সুনামগঞ্জের মধ্যনগর ও জামালগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিয়মিত সময়সূচি মানছেন না। তারা সকাল বেলায় দেরিতে কর্মস্থলে যোগ দেন এবং বেলা আড়াইটার মধ্যেই বিদ্যালয় ত্যাগ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে এবং শিক্ষার মান ক্রমেই নিম্নমুখী হয়ে পড়ছে।
জানা গেছে, মধ্যনগর উপজেলায় মোট ৮৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। অনুমোদিত প্রধান শিক্ষক ৮৪ জন ও সহকারী শিক্ষক ৩৮৬ জন—মোট ৪৭০টি পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন ৩৬৮ জন শিক্ষক। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ৩৪টি এবং সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য ৬৮টি।
অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষকরা উপজেলা শিক্ষা বিভাগের প্রশাসন ও তদারকিকে অমান্য করে ইচ্ছেমতো বিদ্যালয়ে যান ও ফেরেন। প্রশাসনিক তদারকির অভাবে অনেক শিক্ষক দায়িত্বে অনিয়মকে অভ্যাসে পরিণত করেছেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসে একাধিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিও) পদ শূন্য থাকায় শিক্ষকরা এই সুযোগ নিচ্ছেন। স্থানীয় সচেতন মহল ও অভিভাবকরা বলছেন, “প্রাথমিক শিক্ষাকে শিক্ষকরা তামাশায় পরিণত করেছেন।”
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত পাঠদান চালিয়ে যাওয়ার নিয়ম থাকলেও অধিকাংশ বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা দুপুর আড়াইটার মধ্যেই ছুটি দিয়ে ফেলেন। এ নিয়ে অভিভাবক ও স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা জানান, “অনেক শিক্ষক বছরের অধিকাংশ সময় ছুটিতে থাকেন। ছুটি ও অনুপস্থিতির কারণে নিয়মিত পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।”
স্থানীয়ভাবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে দুর্বলতা বাড়ছে। অনেক শিক্ষার্থী প্রাথমিক স্তর শেষ না করেই ঝরে পড়ছে। অভিভাবকরা বলেন, “বিদ্যালয়ে পড়াশোনার মান আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে।”
মধ্যনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, “জনবল সংকটের কারণে বিদ্যালয়গুলো নিয়মিত তদারকি করা যাচ্ছে না। অন্তত দুইজন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা পদায়ন করা গেলে নিয়মবহির্ভূত বিদ্যালয়গুলো নজরদারিতে আনা সম্ভব হবে।”
জামালগঞ্জ উপজেলা থেকেও একই চিত্র পাওয়া গেছে। স্থানীয় সংবাদকর্মী বাদল কৃষ্ণ দাস জানান, উপজেলায় ১২৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান ও সহকারী শিক্ষক মিলে অনুমোদিত পদ ৬৮৪টি থাকলেও কর্মরত আছেন ৬১২ জন। তিনি বলেন, “অধিকাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে আসেন এবং বেলা আড়াইটার মধ্যেই বিদ্যালয় ত্যাগ করেন।”
দূরবর্তী ও দুর্গম হাওরাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোতে অনিয়ম আরও বেশি। বেহেলী ও ফেনারবাঁক ইউনিয়নের শিক্ষকরা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় বিদ্যালয়ে যান এবং কয়েক ঘণ্টা পরই ফিরে আসেন। বিকেল তিনটার পর এসব বিদ্যালয়ে গেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তালা ঝুলতে দেখা যায়।
জামালগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পীযুষ কান্তি মজুমদার বলেন, “গত মিটিংয়ে আমরা শিক্ষকদের সময়সূচি মেনে চলার জন্য কঠোরভাবে সতর্ক করেছি। তবুও যদি কোথাও অনিয়মের প্রমাণ মেলে, তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহন লাল দাস বলেন, “জামালগঞ্জে শিক্ষকদের সময়সূচি না মানার বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।”
অভিভাবক ও প্রবীণরা বলছেন, আগের শিক্ষা ব্যবস্থাই ভালো ছিল। “আগে শিক্ষকরা কর্মস্থলে আবাসিক ছিলেন, এখন তারা উপজেলা সদরে থেকে প্রতিদিন যাতায়াত করেন। ফলে শিক্ষায় আগের মতো আন্তরিকতা আর দেখা যায় না,” বলেন এক প্রবীণ অভিভাবক।
একুশে সংবাদ/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

