AB Bank
  • ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫, ৬ ভাদ্র ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

চট্টগ্রামে সড়ক সংস্কারে ৪২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ চায় মেয়র



চট্টগ্রামে সড়ক সংস্কারে ৪২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ চায় মেয়র

চট্টগ্রামে  ভারী বর্ষায় গত চার বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীতে সবচেয়ে বেশি সড়কের ক্ষতি হয়েছে চলতি বর্ষায়। যার পরিমাণ ১৪২ দশমিক ২৮১ কিলেমিটার সড়ক। ক্ষতিগ্রস্ত এসব সড়ক সংস্কারে প্রয়োজন ৪২৬ কোটি ৮৪ লাখ ২২ হাজার ৭১০ টাকা।

এদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নিজস্ব অ্যাসপল্ট প্ল্যান্ট থেকে তৈরি মিক্সার (ইট, বালি, সিমেন্টে, বিটুমিনের মিশ্রণ) দিয়ে বর্ষায় ক্ষতি হওয়া সড়কের ছোট ছোট গর্ত ভরাট করে থাকে। সংস্থাটির ভাষায় এটি প্যাঁচওয়ার্ক। চলতি ২০২৫–২০২৬ অর্থবছরে প্যাচওয়ার্কের মালামাল ক্রয়ে বরাদ্দ রাখা আছে মাত্র ২৬ কোটি টাকা। চসিকের প্রকৌশল বিভাগ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের তালিকা এবং সংস্থাটির ২০২৫–২০২৬ অর্থবছরের বাজেট বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

অর্থাৎ যে পরিমাণ সড়ক ক্ষতি হয়েছে তার বিপরীতে প্যাচওয়ার্কের মালামাল ক্রয়ের বরাদ্দ নামমাত্র। এছাড়া অর্থের স্বল্পতা আছে চসিকে। ফলে জরুরি হলেও আর্থিক সংকটসহ নানা সীমাবদ্ধতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের সংস্কার কাজ জরুরি ভিত্তিতে করতে পারছে না চসিক।

এই অবস্থায় নগরীর ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে ৫শ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ চেয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।

গত সপ্তাহে এ বরাদ্দ চাওয়া হয়। অবশ্য বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে গত মঙ্গলবার লেখা একপত্রে মেয়র সড়ক সংস্কারের পাশাপশি সড়ক, ব্রিজ কালভার্ট ও নালা মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং খালের নিরাপত্তা বেষ্টনি স্থাপনের কথাও বলেছেন।

চসিকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পুরো শহরকে ৬টি অঞ্চলে ভাগ করে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। গত বুধবার প্রস্তুতকৃত এ তালিকা অনুযায়ী, ১ নম্বর জোনে ২৩ হাজার ৭৬ মিটার, ২ নম্বর জোনে ২৮ হাজার ৪৮০ মিটার, ৩ নম্বর জোনে ৮ হাজার ৯১৩ মিটার, ৪ নম্বর জোনে ২৬ হাজার ৩৬৬ মিটার, ৫ নম্বর জোনে ২৭ হাজার ২৬৫ মিটার এবং ৬ নম্বর জোনে ২৮ হাজার ১৮০ মিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। দেখা গেছে, নগরীর বেশিরভাগ সড়কের বিভিন্ন জায়গায় বিটুমিন, ইট, বালি ওঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। এতে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এর মধ্যে মুরাদপুর-অক্সিজেন, দুই নম্বর গেইট-অক্সিজেন রোডের অবস্থা বেহাল দশা । এছাড়া মুরাপদপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কে সিডিএ এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে এর যে অংশে র‌্যাম্প নামাচ্ছে সেখানে অবস্থা বেশি খারাপ। এছাড়া অনেক জায়গায় ওয়াসার খোঁড়াখুড়র জন্য নষ্ট হয়েছে সড়ক।

চসিকের প্রকৌশলীরা বলছেন, বিটুমিন রয়েছে এমন সড়ক নষ্ট হওয়ার প্রধান কারণ পানি। বলা যায় বিটুমিনের শত্রু পানি। কোনো কারণে সড়কে পানি জমে থাকলে এবং এর ওপর দিয়ে ভারী গাড়ি চলাচল করলে সড়ক দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। চসিক প্রতিবছর বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের তালিকা করে। তালিকা অনুযায়ী, গত বছর (২০২৪) নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৬টি ওয়ার্ডে ১ লক্ষ ২১ হাজার ৮১৪ বর্গমটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এ বর্ষায়। নষ্ট হওয়া সড়কের প্রস্থ ১০ ফুট ধরলে ক্ষতির পরিমাণ হবে প্রায় ৪২ কিলোমিটার। এর আগে ভারী ২০২৩ সালে বৃষ্টিতে ৫০ দশমিক ৭১ কিলোমিটার সড়ক নষ্ট হয়। এছাড়া ২০২২ সালে প্রায় ১শ কিলোমিটার, ২০২১ সালে ৩৬ দশমিক ২৭ কিলোমিটার ক্ষতি হয়। ওই হিসেবে গত চার বছরে বেশি ক্ষতি হয়েছে এবার (১৪২ দশমিক ২৮১ কিলেমিটার)। অবশ্য ২০২০ সালে ১৭০ কিলোমিটার এবং ২০১৭ সালে ৩শ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়।

৫শ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে লেখা পত্রে বলা হয়, সামপ্রতিক বর্ষাকালে চট্টগ্রামে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে। উক্ত অতিবৃষ্টির ফলে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, ব্রিজ ও কালভার্টসমূহ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী এবং বন্দর অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় প্রতিদিন নগরীর সড়ক সমূহে চট্টগ্রাম বন্দরের লরি, ট্রাক এবং বিভিন্ন সেবা সরবরাহমূলক সংস্থার গাড়ি চলাচল করে থাকে। অতিবৃষ্টির ফলে বিভিন্ন সড়কে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় সেখানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে নগরীর বিভিন্ন সড়কে জনসাধারণের চলাচলে ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে এবং জরুরি পণ্য সরবরাহ, চিকিৎসা সেবাসহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।বাংলাদেশী সিনেমা চিঠিতে বলা হয়, নগরের বিভিন্ন খালের পাশে নিরাপত্তা বেষ্টনির অপ্রতুলতা থাকায় জলাবদ্ধতার ফলে বিভিন্ন দুর্ঘটনার আশঙ্কাও প্রবল আকার ধারণ করেছে এবং সম্প্রতি কিছু দুর্ঘটনাও ঘটেছে। ফলে নগরীর ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, ব্রিজ কালভার্ট মেরামতসহ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানসমূহে নিরাপত্তা বেষ্টনি স্থাপন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এ লক্ষ্যে কর্পোরেশনের প্রায় ৫শ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে। কিন্তু চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আর্থিক অবস্থা বর্তমানে অপ্রতুল হওয়ায় কাজসমূহ জরুরি ভিত্তিতে সমাধা করা সম্ভব হচ্ছে না।

চসিক ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের পাশাপাশি নষ্ট হওয়া স্ল্যাব ও খালের সম্ভাব্য নিরাপত্তা বেষ্টনিরও তালিকা করে। তালিকা অনুযায়ী, স্ল্যাব ক্ষতি হযেছে ১৮ হাজার ৬৬৩ বর্গমিটার। ক্ষতিগ্রস্ত স্ল্যাব সংস্কারে ব্যয় হবে ৯ কোটি ৩৩ লাখ ১৫ হজার টাকা। খালে নিরাপত্তা বেষ্টনি দিতে হবে ২১ হাজার ২৯৪ মিটার জায়গায়। এতে খরচ হবে ২১ কোটি ২৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। অতীতে চসিকের বিভিন্ন প্রকাশনা সূত্রে জানা গেছে, নগরে পিচঢালা সড়ক রয়েছে এক হাজার ৪৫০টি। যার দৈর্ঘ্য ৯২০ কিলোমিটার। এসব সড়কের গড় প্রস্থ ৭ দশমিক ২ মিটার। এছাড়া দেড় হাজারটি কংক্রিটের সড়ক রয়েছে। ৪শ কিলোমিটার দীর্ঘ এসব সড়কের গড় প্রস্থ ৩ দশমিক ৬৬ মিটার। এর বাইরে সাড়ে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ১৩টি কাঁচা সড়ক রয়েছে নগরে প্রতিবছর বর্ষায় সড়ক ক্ষতি হলেও প্যাঁচওয়ার্কে বরাদ্দ কম রাখে সংস্থাটি। এবার রাখা হয়েছে মাত্র ২৬ কোটি টাকা। এর আগে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে প্যাঁচওয়ার্কের মালামাল ক্রয়ে ২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও ব্যয় হয় ৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর আগে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখলেও খরচ হয় ১৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। অবশ্য বিগত সময়ে প্রকল্পের আওতায় সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় হয় বেশি। তাই প্যাঁচওয়ার্কে কম খরচ হয়।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আনিসুর রহমান বলেন, এবারের বৃষ্টিতে নগরীর ১৪২ কিলোমিটার সড়ক ভেঙেছে। ঝুঁকিপূর্ণ নালা ও খালেও নিরাপত্তাবেষ্টনী দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। এসব কাজে সরকারি বরাদ্দ প্রয়োজন। কেননা সিটি করপোরেশনের টাকায় সব কটি কাজ করা সম্ভব নয়। সরকারি বরাদ্দ পেলে রাস্তার সংস্কারকাজ ও নিরাপত্তাবেষ্টনী দেওয়ার কাজ দ্রুত করা সম্ভব হবে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, এবারের বৃষ্টিতে নগরীর অনেকগুলো সড়ক ভেঙে গেছে। বন্দর ও শিল্পকারখানার গাড়ি চলার কারণে ক্ষতি হয়েছে বেশি। গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো ভেঙে যাওয়ায় মানুষ কষ্ট পাচ্ছেন। আপাতত সিটি করপোরেশনের তহবিল দিয়ে মেরামতের কাজ শুরু করেছেন। কিন্তু এ জন্য যে পরিমাণ অর্থ দরকার তা সিটি করপোরেশনের নেই। তিনি বলেন, ‍‍`আমরা মন্ত্রণালয়কে জরুরি ভিত্তিতে চট্টগ্রাম নগরীর রাস্তাঘাট ঠিক করতে, অরক্ষিত নালা-নর্দমা ও খালের পাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী দিতে প্রয়োজনীয় ৫শ কোটি টাকা চেয়েছি। এ বিষয়ে তড়িৎ ব্যবস্থা নেওয়া হবে সেটিই আমাদের প্রত্যাশা‍‍`।

 

একুশে সংবাদ/চ.প্র/এ.জে

Link copied!