ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে গত কয়েক দিন অবিরাম বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত চার দিনে টানা বৃষ্টিতে জমির পাকা ও আধপাকা রোপা আমন ধান পানিতে হেলে পড়েছে। এছাড়া শীতের আগাম সবজিখেতে পানি জমে গেছে। এতে কৃষকরা তাদের কষ্টার্জিত ধান ও শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।
তবে কৃষি বিভাগ বলছে, ধান গাছ হেলে পড়লেও তেমন ক্ষতি হবে না। রোদ উঠলে জমির পানি নিষ্কাশন করলে সবজির তেমন ক্ষতি হবে না।
স্থানীয় আবহাওয়া অফিস ও বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বুধবার থেকে শনিবার বিকাল পর্যন্ত ৪৬ মিলিমিটার মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঝড়ো বাতাসে অনেক জমির পাকা ও আধপাকা রোপা আমন ধান গাছ নুয়ে পড়েছে। এছাড়া জমিতে থাকা আগাম আলুসহ বিভিন্ন শাকসবজির ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আতঙ্কিত কৃষকরা জানান, গত কয়েক দিনের বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে অনেক স্থানে তাদের জমিতে থাকা পাকা ও আধপাকা রোপা আমন ধান গাছ মাটিতে হেলে পড়েছে। কোনো কোনো স্থানে ধানগাছ পানিতে ডুবে গেছে। এ অবস্থায় তারা ধানের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। ধানগুলো ঘরে তোলা নিয়ে তারা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। এছাড়া অতিবৃষ্টিতে শীতের আগাম সবজিখেতে পানি জমেছে। বৃষ্টি না থামলে এসব শাকসবজি পচে যাওয়া সম্ভাবনা রয়েছে। এসব ফসল বাঁচাতে কৃষকরা জমি থেকে পানি সরানোর চেষ্টা করছেন।
রাণীশংকৈল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ফসলি জমিতে পানি জমেছে রোপা আমন জমিতে ১৩০ হেক্টর জমিতে, আলু জমিতে ২০ হেক্টর এবং শাকসবজিসহ অন্যান্য জমিতে ২০ হেক্টরের বেশি জমিতে।
চলতি মৌসুমে উপজেলায় মোট ২১ হাজার ৬৫৫ হেক্টরে আমনের আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫০৮৫ হেক্টর জমির আধা কাঁচা ও পাকা ধান এখন মাঠে।
বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় পাকা ও আধপাকা রোপা আমন ধান গাছ নুয়ে পড়ায় কৃষি বিভাগ জমিতে থাকা পানি নিষ্কাশনের জন্য উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ দিয়ে মাঠপর্যায়ে থাকতে নির্দেশ দিয়েছে।
তবে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, আবহাওয়া ভালো হলে দুই তিন দিনের মধ্যেই জমির পানি সরে যাবে। এতে নুয়ে পড়া ধান গাছের তেমন ক্ষতি হবে না। ক্ষতি থেকে বাঁচতে তারা হেলে পড়া ধান গাছগুলো ঝুঁটি বেঁধে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
এদিকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত তিন-চার দিনের বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় অধিকাংশ জমিতে থাকা পাকা এবং আধপাকা ধানগাছ নুয়ে পড়েছে। এছাড়া শীতের আগাম শাকসবজির ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মরিচ, বেগুন, মুলার ক্ষেতে পানি জমে গেছে। কৃষকরা নিজ উদ্যোগে জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করছেন।
উপজেলার ভরনিয়া এলাকার কৃষক আবুল হোসেন বলেন, ‘সপ্তাহ দুয়েক পর ধান কেটে ঘরে তোলার কথা ছিল।কিন্তু অসময়ে বৈরী আবহাওয়ায় গত কয়েক দিনের হালকা -মাঝারি বৃষ্টি ও দমকা বাতাসে জমির আধাপাকা ধানগাছ নুইয়ে পড়েছে, ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আমন ধানের। আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে সূর্যের দেখা না পেলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।’
একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সবজি চাষি আফজাল হোসেন জানান, ফুলকপি ও বাধাকপির ক্ষেত এখন পুকুর হয়ে গেছে। এই আগাম সবজিই আমাদের ভরসা। এভাবে পানি জমে থাকলে সব পচে যাবে। ‘যারা আগাম আলু রোপণ করেছিলেন, তাদের আলুর খেতে পানি জমে আলু নষ্ট হওয়ার পথে। গত বছর আলু চাষ করে আমরা অনেক লোকসানে পড়েছি। এবারও অনেক কৃষক বেশি দামে সার সংগ্রহ করে এক সপ্তাহ পূর্বে আলু রোপণ করেছেন। কিন্তু আলুর খেতে এখন পানি জমে আছে। এ কারণে আলু বীজ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কাতিহার এলাকার কৃষক গোবিন্দ পাল বলেন, ‘অনেকেই পাঁচ ছয় ’দিন আগেও ধান কেটে শুকানোর জন্য মাঠে রেখেছিলেন। কিন্তু অসময়ের বৃষ্টিতে আমন খেতে কর্তিত ধান এখন পানিতে ভিজে নষ্ট হতে বসেছে।
রাণীশংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহিদুল ইসলাম জানান, ধানের জমির পানি নিষ্কাশনের জন্য সব উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের জরুরি পরামর্শ দিয়ে মাঠপর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। জমির পানিতে নুয়ে পড়া ধানের তেমন ক্ষতি হবে না। বিশেষ করে আলুর ক্ষেতের পানি দ্রুত সরিয়ে নিতে হবে, না হলে বীজ আলু পচে যাবে। সে জন্য কৃষকদের করণীয় সম্পর্কেও আমরা পরামর্শ দিচ্ছি।
একুশে সংবাদ/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

