জয়পুরহাট-২ (কালাই–ক্ষেতলাল–আক্কেলপুর) আসনে বিএনপির মনোনয়নকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও উত্তেজনার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। সোমবার বিকেলে পরিস্থিতি আরও নাটকীয় রূপ নেয়। সাবেক সচিব আব্দুল বারীকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করার পর বিরোধী পক্ষের তীব্র প্রতিক্রিয়া, মহাসড়কে টায়ার জ্বালানো ও সড়ক অবরোধের মতো ঘটনা উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে।
এই অস্থিতিশীলতার প্রতিবাদে একই স্থানে বিশাল পথসভা আয়োজন করে বিএনপির মূলধারার নেতাকর্মীরা, যা এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
মহাসড়কের কালাই বাসস্ট্যান্ড এলাকা একসময় জনসমুদ্রে পরিণত হয়। কালাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে হাজারের মতো নেতাকর্মী ও সমর্থক ঢলে পড়ে সমাবেশে। দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত সাবেক সচিব আব্দুল বারী গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় লাগাতার জনসংযোগ, উঠান বৈঠক, পথসভা ও লিফলেট বিতরণ করে স্থানীয় মানুষের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া তৈরি করেন। তার দ্বারে দ্বারে উপস্থিতি বিএনপির মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে।
তবে মনোনয়ন না পাওয়ায় সাবেক সাংসদ প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অবস্থান নেন। তার সমর্থকেরা—এমন অভিযোগে—রোববার বিকেলে কালাই বাসস্ট্যান্ড এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। আধাঘণ্টাব্যাপী ওই বিক্ষোভে মহাসড়কের দুই পাশে ভয়াবহ যানজট তৈরি হয় এবং পথচারী ও যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। স্থানীয়রা মনে করেন, এ ধরনের নৈরাজ্য বিএনপির দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না।
এই পরিস্থিতিতে সোমবারের পথসভা ছিল মূলত সেই অস্থিতিশীল কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ এবং দলীয় ঐক্য প্রদর্শনের দৃঢ় মঞ্চ। কালাই উপজেলা বিএনপি ও পৌর বিএনপির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত পথসভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মণ্ডল। সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থী আব্দুল বারী। তার উপস্থিতিকে ঘিরে এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়।
বারী সভায় বলেন, “মনোনয়ন না পেয়ে গোলাম মোস্তফা ভাড়াটে লোক দিয়ে এলাকায় শান্ত পরিস্থিতি নষ্ট করছেন। যারা এসব অশান্তি সৃষ্টি করছে, তারা বিএনপির মূলধারার কেউ নয়। বিএনপি সবসময় কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দেয়, এবং প্রকৃত কর্মীরা কখনোই দলের হাইকমান্ডের বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত নেয় না।” তিনি আরও জানান, “পথসভায় লোকজড়ো প্রমাণ করে যে, জয়পুরহাট-২ আসনের তৃণমূল বিএনপি সম্পূর্ণভাবে ঐক্যবদ্ধ।”
সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক এম.এ. ওহাব, আক্কেলপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামরুজ্জামান কমল, ক্ষেতলাল উপজেলা বিএনপির সভাপতি আঞ্জুমান, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আলী হাসান মুক্তা, জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সাবেক সভাপতি মুশফিকুর আলম বুলু, কালাই উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মওদুদ আলম ও রফিকুল ইসলাম চৌধুরী টুকু, কালাই পৌর বিএনপির আহ্বায়ক সাজ্জাদুর রহমান তালুকদার সোহেল, যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল আলিম সরকার, পৌর জিয়া পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ শাহজাহান আলীসহ আরও অনেকে।
বক্তারা অভিযোগ করেন, বিএনপির নাম ব্যবহার করে কিছু সুবিধাভোগী ব্যক্তি এলাকায় অস্থিরতা ছড়াতে চাইছেন, যা জনগণ এবং প্রকৃত নেতাকর্মীরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছেন। তারা বলেন, জয়পুরহাট-২ আসনে আগামী নির্বাচনে বিএনপির বিজয় নিশ্চিত করতে ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।
একুশে সংবাদ//এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

