কেননা মাথার ত্বক সুস্থ থাকলেই চুলের বৃদ্ধি ভালোভাবে হবে। মূলতঃ পাতলা চুল কিংবা টাক পড়ার সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে নিম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মাথার ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেল উৎপাদন বন্ধ করে চুলের গোড়াকে শক্ত করতে সাহায্য করে নিম। তেলের সাথে নিম পাতার রস মাথায় মাসাজ করলে মাথার রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে চুলের বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও মাথার ত্বকের ওপর নিম পাতা পেস্ট করে লাগালে তা মাথার ত্বকের ফুসকুড়ি, খুশকি, উকুনের সমস্যা, শুষ্ক ত্বক কিংবা অন্য কোন সমস্যা থাকলে তা নিরাময়ে সহায়তা করে।

কি কি উপাদান প্রয়োজন?

নিমপাতা – ১০-১২ টি
নারকেল তেল – পরিমানমত
কিভাবে ব্যবহার করবেন ?

নিম পাতা বেটে নিয়ে তারপর মিশ্রণটি চেপে চেপে নিম পাতার নির্যাস বের করে নেবেন।
তারপর নারকেল তেল এর সঙ্গে মিশিয়ে তা মাথার ত্বকে এবং পুরো চুলে ৩০ মিনিটের জন্য লাগিয়ে রাখবেন।

এছাড়াও চুলে অত্যধিক খুশকির সমস্যা থাকলে চুলের পরিমাণ অনুযায়ী নিম পাতা নিয়ে জলে ফুঁটিয়ে তারপর নিমপাতা গুলিকে বেটে মাথার ত্বকে লাগাতে পারেন। এটি অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান হিসেবে মাথার ত্বকে কাজ করবে।
এছাড়াও নিমপাতার মিশ্রনের সাথে সমান পরিমাণ অলিভ অয়েল, আমন্ড অয়েল কিংবা নারকেল তেল মিশিয়ে তেল গরম করে মাথায় লাগাতে পারেন।

চুল নরম এবং মসৃণ করার জন্য নিম পাতা বেটে তার মধ্যে মধু মিশিয়েও মাথার চুলে লাগাতে পারেন।
১০ মিনিট লাগিয়ে রাখার পর আপনি যে শ্যাম্পু ব্যবহার করেন সেটি দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে পারেন।
এছাড়াও আমলা, নিম, শিকাকাই এবং রিঠা পাউডার একসাথে মিশিয়ে তার মধ্যে পরিমাণ মতো লেবুর রস এবং মধু মিশিয়ে হেয়ার মাস্ক হিসেবে মাথায় ব্যবহার করতে পারেন যা চুলের বৃদ্ধির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।

৩) চুল পড়া রোধে মেথির ব্যবহার :

চুল পড়া রোধ করে চুলের বৃদ্ধির জন্য মেথি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি সহজেই পাওয়া যায়। কমবেশি সকলের রান্নাঘরেই এই উপাদানটি উপস্থিত থাকে। এটি চুলের দ্রুত বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। খুব শীঘ্র নতুন চুল গজাতে চাইলে কিংবা চুলের বৃদ্ধি করাতে চাইলে মেথি একটি উপযোগী উপাদান। এটি ব্যবহারের ফলে মাথার ত্বকে চুলের দ্রুত বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়। চুলের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন মেথিতে উপস্থিত থাকে যা মাথার ত্বকের রক্ত চলাচলকে ত্বরান্বিত করে। এছাড়াও মেথিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং আয়রন ও পটাশিয়াম। যা চুলের বৃদ্ধি ঘটায় ও অকালপক্কতা রোধ করতে সাহায্য করে এবং চুলকে মসৃণ এবং ঘন করে তোলে। (২)

কি কি উপাদান প্রয়োজন?

মেথি – ২ চামচ
লেবুর রস – ২-৩ ফোটা
কিভাবে ব্যবহার করবেন?

মাথার চুলে সরাসরি মেথি ব্যবহার করলে উপকার বেশি পাওয়া যায়।
রাতের বেলায় দুই চামচ মেথি এক বাটি জলে ভিজিয়ে রাখুন।
প্রয়োজন হলে তার মধ্যে লেবুর রস যোগ করতে পারেন।
সারারাত ভিজিয়ে রাখার পর সকালে চুলের মধ্যে মেথি বেটে মিশ্রণটি লাগিয়ে ফেলুন।
৩০ মিনিট রাখার পর যে কোন শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
অন্যদিকে নারকেল তেলের মধ্যে মেথি বীজ ফুটিয়ে উষ্ণ তেল চুলের গোড়ায় লাগাতে পারেন।

এটিও চুলের বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে এবং চুলের খুশকির সমস্যা দূর করবে।
এছাড়াও অকালপক্কতা দূর করে চুলকে আরো ঘন এবং কালো করে তুলবে।
সপ্তাহে একদিন করে এটি করলে এক মাসেই ব্যবধান বুঝতে পারবেন। এটি চুল পড়া রোধ করার অন্যতম একটি উপায়।

৪) ডিমের মাস্ক দিয়ে চুলের যত্ন করুন :
চুলের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটাতে অন্যতম একটি উপাদান হল ডিম। এটি চুলের রুক্ষতা দূর করে চুলকে মসৃণ করে তোলে। ডিমের সাদা অংশটি তৈলাক্ত চুলের জন্যে উপযোগী এবং ডিমের কুসুম অর্থাৎ হলুদ অংশটি শুষ্ক চুলের জন্য উপযোগী। ডিমের মধ্যে চুলের প্রয়োজনীয় প্রোটিন যেমন বায়োটিন, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ডি উপস্থিত থাকায় চুলকে সুস্থ করে তুলতে সহায়তা করে। এছাড়াও চুল স্বাস্থ্যকর এবং চকচকে করে তোলে। চুলকে সঠিক ভাবে পরিচর্যায় ডিমের ব্যবহার অপরিহার্য। ডিম চুলের খাদ্য হিসেবে পরিচিত। চুলের সমস্ত রকম পুষ্টির ঘাটতি ডিম পূরণ করে থাকে। যে কারণে চুল কে শক্তিশালী করে তোলার জন্য চুলে ডিমের মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে। (৩)

কি কি উপাদান প্রয়োজন?

ডিম – ১ টি
লেবুর রস – কয়েক ফোঁটা
কিভাবে ব্যবহার করবেন?

 একটি ডিমের কুসুম নিয়ে তার মধ্যে দু তিন ফোঁটা লেবুর রস দিন।
ভালো করে ফেটিয়ে তারপর মিশ্রণটি মাথার স্ক্যাল্পে এবং চুলের ডগা পর্যন্ত ভাল করে লাগিয়ে শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে রাখুন।

২০ মিনিট লাগিয়ে রাখার পর হালকা কোন শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
মাসে একবার থেকে দুইবার এই পদ্ধতিটি অবলম্বন করতে পারেন।

এছাড়াও ডিমের এই মাস্ক এর মধ্যে প্রয়োজনে কলা, মধু অলিভ অয়েল কিংবা নারকেল তেল যোগ করতে পারেন।

৫) চুলের যত্নে পেঁয়াজের রস :

চুলের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটাতে অন্যতম উপাদান হল পেঁয়াজের রস। পেঁয়াজের রসের মত অন্য কোন উপাদান এত দ্রুত চুল পরিচর্যায় সহায়তা করতে পারে না। পেঁয়াজের রসে থাকা উপাদান চুলকে আরো ঘন করে তোলে। এছাড়াও এরমধ্যে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান থাকায় এটি চুলকে আরো পুষ্টি যোগায়। পেঁয়াজে উপস্থিত সালফার চুলের ভাঙ্গন রোধ করে। এছাড়াও চুলের সংক্রমণ রোধ করে চুলকে আরো শক্তিশালী করে তোলে। পেঁয়াজের রসের মধ্যে উপস্থিত শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ চুলের অকালপক্কতা রোধ করে। এটির নিয়মিত ব্যবহারে নতুন চুল খুব শীঘ্রই লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও গবেষণায় লক্ষ্য করা গেছে পেঁয়াজের রসের মধ্যে ক্যান্সার প্রতিরোধক ক্ষমতা রয়েছে। এছাড়াও এটি চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে এবং খুশকি পরিষ্কার করে মাথার স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তোলে। (৪)

কি কি উপাদান প্রয়োজন?

পেঁয়াজ – ১ টি
শাওয়ার ক্যাপ – ১ টি
কিভাবে ব্যবহার করবেন?

একটি বড় মাপের পেঁয়াজ ৪ ভাগ করে কেটে নিন।
তারপর মিক্সিতে পেঁয়াজ টি মিশ্রিত করে নিন।
এরপর পেঁয়াজের মিশ্রণটি থেকে কোন নরম কাপড়ের সাহায্যে পেঁয়াজের রস আলাদা করে নিন।

এরপর পেঁয়াজের রস সরাসরি মাথার ত্বকে এবং চুলের দৈর্ঘ্যে লাগান।
মনে রাখবেন পেঁয়াজের রস মাথায় লাগানোর সময় মাথায় আঙ্গুল দিয়ে হালকা মাসাজ করবেন।

এরপর এক ঘণ্টা শাওয়ার ক্যাপ লাগিয়ে চুলটা অমনি ভাবেই রেখে দেবেন।

কিছুক্ষণ বাদে চুল রসটা টেনে নেবে। তারপর আপনি যে শ্যাম্পু ব্যবহার করেন সেটি দিয়েই শ্যাম্পু করে ফেলবেন।
এক মাসের মধ্যেই পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন।

প্রয়োজনে চুলের বৃদ্ধির জন্য এবং চুলে উজ্জ্বলতা আনার জন্য পেঁয়াজের রস ও মধু কিংবা অলিভ অয়েল কিংবা কারি পাতা ও ব্যবহার করতে পারেন।

তবে যদি সরাসরি পেঁয়াজের রসের গন্ধটা নিতে না পারেন সে ক্ষেত্রে এর মধ্যে আপনার পছন্দসই এসেনশিয়াল অয়েল অল্প পরিমাণে যোগ করতে পারেন। এতে গন্ধটা কমে যাবে।
সপ্তাহে একদিন করে এই পেঁয়াজের রস ব্যবহার করলেই পার্থক্যটা খুব শীঘ্রই দেখতে পাবেন।

৬) চুলের যত্নে যষ্টিমধু :
চুল পড়া রোধ করতে অন্যতম আয়ুর্বেদিক উপাদান হল যষ্টিমধু। যষ্টিমধু চুলের নানা সমস্যার প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এটি মূলতঃ টাকের সমস্যার সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা নেয়। যষ্টিমধুর মধ্যে উপস্থিত অ্যামিনো অ্যাসিড এবং অন্যান্য উপাদান মাথার ত্বককে আর্দ্র রাখে যা চুল কে শক্তিশালী করে তুলতে এবং চুলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। মাথার ত্বকে কোন রকম ব্রন ও ফুসকুড়ি কিংবা খুশকির সমস্যা হলেও সেটি সারাতে এটি একটি অনবদ্য উপাদান।

কি কি উপাদান প্রয়োজন?

যষ্টিমধু – ১ টুকরো
নারকেল তেল – পরিমান মত
কিভাবে ব্যবহার করবেন?

একটি পাত্রে এক কাপ জল নিয়ে তার মধ্যে এক টুকরো যষ্টিমধু নিন।
তারপর অল্প আঁচে ১৫ মিনিটের জন্য সেটি ফুটিয়ে নিন।

এরপর ১৫ মিনিট পর যে জলটি বেরোবে সেটির মধ্যে কয়েক ফোঁটা নারকেল তেল এবং ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে মাথায় লাগিয়ে রাখুন।

এটি সারা রাত লাগিয়ে রাখতে পারেন কিংবা সকালে শ্যাম্পু করার আগে কয়েক ঘণ্টার জন্য মাথায় লাগিয়ে রাখুন।

তারপর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। শ্যাম্পু না করলেও চলবে।

সপ্তাহে একদিন করে এটি করতে পারেন। এতে চুলের ফলিকল গুলো পুষ্টি লাভ করবে, শক্তিশালী হবে এবং চুলের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটবে।

৭) চুল পড়া রোধে গ্রিন টির ব্যবহার :
চুল পড়ার সমস্যা প্রতিরোধ করতে এবং চুলের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটানোর জন্য একটি অন্যতম উপাদান হলো গ্রিন টি। এতে প্রচুর পরিমাণে পলিফেনোল এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে যা চুলকে ক্ষতিকারক ইউভি রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করে এবং চুলের ক্ষতি প্রতিরোধে সহায়তা করে। এছাড়াও এটি চুলের খুশকি এবং যেকোন ধরনের স্ক্যাল্পের সমস্যাকে প্রশমিত করতে সাহায্য করে। গবেষণায় লক্ষ্য করা গিয়েছে গ্রিন-টি তে ক্যাফিন নামক একটি উপাদান রয়েছে, যা চুলের বৃদ্ধি এবং চুলের পুষ্টি তে সহায়তা করে। এছাড়াও চুলের ডগা ফাটার সমস্যা থাকলে এটি তা নিরাময় করতে সহায়তা করে। (৫)

কি কি উপাদান প্রয়োজন?

গ্রিন টি ব্যাগ – ১ টি
জল – পরিমান মত
কিভাবে ব্যবহার করবেন?

একটি ছোট বাটিতে কিছু পরিমাণ জল নিন এবং তাতে এক চামচ গ্রিন টি কিংবা একটি গ্রিন টি ব্যাগ নিন।
তারপর ৩০ মিনিট ধরে মাঝারি আঁচে জলে চা টি ফুটিয়ে নিন।

এরপর ৩০ মিনিট পর ওভেন বন্ধ করে দিয়ে চায়ের জলটিকে একটু ঠান্ডা করে নিয়ে মাথার স্ক্যাল্পে এবং চুলের মধ্যে দিয়ে মেসেজ করুন।

৫ মিনিট হাতের আঙ্গুল দিয়ে মাথার তালুতে মাসাজ করুন।
তারপর পরিষ্কার জল দিয়ে মাথা ধুয়ে নিন।
এভাবে সপ্তাহে দুদিন এটি করতে পারেন। এতে চুলের সমস্যার অনেকখানি সমাধান হবে।

৮) চুল পড়া কমাতে বিটের রস :
বিটের রস চুলের সুষম খাদ্য হিসেবে পরিচিত। চুলকে স্বাস্থ্যকর এবং প্রাকৃতিক ভাবে রঙিন করে তোলার জন্য বিটের রস অপরিহার্য। বিটের মধ্যে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং পটাশিয়াম চুলের ফলিকলগুলোকে শক্তিশালী করে তুলতে এবং চুলকে ভেতর থেকে পরিপুষ্ট করে তুলতে সহায়তা করে। বিটের রস এর মধ্যে চুলের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত উপাদানগুলি উপস্থিত। এছাড়াও প্রাকৃতিক ভাবে চুলকে রঙিন করে তোলা যায় বিটের রস এর মাধ্যমে। এতে উপস্থিত উপাদানের সক্রিয়তায় স্ক্যাল্পের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়।

কি কি উপাদান প্রয়োজন?

বিট – ২ টি
অলিভ অয়েল – পরিমান মত
কিভাবে ব্যবহার করবেন?

চুলকে শক্তিশালী ও মজবুত করে গড়ে তোলার জন্য বিটের রস ব্যবহার করতে পারেন।

দুটি তাজা বিট মিক্সিতে মিশ্রন করে রস বের করে নিতে হবে।
তার মধ্যে অলিভ অয়েল যোগ করে মাথায় পনেরো-কুড়ি মিনিটের জন্য লাগিয়ে রাখুন।
এরপর কুড়ি মিনিট বাদে হালকা কোন শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন।
এছাড়াও মাথায় খুশকি নিরাময়ের জন্য বিটকে টুকরো টুকরো করে কেটে সেটি দিয়ে স্ক্যাল্পে ঘষুন।
এর মাধ্যমে মাথার স্ক্যাল্পে থাকা মৃত কোষ উঠে যাবে এবং চুল খুশকি মুক্ত হবে।
এছাড়াও কেমিকেল সমৃদ্ধ রং ব্যবহার করে চুলের ক্ষতি এড়াতে বিটের রস চুলের রঙ হিসেবে ব্যবহার করুন।

একটি বিট কে মিক্সিতে মিশন করে তার মধ্যে থেকে রস বার করে নিন।
এরপর সেটি আধ কাপ লিকার চা এবং তার মধ্যে একটু গোলাপ জল দিয়ে মিশিয়ে মাথার চুলে এক ঘন্টার জন্য লাগিয়ে রেখে দিন।

এতে আপনি কোন চিন্তা ছাড়াই চুলে হালকা একটি প্রাকৃতিক লাল রং পাবেন।

৯) চুল পড়া কমাতে জবা ফুল :
চুল পড়া রোধের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল জবাফুল। এটি চুলের দ্রুত বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। জবা গাছের পাতা এবং ফুল দুটিই চুলের পুষ্টি জোগানোর মুখ্য উপাদান। জবাকে মূলতঃ চুলের যত্নের ফুল হিসেবেও আখ্যা দেওয়া হয়। এটি চুলের সমস্যা, খুশকি, শুষ্কতা, ধুলোবালি থেকে চুলকে রক্ষা করার ক্ষমতা রাখে। এছাড়াও চুলকে ঘন এবং শক্তিশালী করে তুলতে জবা ফুল বেশ উপযোগী। চুলের বৃদ্ধির জন্য জবা গাছের ফুল এবং পাতা তেল, কন্ডিশনার, শ্যাম্পু বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেহেতু এটি একটি প্রাকৃতিক উপাদান তাই যেকোন ভাবে এটি চুলে ব্যবহার করা নিরাপদ। চুল বৃদ্ধির জন্য এটিতে উপযুক্ত পরিমাণে সমস্ত উপাদান গুলি রয়েছে। এটি খুব কম সময়ে চুলকে দ্রুত বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এর মধ্যে ভিটামিন সি এবং অ্যামিনো এসিডের প্রচুর পরিমাণে উপস্থিতির কারণেই এটি চুলের যেকোন ধরনের ক্ষতির সাথে খুব দ্রুত লড়াই করতে পারে। জবা ফুল চুলকে মসৃণ এবং শক্তিশালী করে তুলতে সহায়তা করে এবং চুলের ভাঙ্গন রোধ করে। (৬)

কি কি উপাদান প্রয়োজন?

জবা ফুল- ৬-৭ টি
জবার পাতা – ৬-৭ টি
নারকেল তেল – পরিমান মত
কিভাবে ব্যবহার করবেন?

৬-৭ টি জবা ফুল এবং ৬-৭ টি জবা পাতা একটি ছোট পাত্রে হাফ কাপ নারকেল তেলের মধ্যে ফুটিয়ে নিন।

এরপর তেল ঠান্ডা হলে সেই তেলটি মাথার ত্বকে এবং পুরো চুলে লাগিয়ে নিন।
এরপর মাথায় শাওয়ার ক্যাপ লাগিয়ে নিন যাতে তেল গড়িয়ে যেতে না পারে।
এরপর ৩০ মিনিট বাদে যে কোনো মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।

এই তেল ব্যবহারের ফলে মাথায় রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি ঘটবে যা চুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে।

আপনি চাইলে এই তেলটি তৈরি করে একমাস মতো সংরক্ষণ করতে পারেন।
সপ্তাহে ১ থেকে ২ দিন এটি ব্যবহার করুন।

এছাড়াও জবা ফুলের পাতা পেস্ট করে তারমধ্যে টক দই মিশিয়ে মাস্ক বানিয়েও মাথায় লাগাতে পারেন।

এই মাস্কটি মাথায় এক ঘণ্টা রেখে তারপর উষ্ণ গরম জল দিয়ে কোনো হালকা শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুলটা ধুয়ে নিতে হবে।

এরপর চুল মসৃণ এবং শক্তিশালী হয়ে উঠবে। এভাবে একমাস করার পরেই চুলের পরিবর্তনটা লক্ষ্য করতে পারবেন।

এছাড়া জবা ফুলের রসের সাথে কখনো কখনো কারি পাতা কিংবা আদা কিংবা পেঁয়াজেরর রস মিশিয়ে লাগাতে পারেন। এগুলি ও চুলের দ্রুত বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

১০) চুল পড়া কমাতে আমলকির ব্যবহার :

আমলকি চুলের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটাতে সহায়তা করে। এটি চুলের প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগায়। অতিরিক্ত পরিমাণে চুল পড়ার সমস্যা দেখা দিলে সে ক্ষেত্রে আমলা খুব প্রয়োজনীয় উপাদান। চুল পড়ার অন্যতম কারণ শরীরে ভিটামিন সি এর অভাব। আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকার কারণে এটি চুলের দ্রুত বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। আমলকি যুগ যুগ ধরে চুলের পরিচর্যায় ব্যবহার হয়ে আসছে। আমলকি, আমলকীর তেল কিংবা আমলকির রস চুল এবং ত্বকের জন্য একটি অত্যন্ত অপরিহার্য উপাদান। আমলকীর তেল মাথায় দিলে তা চুলের ফলিকল গুলিকে শক্তিশালী করে তোলে এবং ভেতর থেকে সেগুলির পুষ্টি জোগায়। এতে প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিড থাকায় এটি চুলের কন্ডিশনিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। এছাড়াও আমলকির ব্যবহারের ফলে চুলের প্রাকৃতিক রং অপরিহার্য থাকে। শুষ্ক স্ক্যাল্পের ক্ষেত্রেও চুলের অন্যতম ঔষধ হিসেবে আমলকিকে ধরা হয়। (৭)

কি কি উপাদান প্রয়োজন :

কাঁচা আমলকি – ১ টি
নারকেল তেল – পরিমান মত
কিভাবে ব্যবহার করবেন?

কাঁচা আমলকি থেকে বীজ গুলিকে ফেলে দিয়ে সূর্যের তাপে সেগুলি শুকিয়ে নেবেন।
এরপর নারকেল তেলে সেই শুকনো আমলকি টুকরো করে দিয়ে অল্প তাপে ১৫ মিনিট ধরে তেলটা উষ্ণ গরম করে নেবেন।

এরপর তেলটি ঠান্ডা করে শ্যাম্পু করার এক ঘন্টা আগে মাথায় লাগাবেন।

এছাড়াও কাঁচা আমলকির রস ও নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে মাথায় লাগাতে পারবেন।
এরপর যেকোনো হালকা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নেবেন।

এছাড়াও আমলকির গুঁড়ো পাওয়া যায়। সেটি শিকাকাই পাউডারের সাথে মিশিয়ে টক দই দিয়ে পেস্ট তৈরি করে মাথায় লাগাতে পারেন। সেটিও চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

১১) চুলের যত্নে হেনার ভূমিকা :
চুলের খাদ্য হিসেবে মনে করা হয় হেনাকে। যে কারণে চুল পড়া রোধ করার পিছনে হেনার গুরুত্ব অপরিসীম। হেনা নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে। এছাড়াও হেনা চুলের সৌন্দর্যের অন্যতম উপাদান হিসেবে যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। এটি চুলে যেমন পুষ্টি যোগায় তেমনি চুলকে শক্তিশালী এবং সুন্দর করে তোলে। চুলের চিকিৎসার ক্ষেত্রে হেনা পাতা বহু যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এমনকি চুলের রং করার ক্ষেত্রে কিংবা কন্ডিশনিং-এর ক্ষেত্রেও হেনার ব্যবহার অপরিহার্য। হেনার পাতাও পাওয়া যায় আবার বাজারে হেনার গুঁড়োর প্যাকেট পাওয়া যায়। যা সহজেই চুলে লাগানো যায়। (৮)

কি কি উপাদান প্রয়োজন?

হেনা পাউডার – ২ চামচ
চায়ের লিকার – পরিমান মত
লেবুর রস – কয়েক ফোঁটা
ডিম – ১ টি
টকদই – ২ চামচ
কিভাবে ব্যবহার করবেন?

হেনা পাতার গুড়ো প্যাকেট করে কিনে এনে লিকার চায়ে আগের দিন রাতে পরিমাণমতো হেনা নিয়ে ঘন করে চুলের মাপ অনুযায়ী ভিজিয়ে রাখবেন।

সারারাত হেনাটাকে ভিজিয়ে পরদিন সকালে তার মধ্যে টক দই, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ও প্রয়োজনে একটা ডিম মিশিয়ে মিশ্রণটি মাথায় লাগিয়ে নেবেন।

সম্পূর্ণ মিশ্রণটি ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা মাথায় লাগিয়ে রাখবেন।
তারপরে আপনি যে শ্যাম্পু ব্যবহার করেন সেই শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নেবেন।

খুব ভালো হয় যদি ওই দিন শ্যাম্পু না করে পরের দিন শ্যাম্পু করা যায় অথবা ঐদিন শ্যাম্পু করে নিতে পারেন।
মাসে দু দিন, ১৫ দিন অন্তর এই প্রক্রিয়াটি করলে চুল উপযুক্ত কন্ডিশনিং পাবে।
১২) নারকেল তেল দিয়ে সহজেই চুল পড়া কমান :

সুন্দর ও স্বাস্থোজ্জ্বল চুল তৈরি করার অন্যতম উপাদান হলো নারকেল তেল। কেন না যা কিছু মাথায় লাগান না কেন তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারকেল তেলের সহায়তাতেই মাথায় লাগাতে হয়। নারকেল তেল সহজেই মাথার ত্বকে মিলিয়ে যায় এবং স্ক্যাল্পের গভীরে প্রবেশ করে তা চুলের পুষ্টিকে ত্বরান্বিত করে। দৈনন্দিন চুলের স্টাইলিং কিংবা বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী ব্যবহার করার ফলে চুল নির্জীব হয়ে উঠলে নারকেল তেল চুলের সেই হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনে। নারকেল তেলে উপস্থিত পুষ্টি উপাদানগুলি চুলকে ঘন এবং মসৃণ করে তোলে। চুল মসৃণ হলে তা ভাঙ্গে কম এবং চুল পড়াও কমতে থাকে। নারকেল তেলের মধ্যে থাকা বিভিন্ন উপাদান গুলি চুলকে শক্তিশালী, পুষ্টিকর করে এবং অকালপক্কতার হাত থেকে সুরক্ষিত রাখে। এর পাশাপাশি এর সুন্দর গন্ধ মানুষের মনে এক সুন্দর আবহ সৃষ্টি করে। (৯)

কি কি উপাদান প্রয়োজন?

নারকেল তেল : কয়েক চামচ
কিভাবে ব্যবহার করবেন?

নারকেল তেল সরাসরি মাথার স্ক্যাল্পে ব্যবহার করা যায়।
তেলটি ব্যবহার করার আগে একটু উষ্ণ গরম করে নিলে তা আরো ভালো হয়।
উষ্ণ গরম নারকেল তেল নিয়ে মাথায় হাতের আঙ্গুল দিয়ে আস্তে আস্তে ১৫ মিনিট ধরে মাসাজ করতে হবে।

তারপর তা কিছু সময়ের জন্য রেখে দিতে হবে।
এরপর হালকা কোনও শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে নিতে হবে।
সপ্তাহে কমপক্ষে দুইবার এটি করতে পারেন। এর ফলে আপনার চুল আরও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়ে উঠবে।

১৩) চুলের যত্নে অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী :

চুল ও ত্বকের পরিচর্যায় অন্যতম একটি উপাদান হলো অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী। এটি সরাসরি যেমন ত্বকে লাগানো যায়, তেমনি এটি খাওয়াও যায়। অ্যালোভেরা শরীরের বহু রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। মূলত চুলে এর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। অ্যালোভেরা ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি চুলে যথেষ্ট পুষ্টি জোগায়। এছাড়া এটি চুলকে আর্দ্র এবং মসৃন রাখে। এটি অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যযুক্ত। অ্যালোভেরা গাছের কাঁচা জেল চুলের পরিচর্যায় ব্যবহার করা হয়। অথবা দোকানের প্যাকেটজাত অ্যালোভেরা জেলও ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি মাথার শুষ্ক ত্বকে লাগালে তৈলাক্ত চুলের সমস্যা, খুশকি, চুলের শুষ্কতা রোধ করা যায়।

কি কি উপাদান প্রয়োজন?

অ্যালোভেরা জেল – ২ চামচ
কিভাবে ব্যবহার করবেন?

অ্যালোভেরা গাছের থেকে পাওয়া সাদা রংয়ের অ্যালোভেরা জেল সরাসরি স্ক্যাল্পে এবং চুলে লাগাতে পারেন কিংবা দোকানে পাওয়া প্যাকেটজাত অ্যালোভেরা জেলও সরাসরি চুলে লাগাতে পারেন।

কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি গাছ থেকে তুলে অ্যালোভেরা জেল লাগালে অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেটি একবার পরখ করে দেখে নেবেন।

বাজার চলতি প্যাকেটজাত আলোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন।
এটি মাথার ত্বকে এবং চুলের গোড়া থেকে ডগা অবধি লাগিয়ে ১ ঘন্টা মত রেখে দেবেন।
তারপর কুসুম গরম জলে চুলটা ধুয়ে নেবেন।
তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারবেন চুলের পার্থক্যটা।
সপ্তাহে ১ থেকে ২ দিন এটি করতে পারেন।

১৪) লেবুর রস দিয়ে চুলের যত্ন :

চুল পড়া রোধ করার একটি অন্যতম উপাদান হলো পাতিলেবু। এটি চুলে ব্যবহার করার ফলে চুল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়ে ওঠে। মূলতঃ ভিটামিন সির অভাবে চুল পড়া লক্ষ্য করা যায়। লেবু ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি চুলের পতন রোধ করে। এছাড়াও, চুলের খুশকি দূর করতে এর জুড়ি মেলা ভার। এর পাশাপাশি মাথার ত্বকে কোন রকম সমস্যা দেখা দিলে লেবুর রস সেটি দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। লেবুর রস সরাসরি কিংবা প্যাকের মত তৈরি করে চুলে ব্যবহার করতে পারেন। এটি চুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে। এছাড়াও, লেবু সাইট্রিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হওয়ায় চুলকে সুস্থ রাখে এবং চুলের অকালপক্কতা দূর করে। এছাড়াও অ্যান্টি ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য যুক্ত হওয়ায় যেকোন ধরনের ব্রণ ও ফুসকুড়ি এগুলি থেকে মাথার ত্বককে রক্ষা করে।

কি কি উপাদান প্রয়োজন?

পাতিলেবু – হাফ
ডিম- ১ টি

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

একটি অর্ধেক পাতিলেবু নেবেন।
সেটির রস সম্পূর্ণ বের করে মাথার ত্বকে ৫ মিনিট ধরে ম্যাসাজ করে, ১০ মিনিটের জন্য রেখে দেবেন।
তারপর যেকোন সালফেট মুক্ত শ্যাম্পু দিয়ে মাথার চুলটা ধুয়ে নেবেন।

সপ্তাহে একদিন করে এই প্রক্রিয়াটি করবেন। এতে চুলে তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা দূর হবে এবং চুলের বৃদ্ধি ঘটবে।
এছাড়াও লেবু, হেনা পাউডার, ডিম এর সাথে উষ্ণ গরম জলে মিশিয়ে মাস্ক হিসেবেও এক ঘন্টার জন্য মাথায় লাগিয়ে রাখতে পারেন। এটি ও চুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে।
১৫) টক দই :

স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের অন্যতম উপাদান হিসেবে পরিচিত টকদই। এটিতে থাকা উপাদানগুলি চুলকে মসৃণ করে তুলতে সহায়তা করে। এছাড়াও টকদইতে থাকা আন্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদানগুলি মাথার ত্বককে ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও এটি চুলের ঘনত্ব বাড়াতে সহায়তা করে। বাইরের দূষণ, স্ট্রেস সবকিছুর ফলে আমাদের মাথার চুল নষ্ট হয়ে যায়। টকদই এর ব্যবহারে চুলে আলাদা ঘনত্ব আসে এবং চুল দই থেকে প্রয়োজনীয় উপাদান গুলি সংগ্রহ করে। এর মধ্যে কিছু কন্ডিশনিং উপাদান আছে যা চুলকে সুস্থ এবং স্বাস্থ্যজ্জ্বল করে তোলে। (১০)

কি কি উপাদান প্রয়োজন?

টকদই – পরিমানমত
পাকা কলা – ১ টি
অলিভ অয়েল – ২ চামচ
মধু – ১ চামচ
কিভাবে ব্যবহার করবেন?

টক দই সরাসরি মাথার ত্বকে এবং চুলে লাগাতে পারেন। এছাড়াও প্যাক বানিয়েও লাগাতে পারেন।
প্যাক হিসাবে পাকা কলা, অলিভ অয়েল, মধু এবং টক দই মিশিয়ে মিশ্রণটি মাথার ত্বকে এবং সম্পূর্ণ চুলে ৪০ মিনিটের জন্য লাগিয়ে রাখুন।

তারপর যেকোন হালকা শ্যাম্পু দিয়ে মাথাটা ধুয়ে নিন।
এই প্যাকটি ব্যবহার করার ফলে চুলে আলাদা একটি ঘনত্ব এবং উজ্জ্বলতা আসবে।
সপ্তাহে একদিন এই প্যাকটি ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। তবে এক মাসের মধ্যেই চুলের মধ্যেকার পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন।

১৬) চুলের যত্নে কারি পাতার প্রয়োজনীয়তা :

চুলের বৃদ্ধিতে কিংবা নতুন চুল গজাতে অন্যতম একটি উপাদান হলো কারি পাতা। এটি সহজেই বাজারে পাওয়া যায়। এর মধ্যে থাকা উপাদান গুলি চুলের দ্রুত বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং চুলের প্রাকৃতিক রং ধরে রাখতে সাহায্য করে। চুলে ব্যবহার করার পাশাপাশি খাদ্য তালিকায় রাখলেও তা চুলের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। কেননা কারি পাতা বিটা ক্যারোটিন এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ হওয়ায় তা নতুন চুল গজানোয় সহায়তা করে। এছাড়াও এরমধ্যে অ্যামিনো অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা চুলের ফলিকল গুলিকে আর্দ্রতা দান করে এবং শক্তিশালী করে তোলে। এছাড়াও এটি চুল থেকে খুশকি দূর করে। এছাড়াও চুলের অকালপক্কতা দূর করে চুলের প্রাকৃতিক রং বজায় রাখতে সহায়তা করে। (১১)

কি কি উপাদান প্রয়োজন?

কারিপাতা – ১০-১২ টি
নারকেল তেল – পরিমানমত
কিভাবে ব্যবহার করবেন?

দশ বারোটা কারি পাতা নিয়ে বিশুদ্ধ নারকেল তেলে সেটি ফুঁটিয়ে নেবেন।
যতক্ষণ না নারকেল তেলের রং হালকা সবুজ হচ্ছে ততক্ষণ তেলের মধ্যে পাতাগুলি ফুটাবেন।
তারপর একটি কাঁচের শিশিতে ভরে সেটি রেখে দেবেন যতক্ষণ না পর্যন্ত ঠান্ডা হবে।
এরপর মাথার ত্বকে এবং চুলে লাগিয়ে ১ ঘন্টা রেখে দেবেন।
এক ঘন্টা পর যেকোন হালকা শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে নেবেন।
সপ্তাহে দুই দিন এটি ব্যবহার করলেই ১৫ দিন বাদেই পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন।
এটি চুলের দ্রুত বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
এছাড়াও কারি পাতা বেটে তা টক দইয়ের সাথে মিশিয়ে মাথার স্ক্যাল্পে মেসেজ করে তা কুড়ি পঁচিশ মিনিট এর জন্য রেখে দিন।
তারপর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে নিতে পারেন। এটি চুলকে আরো উজ্জ্বল এবং ঘন করে তুলবে।
১৭) ধনেপাতা :

অন্যান্য উপাদান গুলি চুলের পতন রোধের ক্ষেত্রে অত্যন্ত পরিচিত হলেও এই তালিকার অপর একটি উপাদান হলো ধনেপাতা। চুলে ধনে পাতার রস লাগালে তা চুলের বৃদ্ধিতে এবং চুল পড়া রোধ করতে সহায়তা করে। এটি একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা সহজেই চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং চুলকে ঘন লম্বা এবং শক্তিশালী করে তোলে।

কি কি উপাদান প্রয়োজন?

ধনেপাতা – কয়েকটা
কিভাবে ব্যবহার করবেন?

কিছু পরিমাণ ধনেপাতা নিয়ে অল্প জল দিয়ে মিক্সার এ একটি পেস্ট তৈরি করুন।
এই পেস্টটি মাথার স্ক্যাল্পে এবং চুলে ভালো করে লাগিয়ে রাখুন।
এক ঘণ্টা লাগিয়ে রেখে যে কোন হালকা শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে নিন।
এই প্যাকটি সপ্তাহে দুবার ব্যবহার করতে পারেন।
তিন সপ্তাহ ব্যবহার করার পরেই চুলে এর প্রভাব লক্ষ্য করতে পারবেন।
এটি চুলকে ঘন এবং আকর্ষণীয় করে তুলতে সহায়তা করবে এবং চুলের প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং পুষ্টি জুগিয়ে তা আরো সুন্দর ও দীপ্তিময় করে তুলবে।
১৮) শিকাকাই :


শিকাকাই চুলের পতন রোধ করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি চুলে শ্যাম্পুর পরিবর্তে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি চুল থেকে প্রাকৃতিক তেল না সরিয়েই চুলকে পরিষ্কার এবং পরিচ্ছন্ন রাখে। দক্ষিন ভারতের মানুষেরা শিকাকাই প্রচুর ব্যবহার করে থাকেন। শিকাকাই ফলকে ভেঙ্গে গুড়ো করে সেটি চুলে ব্যবহার করা হয়। যদিও বর্তমানে বাজারে শিকাকাই পাউডার এর প্যাকেট পাওয়া যায়। সেগুলি ব্যবহার করে চুলের দ্রুত বৃদ্ধি এবং চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখা যায়।

কি কি উপাদান প্রয়োজন?

আমলা পাউডার – ১ চামচ
রিঠা পাউডার – ১ চামচ
শিকাকাই পাউডার – ১ চামচ
কিভাবে ব্যবহার করবেন?

আমলা, রিঠা, শিকাকাই পাউডার একসাথে মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে মাথায় লাগাতে পারেন।
৩০ মিনিট রেখে যেকোনো হালকা শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে নেবেন।
যদি ঐদিন শ্যাম্পু না করে পরের দিন শ্যাম্পু করেন সেক্ষেত্রে তা আরো বেশি কার্যকর হবে।
এছাড়াও তেল দিয়ে শিকাকাই পাউডারের গুঁড়ো মিশিয়ে মাথায় লাগিয়ে রাখতে পারেন। সেটিও চুলের ক্ষেত্রে ভালো হবে।
শিকাকাই মূলতঃ শ্যাম্পু হিসেবে ব্যবহার হয়।
তাই রাতে কিছু পরিমাণ জলে শিকাকাই ভিজিয়ে পরদিন সকালে তা দিয়ে যদি মাথা ধুয়ে নেন তবে তা চুলের জন্য ভালো হবে।
সপ্তাহে দুবার শিকাকাই শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে নিতে পারেন।
১৯) মধু, অলিভ অয়েল, দারচিনি :
চুলের ভাঙ্গন রোধ করতে মধুর ভূমিকা অপরিহার্য এবং চুলে পুষ্টি জোগাতে তাকে উজ্জ্বল করে তুলতে অলিভ অয়েল এবং দারচিনি ব্যবহার করা হয়। এই উপাদান গুলির মধ্যে থাকা প্রোটিন চুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে এবং চুলকে আরো মসৃণ করে তোলে।

কি কি উপাদান প্রয়োজন?

মধু -১ চামচ
অলিভ অয়েল – পরিমানমত
দারচিনি গুঁড়ো – হাফ চামচ
কিভাবে ব্যবহার করবেন?

অলিভ অয়েলকে হালকা গরম করে নিন।
তার মধ্যে পরিমাণমতো মধু এবং দারচিনির গুঁড়ো নিয়ে প্যাক বানিয়ে মাথার ত্বকে এবং চুলে লাগিয়ে রাখুন।
কুড়ি মিনিট লাগিয়ে রাখার পর যেকোন হালকা শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে নিন।
এই প্যাকটি ব্যবহার করার ফলে চুল আরও মসৃণ এবং শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং চুল ভাঙবে কম।
চুলের ভাঙ্গন রোধ করা গেলে এর দ্রুত বৃদ্ধি সম্ভব হবে।
২০) চুল পড়া কমাতে আলুর ব্যবহার :
চুলের ভাঙন রোধ করে চুলে দ্রুত বৃদ্ধি ঘটাতে অন্যতম উপাদান আলু। এটি চুলকে মসৃন ও উজ্জ্বল করে তোলে।

কি কি উপাদান প্রয়োজন?

আলুর রস -৩ টেবিল চামচ
নারকেল তেল – সমপরিমান
কিভাবে ব্যবহার করবেন?

আলু মিক্সিতে বেঁটে নিয়ে তার থেকে রস বের করেরে নিন।
এবার তা উষ্ণ গরম নারকেল তেলে মিশিয়ে ২০ মিনিট মাথায় লাগিয়ে রাখুন।
তারপর হালকা কোনো শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে নিন।
চুল পড়া বন্ধ করার অন্যান্য উপায়গুলি হল :
চুল পড়া বন্ধ করার জন্য আমাদের বেশ কিছু উপায় রয়েছে। সেগুলি হল :

১) চুল খুব টাইট করে বাঁধবেন না।

২) চুল মোছার সময় জোরে জোরে ঘষবেন না।

৩) ভেজা চুল আঁচড়াবেন না।

৪) চুলকে আকর্ষনীয় করে তোলার জন্য কার্ল করা কিংবা হিট দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।এগুলি চুলের আরো ক্ষতি করে।

৫) সে সমস্ত ওষুধ খাওয়ার ফলে চুল পড়ার সমস্যা দেখা দিচ্ছে প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তা বন্ধ করুন।

৬) গরমকালে বাইরে বের হলে স্কার্ফ ব্যবহার করুনন, এটি ব্যবহারের ফলে সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মির হাত থেকে চুলকে রক্ষা করা যাবে।

৭) ধুমপান বন্ধ করুন।

৮) আপনি যদি কেমোথেরাপির আওতায় থাকেন তবে সেক্ষেত্রে ডাক্তারকে চুল পড়া বন্ধ করার উপায় জিজ্ঞাসা করুন।

চুল পড়া রোধে খাদ্য তালিকায় কি কি রাখবেন – Diet for Hair Fall in Bengali
বর্তমানে অন্যান্য অসুস্থতার মধ্যেও চুল পড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই। যে কারণে চুল পড়ার জন্য কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করলেও নজর রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়। কেননা বেশ কিছু খাদ্য উপাদান আছে যেগুলি আমাদের চুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে। আবার বেশ কিছু খাদ্য উপাদান আছে যেগুলি চুলের বৃদ্ধিকে রুখে দেয়। এক নজরে দেখে নিন কী খাবেন চুলের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য এবং কি খেলে চুল পড়া তাড়াতাড়ি বন্ধ হবে :

১) খাদ্যতালিকায় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন ডিম মাছ মাংস এগুলি রাখবেন।

২) এছাড়াও আমলকি, স্পিনাচ, মিষ্টি আলু, অ্যাভোকাডো, বাদাম, স্যালমন মাছ, ইত্যাদি চুল পড়া রোধ করে।

৩) মটরশুটি, সোয়াবিন, জাতীয় খাদ্যগুলি খাদ্য তালিকায় রাখবেন। এটি শরীরের ভেতর থেকে মাথার ত্বকে পুষ্টি জোগাবে এবং মাথায় রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

৪) এছাড়াও অতিরিক্ত ভাজাভুজি, ফাস্ট ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এড়িয়ে চলবেন। এটি চুলের বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।

৫) সবকিছুর সাথে দিনে ৪ থেকে ৫ লিটার জল খেতে হবে যা শরীরকে ভেতর থেকে সুস্থ রাখবে।

চুল পড়া বন্ধ করার আরো কয়েকটি উপায়

বর্তমানে চুল পড়ার অন্যতম কারণ হল অত্যধিক পরিবেশ দূষণ, দৈনন্দিন আবহাওয়ার পরিবর্তন, ধুলো-ময়লা, কাজের চাপ, মানসিক চিন্তা, দৈহিক সমস্যা, রোগ ভোগ প্রভৃতির কারণে চুল পড়া বৃদ্ধি পায়। তবে আরো কয়েকটি বিষয় আছে যেগুলি আমাদের মাথায় রাখতে হবে চুলকে সুস্থ এবং স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ভাবে বড় করার জন্য।

১) চুলে রং না করা :
চুলকে আরো বেশি সুন্দর এবং আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য আমাদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন রঙে রঙিন করে তুলতে চাই নিজের চুল কিংবা একঘেয়ে কালো রং দেখতে দেখতে সেখানে নতুন ভাবে সাজাতে ইচ্ছা করে। যার ফলে কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট-এর মাধ্যমে আমরা চুলের রঙ তো করেই ফেলি কিন্তু এটি ভবিষ্যতে চুলের উপর কি প্রভাব ফেলতে পারে তা আমরা ভেবে দেখিনা। যার ফলস্বরূপ কিছুদিন যেতে না যেতেই চুল রং-এর মোহ কেটে যায় এবং চুল ওঠা শুরু হয়ে যায়। তাই চুলে কোন রকম কেমিকেল জাতীয় রং না করে প্রাকৃতিক ভাবে চুলকে রাখলে তা দেখতে সুন্দর লাগবে এবং স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। খুব যদি ইচ্ছা হয় তবে প্রাকৃতিক উপায়ে অর্থাৎ হেনা কিংবা বিটের রস এই সমস্ত জিনিস ব্যবহার করে চুলের রং কে সাময়িকভাবে পরিবর্তন করা যেতে পারে।

২) ধূমপান নিয়ন্ত্রণ :
অতিরিক্ত ধূমপান করার ফলে তা যে কেবল মানব শরীরে প্রভাব ফেলে তা নয়, চুলের ওপরেও প্রভাব ফেলে। যার ফলে অত্যধিক চুল পড়া শুরু হয় এবং আমরা বুঝে ওঠার আগেই হয়তো আমাদের প্রিয় চুল গুলি ডাস্টবিনে জায়গা নেয়। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি বেশি দেখা যায়। যে কারণে ধূমপান একেবারে বন্ধ করে দিতে হবে। তবেই শরীর সুস্থ রাখবে। ধূমপান লিভারে প্রভাব বিস্তার করে এবং তার থেকেই মাথার চুল পড়তে শুরু করে।

৩) পর্যাপ্ত জলপান :
আমরা নিজেদের অজান্তেই হয়তো মাঝেসাজে কিছু ভুল করে ফেলি। কিন্তু পরে তার কারণ খুঁজে পাই না। তেমনি হয়তো সঠিক পরিমাণ জল খাই না বলেই চুল পড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। কেননা দৈনিক ৪ থেকে ৫ লিটার জল মানব শরীরে প্রয়োজন। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করার ফলে শরীর থেকে টক্সিন বেরিয়ে যায় এবং শরীর দূষণমুক্ত থাকে। কিন্তু জলপান সঠিক পরিমাণে না হলে টক্সিন গুলো শরীরের ভিতর জমা থাকে এবং তা আমাদের শরীরের এবং মাথার ত্বকে লোমকূপ গুলিকে বন্ধ করে দেয়। যার ফলে ত্বক নিঃশ্বাস নিতে পারে না এবং মাথায় রক্ত সঞ্চালন কমে যায়। তার ফলে চুল পড়া বৃদ্ধি পায়।

৪) যোগ বা ব্যায়াম :
শরীরকে বাহ্যিক এবং অন্তর্নিহিতভাবে সুস্থ রাখতে দৈনিক ৩০ মিনিট করে যোগা কিংবা ব্যায়াম করতে হবে। যার ফলে শরীরে পেশিতে টান পড়বে এবং রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে। মস্তিষ্কে সঠিক রক্ত সঞ্চালন হলেই তা চুলের দ্রুত বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

৫) সঠিক পরিমাণ ঘুম :
দৈনিক ৮ ঘন্টা ঘুম একটি সুস্থ মানুষের প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে অত্যধিক কাজের চাপে কিংবা চিন্তার কারণে ঘুম যদি কম হয় তাহলে চোখের তলায় কালি পড়বে তেমনই মাথায় তালু ফাঁকা হতে থাকবে এবং চুল গুলি ডাস্টবিনে জায়গা নেবে। তাই চুলের সঠিক যত্নের জন্য দিনে অন্তত আট ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন।

৬) স্ট্রেস নিবারণ :
যে কোন শারীরিক কিংবা মানসিক অসুস্থতার মূল উৎস হল স্ট্রেস কিংবা চিন্তা। অত্যধিক চিন্তার ফলে মানব শরীরে বহু রোগ দেখা যায়। এবং অত্যধিক স্ট্রেস এর কারণেই চুল পড়ার সমস্যা বাড়ছে বলে গবেষণায় উঠে আসছে। তাই নিজেকে স্ট্রেস মুক্ত রাখতে হবে এবং স্ট্রেস মুক্ত রাখার জন্য দৈনিক যোগা করতে হবে।

৭) সঠিক শ্যাম্পুর ব্যবহার :
সবার প্রথম নিজের চুলের গঠন এবং বৈশিষ্ট্য গুলি নিজেকে বুঝতে হবে। নিজের প্রিয় অভিনেতা কিংবা অভিনেত্রী কোনও শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন মানে এই নয় সেটাই আমাকে ব্যবহার করতে হবে। কেননা প্রত্যেক মানুষের চুলের ধরন আলাদা। সে ক্ষেত্রে নিজের চুলের ধরন অনুযায়ী শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে নিজে বুঝতে না পারলে ডাক্তারের সহায়তা নিতে হবে এবং চুলকে সঠিকভাবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে তোলার জন্য সঠিক শ্যাম্পু নির্ধারণ করতে হবে। সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিন দিন শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। কেননা চুলের গোড়া যত পরিষ্কার থাকবে চুল পড়া তত কম হবে।

৮) খুশকির সমস্যা :
গ্রীষ্ম হোক বা শীত, সব ঋতুতেই কমবেশি খুশকির সমস্যা প্রত্যেক মানুষেরই থাকে। বয়স্ক থেকে মধ্য বয়সী কিংবা শিশু প্রত্যেকের মাথাতেই খুশকির সমস্যা থাকে। অত্যধিক খুশকির সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। অন্যথায় ঘরোয়া উপায়ে খুশকি দূরীকরণ করতে হবে। কেননা চুলে অতিরিক্ত খুশকি দেখা দিলে চুল সঠিক ভাবে বৃদ্ধি পায় না এবং চুল পড়া শুরু হয়।

৯) মাথায় তেল দেওয়া :
বর্তমানে গতির জীবনে মানুষের হাতে সময় খুব কম। সকালে উঠে অফিস যাওয়ার আগে চট করে শ্যাম্পু করে তো চলে যাওয়া যায় কিন্তু আগেকার দিনের মতন মাথায় তেল দিয়ে বিনুনি করা চুল খুব কমই দেখা যায়। এই বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে আমাদের অনেককেই পস্তাতে হচ্ছে। কেননা চুলের জন্য তেল অপরিহার্য একটি উপাদান। সে জন্য সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিন দিন মাথায় তেল দিতে হবে। তারপর এক ঘন্টা মত তা রেখে শ্যাম্পু করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে নারকেল তেল, অলিভ অয়েল, ক্যাস্টর অয়েল যে কোন তেল ব্যবহার করা যেতে পারে।

সুতরাং দৈনন্দিন জীবনে কিভাবে আমরা চুলের যত্ন নিতে পারি সেই বিষয়টি সম্পর্কে একটি সম্যক ধারণা আমাদের তো হলো। এবার কাজটা আমাদের নিজেদের। নিজের সুবিধা মত চুলের পরিচর্যায় মন দিতে হবে এবং চুলকে আরো স্বাস্থ্যজ্জ্বল এবং সুন্দর করে তুলতে হবে। কেননা সুন্দর চুল নারী পুরুষ সকলেরই সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। তাই জন্য সুন্দর চুলের অধিকারিণী সবাই হতে চায়। তাই এবার চুলকে সুস্থ করে তুলতে হবে এবং নিজেকে সুন্দর করে তুলতে হবে। এবং চুল পড়া রোধের জন্য উপরিউক্ত ঘরোয়া উপায় গুলি অবলম্বন করতে হবে।

 

একুশে সংবাদ/বর্না

Link copied!