বাংলাদেশের গর্ব, এক সময়ের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস “সোনালী আঁশ” পাট—সেই পাট আজ বিলুপ্তির পথে। দেশের অর্থনীতি ও সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত এ আঁশের জৌলুস এখন অতীত। একসময় দেশের প্রতিটি অঞ্চলে পাটের ব্যাপক চাষাবাদ হতো। কিন্তু বর্তমানে নানা কারণে কৃষকরা পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। দিনে দিনে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় একদিকে উৎপাদন কমছে, অন্যদিকে বাজারে ন্যায্যমূল্য না থাকায় কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
এ অঞ্চলের কৃষকদের ভাষ্য, বর্তমানে এক বিঘা জমিতে পাট চাষে খরচ হয় প্রায় ১০–১২ হাজার টাকা। খরচ তুলনা করলে বাজারে বিক্রি করে সেই খরচ তোলা দায় হয়ে পড়ে। এছাড়া বাজারে চাহিদা কম থাকায় পাটচাষীদের পাট বিক্রিতে চরম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই সুযোগে পাট ব্যবসায়ীরা স্বল্প দামে তা কিনে মজুদ করছেন। এভাবেই প্রতিবছর পাটচাষীরা অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
উপজেলার ধাপেরহাট ইউনিয়নের কৃষক রোস্তম খাঁন ও রাজু মিয়া বলেন, “এক বিঘা জমিতে পাট চাষে যে খরচ হয়, সেটি বিক্রি করেও তুলা কঠিন। লাভ তো দূরের কথা, মূল টাকা তুলতেও অনেকটা কষ্ট হয়।”
এছাড়া আবহাওয়ার পরিবর্তন, মানসম্মত বীজের সংকট, সময়মতো বৃষ্টি না হওয়া এবং সঠিকভাবে রেটিং (পাট পঁচানো) না করার কারণে ফলন আগের তুলনায় কমে গেছে। শ্রমিক সংকট ও মজুরি বৃদ্ধিও কৃষকদের ব্যয় বাড়িয়েছে।
কামারপাড়ার ইউনিয়নের কৃষক বিষু দাস বলেন, “দেশে পাটের দাম নেই। সিনথেটিক ও প্লাস্টিকজাত পণ্যের ব্যবহারের কারণে বৈশ্বিক বাজারে পাটের চাহিদা কমেছে। এর প্রভাব বাংলাদেশের রপ্তানিতেও পড়েছে।”
এ অবস্থায় লোকসান হওয়ায় কৃষকরা ধীরে ধীরে অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকছেন। ফলে পাটের চাষাবাদ আগের মতো না থাকায় গ্রামগঞ্জে খালবিল, পুকুর ও ডোবায় পাটের আঁশ ছাড়ানো ও শুকানোর দৃশ্য আজকাল কম দেখা যায়।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকারি ক্রয় কার্যক্রম জোরদার করা জরুরি। সঙ্গে মানসম্মত বীজ ও আধুনিক প্রযুক্তি সরবরাহ করাও অপরিহার্য। পরিকল্পিতভাবে পাটজাত পণ্যের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করে অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক বাজারে চাহিদা বৃদ্ধির ব্যবস্থা নিলে পাটের চাষাবাদ বৃদ্ধি সম্ভব।
সাদুল্লাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অপূর্ব ভট্টাচার্য জানান, “উপজেলায় এ বছর ৬০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। পাট বাংলাদেশের ঐতিহ্য। কৃষককে উন্নতমানের পাট চাষে উৎসাহিত করতে হলে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি আধুনিক গবেষণা কৃষক পর্যায়ে বাস্তবায়িত করতে হবে। তখনই কৃষকদেড় মধ্যে পাটচাষে সাড়া মিলবে।”
একুশে সংবাদ/গা.প্র/এ.জে