দুর্বল ব্যাংকগুলোর জন্য টাকা ছাপানো বন্ধের ঘোষণা থাকলেও বাস্তবে তা কার্যকর করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। বরং এখন পর্যন্ত ১২টি ব্যাংককে প্রায় ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, গ্রাহকের আমানত ফেরত দিতে ১০টি ব্যাংককে ডিমান্ড লোন হিসেবে দেওয়া হয়েছে ৩৩ হাজার কোটির বেশি। এছাড়া ৯টি ব্যাংকের চলতি হিসাবের ঘাটতি পূরণে আরও ১৯ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে, যা পরবর্তীতে ডিমান্ড লোনে রূপান্তরিত হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি অর্থ নিয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, যার ঋণের পরিমাণ ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এরপর রয়েছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), ন্যাশনাল ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। এ তালিকায় আরও রয়েছে—ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, এবি ব্যাংক, বিসিবিএল, আইসিবি, বেসিক ব্যাংক এবং পদ্মা ব্যাংক।
ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই অর্থসাহায্য সাময়িক স্থিতিশীলতা আনলেও দীর্ঘমেয়াদে সমস্যার সমাধান হয়নি।
এক্সিম ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম স্বপন বলেন, “আমাদের সাধারণ লেনদেন হয় ৫০ থেকে ১০০ কোটির মধ্যে। ৮-৮.৫ হাজার কোটি টাকার বিষয়টি খুব বড় কিছু নয়। তবে অতীতে অনিয়ম হয়েছিল, সে কারণে গভর্নরের সহযোগিতা প্রয়োজন ছিল। ভবিষ্যতে এভাবে আর অর্থ সহায়তা নেওয়ার ইচ্ছা নেই।”
এসআইবিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউজ্জামান বলেন, “রিটেইল গ্রাহকদের নিয়ে এখন তেমন কোনো সমস্যা নেই। তবে ব্যাংক পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে ছয় মাস থেকে এক বছর সময় লাগবে।”
এর আগেও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর একাধিকবার বলেছিলেন, টাকা ছাপিয়ে ব্যাংককে আর ঋণ দেওয়া হবে না। কিন্তু বাস্তবে সেই নীতিমালার বাস্তবায়ন হয়নি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের যুক্তি হলো, ক্ষুদ্র আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় এবং চলমান সঙ্কট সামাল দিতে এই ঋণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “আমরা এই ঋণ দিয়েছি যেন সাধারণ গ্রাহকরা চেকের বিপরীতে টাকা তুলতে পারেন। আমাদের লক্ষ্য—ব্যাংকগুলো যেন স্থিতিশীলতা ফিরে পায়।”
এর পাশাপাশি দুর্বল ব্যাংকগুলোর মধ্যে অন্তত ৬টি প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে তালিকাভুক্ত এক্সিম ব্যাংক এ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে অনিচ্ছা জানিয়েছে।
একুশে সংবাদ/চ.ট/এ.জে