লক্ষ্মীপুর-বেগমগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক চার লেন করার জন্য সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় ৩৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করলেও দরপত্র জটিলতার অজুহাত দেখিয়ে কাজটি এখনও শুরু হয়নি। সড়কটির খারাপ অবস্থার কারণে গত তিন বছরে এখানে ৫৯ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই আঞ্চলিক মহাসড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ঝুঁকি নিয়ে সড়ক দিয়ে যানবাহন ও মানুষকে চলাচল করতে হচ্ছে। মৃত্যুর পাশাপাশি যানবাহনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, আহত বা পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অনেকে।
লক্ষ্মীপুর পৌরবাস্তা থেকে সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ১৮ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে শহরের উত্তর তেমুহনী থেকে জকসিন পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার অংশের পিচ ঢালাই ও মেকাডম সরে গিয়ে গর্ত ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। বৃষ্টিতে পানি জমে থাকে, আর রোদে ধুলোবালি ও মাটি একত্রিত হয়ে পরিবেশ দূষিত করছে।
সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার আশ্বাস দীর্ঘদিন ধরে দেওয়া হলেও বাস্তবায়ন না হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দা, গাড়ি চালক, রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কাজ শুরু করার দাবিতে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন ও সংবাদ সম্মেলনও হয়েছে। স্থানীয়রা দ্রুত সড়কের কাজ শুরু না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালী মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ফরিদপুর এবং দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুরসহ ১৫–২০ জেলার মানুষ এ সড়ক ব্যবহার করেন। এছাড়া মজুচৌধুরীর হাট থেকে প্রতিদিন শত শত বালুবাহী ভারী ট্রাকও সড়ক ব্যবহার করছে।
লক্ষ্মীপুর বাস টার্মিনাল থেকে চন্দ্রগঞ্জ বাজার পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার সড়কের চার লেনের ‘উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি)’ পাশ হয়েছে। প্রকল্প অনুযায়ী চার লেনের একপাশে ২৪ ফুট করে ৪৮ ফুট রাস্তা এবং মাঝখানে ডিভাইডার থাকবে। গত ফেব্রুয়ারিতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছিল। তবে এখনও ঠিকাদার নিয়োগের টেন্ডার প্রক্রিয়া থেমে আছে। সড়ক ও জনপদ বিভাগ জানায়, টেন্ডার যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ইসলাম মার্কেট এলাকার বাসিন্দা আবদুল মতিন বলেন, গত কয়েক বছর ধরে সড়কটির অবস্থা নাজুক। মাঝেমধ্যে কিছু সংস্কার করা হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। তিনি মনে করেন, সংস্কারের নামে ‘তামাশা’ করা হচ্ছে।
গত ১৪ জুলাই সড়ক ও জনপদ অফিসের সামনে মানববন্ধন ও গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এছাড়া গত ২০ আগস্ট লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে চার লেনের কাজ দ্রুত শুরু করার দাবি জানানো হয়েছে। জামায়াত নেতা ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ভোলা-বরিশালসহ দেশের অধিকাংশ জেলার সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালী মহাসড়ক। ফেব্রুয়ারিতে সড়কটি চার লেন করার জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়েছে, তবে কাজ শুরু হচ্ছে না। মূলত আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে প্রকল্পটি স্থবির।
লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. আতাউর রহমান বলেন, চার লেনের জন্য দুইটি প্যাকেজে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। বড় প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগে যাচাই-বাছাই করতে কুমিল্লা অফিসের মূল্যায়ন চলছে।
একুশে সংবাদ/ল.প্র/এ.জে