আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। মাঠে নেমেছে সকল দল ওপরে জোটের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ঝালকাঠি-২ আসন (সদর ও নলছিটি) উপজেলাকে ঘিরে গঠিত সেখানেও শুরু হয়েছে জমজমাট প্রস্তুতি। তবে জেলার এই আসনে বিএনপির রাজনীতিতে এখন সবচেয়ে আলোচিত নাম নলছিটি।
ঐতিহাসিকভাবে বিএনপির রাজনীতিতে ঝালকাঠি সদর উপজেলা থেকে নলছিটি উপজেলা সবসময়ই ছিল অগ্রভাগে। জেলার রাজনীতিতে যেসব ত্যাগী ও জনসম্পৃক্ত নেতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে গেছেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই এই উপজেলার সন্তান। এবারের নির্বাচনী প্রস্তুতিতে সেই ধারারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।
বর্তমানে নলছিটি অংশ থেকেই বিএনপির তিনজন হেভিওয়েট নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং জেলার নেতৃত্বে থাকা অভিজ্ঞ রাজনীতিক। অন্যদিকে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ—ইতোমধ্যে তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে, যাদের দুজনেরই বাড়ি নলছিটিতে।
সব মিলিয়ে ঝালকাঠি-২ আসনের রাজনীতিতে বর্তমানে নলছিটি হয়ে উঠেছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। বিএনপি যদি এখানকার কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে নির্বাচন ঘিরে উত্তাপ, প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও মাঠের দৃশ্যপট আরও রোমাঞ্চকর হয়ে উঠবে বলে ধারণা রাজনৈতিক মহলের।
১.ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো (বিএনপি)
বিএনপির সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো ২০০১ সালে বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮ ও ২০১৮ সালে দলের মনোনয়ন পেলেও নানা কারণে নির্বাচনে অংশ নেননি বা সফল হননি। দীর্ঘদিন রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও বর্তমানে তিনি আবার মাঠে সক্রিয় হচ্ছেন। তবে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তাকে নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তাদের অভিযোগ, তিনি দীর্ঘদিন ধরে কোনো সাংগঠনিক যোগাযোগ রাখেননি। যদিও এখনো জনসাধারণের মাঝে তার জনপ্রিয়তা রয়েছে, তবে সাংগঠনিক নেতাকর্মীদের কাছে তিনি এখনও ততটা গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারেননি বলে অনেকেই মনে করেন। তবুও সাধারন মানুষ মনে করেন তিনিই পেতে পারেন বিএনপির টিকিট।
২. অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন (বিএনপি)
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন দলীয় দুঃসময়ে সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন। মাঠের রাজনীতিতে তার সক্রিয়তা, নেতাকর্মীদের পাশে থাকার ভূমিকা তাকে সাংগঠনিক ভাবে ব্যপক জনপ্রিয় করে তুলেছেন। যা ভোটের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন নেতাকর্মীরা। তাছাড়া তিনিই একমাত্র প্রার্থী যিনি সবসময় নিজ জেলায় অবস্থান করেন নেতাকর্মীদের বিপদে আপদে সহজেই তাকে পাওয়া যায়। এছাড়াও দলের দুঃসময়ে একাদিক রাজনৈতিক মামলার শিকার হওয়া তাকে শক্ত প্রার্থী হিসেবে পরিচিত করেছে। প্রতিনিয়তই তিনি বিভিন্ন এলাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রমের বাহিরেও সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নানান আচার-অনুষ্ঠানে যোগদান করে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
৩. জিএম আব্দুস সবুর কামরুল (বিএনপি)
জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুবদলের সম্পাদকীয় পদে থাকা কামরুল জানান, “ছাত্রজীবন থেকে শহীদ জিয়ার আদর্শে রাজনীতি করে আসছি। আন্দোলন-সংগ্রামে বারবার হামলা ও মামলার শিকার হয়েছি। তৃণমূলে আমার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, দল টিকিট দিলে আমি বিজয়ী হব ইনশাআল্লাহ।”
৪. শেখ নেয়ামুল করীম (জামায়াতে ইসলামি)
বরিশাল বিএম কলেজের ছাত্র সংসদের সাবেক এজিএস এবং ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় অফিস সম্পাদক শেখ নেয়ামুল করীম এবার জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন। তিনি নলছিটি ও ঝালকাঠির গ্রামীণ এলাকায় সরব প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিভিন্ন জাতীয় ও ধর্মীয় দিবসে শুভেচ্ছা পোস্টার, কর্মসূচি এবং স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের সমন্বয়ে তার প্রচার অব্যাহত রয়েছে।
৫. ডা. সিরাজুল ইসলাম সিরাজী (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ)
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ধর্মীয় আলোচক নবমুসলিম ডা. সিরাজুল ইসলাম সিরাজী গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এলাকায় দ্বারে দ্বারে গিয়ে মানুষের খোঁজখবর নেওয়া, ধর্মীয় ও সামাজিক বিভিন্ন আলোচনায় অংশগ্রহণ এবং রাজনৈতিকভাবে নিজেকে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন তিনি। ইসলামী দলগুলোর একাংশ তাকে সমন্বিত প্রার্থী হিসেবে সামনে আনতে চাচ্ছে বলে জানা গেছে।
জাতীয় নির্বাচনে সবসময় ব্যক্তির চেয়ে দল ও প্রতীকের জনপ্রিয়তার উপরই নির্ভর করে ফলাফল। সেই প্রেক্ষাপটে, নলছিটি উপজেলা বিএনপির একটি দুর্গ হিসেবেই পরিচিত। তবে দীর্ঘ স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সেই দুর্গে কিছুটা ধাক্কা লেগেছে। অনেক দলছুট নেতাকর্মী তখন পাড়ি জমিয়েছিলেন আওয়ামী লীগে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকার পালিয়ে গেলে, এসব দলছুট নেতাকর্মীরা আবার ইসলামি দলগুলোর প্রতি ঝুঁকতে শুরু করেন। তারপরও এখনো নলছিটিতে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
কে মনোনয়ন পাবেন তা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও, বিএনপি মনোনীত প্রার্থীই এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করেন ভোটাররা।
একুশে সংবাদ/ঝা.প্র/এ.জে