ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের জয়দিয়া বাওড়ে মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে ডুবে যায় তিন শিশু। ওই ঘটনায় একজন মারা গেলেও অলৌকিকভাবে বেঁচে ফেরে দুইজন। তাদের একজন তুহিন মণ্ডল (১০)। সেই তুহিনই শোনাল সেই দিনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার গল্প। সে উপজেলার লক্ষিকুন্ড মণ্ডলপাড়ার মিন্টু মণ্ডলের ছেলে।
জানা গেছে, কোটচাঁদপুরের জয়দিয়া বাওড়টি ২০২২ সালে সরকার থেকে ৬ বছরের জন্য ইজারা নেন সন্তোষ হালদার। পরে তিনি বাওড়টি মাছ চাষের জন্য লিজ দেন বিজয় হালদার ও ষষ্ঠী হালদারের কাছে। এরপর থেকেই তারা বাওড়টি পরিচালনা করে আসছিলেন।
গত মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) তারা মাছের গায়ে উকুন মারার জন্য বাওড়ে উকুননাশক প্রয়োগ করেন। এতে বাওড়ের সব প্রজাতির রানী মাছসহ বিপুল পরিমাণ মাছ মারা যায়। সেই মাছ ধরতে যায় কোটচাঁদপুরের লক্ষিকুন্ড গ্রামের তিন শিশু—ইয়ামিন মণ্ডল, তুহিন মণ্ডল ও নয়ন মণ্ডল। একপর্যায়ে তারা গভীর পানিতে চলে গেলে ডুবে যায়। ওই ঘটনায় নয়ন মণ্ডলের মৃত্যু হয়, তবে বেঁচে ফেরে তুহিন ও ইয়ামিন। তুহিন লক্ষিকুন্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র।
ঘটনার পর তাঁর বর্তমান অবস্থা জানতে তুহিনের বাড়িতে গেলে সে শোনায় সেই দিনের ভয়াবহ স্মৃতিচারণ।
তুহিন বলে, “নয়ন প্রথমে বাওড়ে গিয়ে মাছ ধরে বাড়িতে রেখে আসে। পরে আমি জানতে পারি মাছের কথা, আমিও যাই। কিছুক্ষণ পর ইয়ামিনও আসে। আমরা বাওড়ের ধারে মাছ ধরছিলাম। হঠাৎ কেউ ডেকে বলে, সামনে অনেক মাছ আছে। আমরা তিনজনই সামনে যাই। তারপর থেকেই ডুবতে শুরু করি। প্রথমে নয়ন ডুবে যায়, আর তাকে আর দেখতে পাইনি। একটু দূরে দেখি ইয়ামিন কলাগাছ ধরে আছে। এরপর আমার আর কিছু মনে নেই।”
তুহিনের বাবা মিন্টু মণ্ডল বলেন, “শুনলাম আমার ছেলে বাওড়ে ডুবে গেছে। দৌড়ে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে কোটচাঁদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি। কিছুক্ষণ পর অবস্থা খারাপ হলে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। একদিন চিকিৎসার পর সে চোখ মেলে, কথা বলে। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসে।”
ঘটনার পরের দিন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা দীন ইসলাম বাওড়টি পরিদর্শন করে জানিয়েছিলেন, “উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন দেওয়ার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। এরপর কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কিন্তু ঘটনার তিন সপ্তাহ (২১ দিন) পার হলেও এখনো কোনো তদন্ত কমিটি গঠন হয়নি, নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা।
একুশে সংবাদ/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

