”আমার ভাইগ্নারে মারতাছিল মোবাইল চুরির কথা কইয়া, সে মোবাইল চুরি করে নাই, তাও মাফ চাইছে, হাতে-পায়ে ধরছে কিন্তু ছাড়ে নাই। আমি ছাড়াইতে গেছি, আমারেও মারছে, জামাকাপড় ছিঁড়া ফালাইছে, কেউ ভয়ে থামাইতে পারে নাই। কিছু না কইরাও আমরা এরকম মাইর খাইলাম, বেলচা দিয়ে পিটাইছে, কিল-ঘুষি দিছে, আমি বিচার চাই’, এভাবেই মারধরের বিবরণ দিচ্ছিলেন আখির আলী।
রবিবার রাত ৮টার দিকে ঢাকার ধামরাইয়ের গাংগুটিয়া ইউনিয়নের বারবাড়িয়া এলাকায় মোবাইল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে পূর্ব বিরোধের জেরে এক তরুণ ও তার মামাকে মারধর করেন গাংগুটিয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ইমান আলী ও তার ছেলে। ওই মারধরের ঘটনায় এলাকায় ছড়িয়েছে চাঞ্চল্য। ইউপি সদস্য ও তার ছেলের বিচার দাবি করেন ভুক্তভোগীরা।
মারধরের শিকাররা হলেন- ধামরাইয়ের গাংগুটিয়া ইউনিয়নের কৃষ্ণপুরা এলাকার আমান উল্লাহ (২২) ও তার মামা একই এলাকার আঁখির আলী (৩৯)। আঁখির আলী বারবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকার ”আখির মার্কেট” এর মালিক।
অভিযুক্তরা হলেন- গাংগুটিয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ইমান আলী (৫০) ও তার ছেলে ইসমাইল (২৪)। তারা কৃষ্ণপুরা এলাকার বাসিন্দা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীরা জানান, গত ৭-৮ দিন আগে রাতে ইউপি সদস্যের ভাড়া বাড়িতে রংয়ের কাজ করতে কথা বলতে যান আমান উল্লাহ। সেখানেই এক ভাড়াটিয়ার সঙ্গে কথার একপর্যায়ে তার বাড়িতে পেঁপে গাছ ও পেঁপে আছে বলে জানান। সেই ভাড়াটিয়া পেঁপে চাইলে তিনি বাড়িতে পেঁপে আনতে যান। এ সময় রাত হওয়ায় তিনি তার একটি বাটন ফোন দিয়ে দেন লাইট হিসেবে ব্যবহারের জন্য। তবে পেঁপে নিয়ে তার ফিরতে দেরি হলে ওই ভাড়াটিয়া তার মামাকে বিষয়টি জানান। এরইমধ্যে আমান পেঁপে ও ফোন নিয়ে ফিরে আসেন। তবে দেরি হওয়ায় ফোন চুরির অপবাদ দিয়ে তাকে আটকে চড়থাপ্পড় দেয় ওই ভাড়াটিয়া। এরপর বাড়িওয়ালা ইউপি সদস্য ও তার মামা সেখানে গেলে তাকে ওই ভাড়াটিয়ারা ছেড়ে দেয়।
তারা আরও জানান, রবিবার রাতে আমান উল্লাহ আখির মার্কেটের একটি দোকানে রংয়ের কাজ করছিলেন। একপর্যায়ে তিনি আগে তাকে চড়থাপ্পড় দেওয়া এক ভাড়াটিয়াকে মার্কেটে দেখতে পান। তাকে থামিয়ে তিনি একটি চড় দেন। এর জেরে ওই ভাড়াটিয়া তার বাড়িওয়ালা ইউপি সদস্যকে ডেকে আনেন। সেখানে এসে ইউপি সদস্য একপর্যায়ে আমান উল্লাহকে পাশে থাকা একটি বেলচা দিয়ে তাকে পেটাতে শুরু করেন। মারধরের জেরে তিনি হাতে হাতে-পায়ে ধরে মাফ চান। একপর্যায়ে মারধরে যোগ দেন ইউপি সদস্যের ছেলেও। প্রায় ১০-১৫ মিনিট ধরনের ধরে বেলচা দিয়ে পেটানোসহ তাকে কিল-ঘুষি, লাথি দিয়ে মারধর করেন তারা। ভাগ্নের মারধরের খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন মার্কেট মালিক নিজেও। তাকে উদ্ধার করতে গেলে ওই ইউপি সদস্য কিল-ঘুষিসহ মারধর করেন মার্কেট মালিককেও। এতে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম হয়। তার ভাগ্নের শরীরেও জখম হয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে। তারা স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
এ ঘটনার একাধিক ভিডিও ফুটেজ এই প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে। একটিতে আমান উল্লাহকে টেনে নিয়ে যেতে দেখা যায়। অপরটিতে আমানকে মাফ চাইতে দেখা যায়। এছাড়া ইমান আলীকে আঁখির আলীকে মারধর করতেও দেখা যায় ভিডিওটিতে।
ভুক্তভোগী আখির আলী বলেন, আমার ভাগ্নে আমান কাজের জন্য ইমান আলীর বাড়ি গেছিল। তখন ওই বাড়ির ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে কথা হয়। সে জানায় তার বাড়িতে পেঁপে গাছ আছে, পেঁপে আছে। তখন তারা পেঁপে চায়। আমান বাড়ি যাবে, তাই লাইটের জন্য ওদের একটা ফোন তাকে দেয়। পেঁপে নিয়ে ফিরতে দেরি হলে ওই ভাড়াটিয়ারা আমাকে বলে আমার ভাগ্নে ফোন নিয়ে গেছে। এরমধ্যেই ভাগ্নে ফোন, পেঁপে নিয়ে ওই বাড়ি ফিরে যায়। ফিরলে তারা আমার ভাগ্নেকে আটকে সেই সময় মারধর করে। তখন আমি সেখানে যাই। ইমান আলী আমার ভাগ্নেকে আমাকে দিয়ে দেয়। যারা মারছিল এরমধ্যে একজনকে (ইমান আলীর ভাড়াটিয়া) আজকে আমার মার্কেটে দেখে ভাগ্নে। তাকে একটা চড় দেয়। সেই ছেলে ইমান আলীকে জানায়। তখন ইমান আলী এসে তাকে মারধর করে। ভাগ্নে ভয়ে একটা ঘরে লুকায়, সেখান থেকে টেনে বের করে তাকে এলোপাতাড়ি পেটায় বেলচা দিয়ে। আর কিল-ঘুষিসহ মারধর করে। আমি থামাতে গেলে আমাকেও লাথি, কিল-ঘুষি দেয় ইমান আলী ও তার ছেলে ইসমাইল।
তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, প্রায় ১৫ দিন আগে ইমান আলী আমার কাছে মার্কেট চালাই তাই ৩৫ হাজার টাকা চাঁদা চায়। আমি না দেওয়ায় তারা ক্ষুব্ধ ছিল। আমি এই বিষয়টি বিএনপির নেতাকেও জানিয়েছিলাম। আজকে তারা আমাকে মারলো। আমি এর বিচার চাই। আমি থানায় অভিযোগ করবো, তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য ইমান আলী মারধরের বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আঁখির ভাগ্নে মোবাইল চুরি করেছিল। তাকে আটকানো হয়েছিল। আমি মাফ করে দিছি। আজকে আমার ভাড়াটিয়া বাজার করে ফেরার সময় তাকে ধরে চড় দিয়েছে। আমি বিচার করেছি। ধরে কয়টা দিতে গেছি, তখন আঁখি আসছে। তাই আরকি। বেলচা তো পরে নিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনায় কোনো অভিযোগ পাইনি। পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একুশে সংবাদ/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

