জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, অদস্য সাহসের অপর নাম হচ্ছে ভোলা। ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই রাতে দিল্লীর তাবেদার শেখ হাসিনা কোটা সংস্কার আন্দোলকারীদের রাজাকারের নাতি-পুতি বলে কটাক্ষ করেছিল।
সেই রাজাকার শব্দের প্রতিবাদ জানিয়ে সারা বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ রাজপথে রাতের বেলায় নেমে এসেছিল আমাদের ভাইয়েরা-বোনেরা। তার পরের দিন ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা-হায়েনারা আমাদের বোনেদের উপর লোমহর্ষক অত্যাচার-নির্যাতন চালায়। সেই নির্যাতনের পরেও আমাদের ভাই-বোনেরা পিছু হটেনি। তারা প্রতিরোধ তৈরী করেছিল। তাদের সাথে স্কুল-মাদ্রাসা-কলেজ-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এসে যোগ দিয়েছিল। তারপর এসেছিল আমাদের শিক্ষক সমাজ, সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষের গণপ্রতিরোধের ফলেই শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছিল। দেশব্যাপী জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে ভোলায় মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) দুপুরে পদযাত্রা শেষে ভোলা প্রেসক্লাবের সম্মুখে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, মুক্তিযোদ্ধা এবং রাজাকার বিভাজনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা দেশকে বিভাজন করেছিল। সেই মুজিববাদী আদর্শে দেশকে ৫০ বছর বিভাজন করে রেখেছিল। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা সেই বিভাজনকে মুছে দিতে সক্ষম হয়েছি। আমরা নতুন বাংলাদেশ, সর্বদলীয় গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। যেই বাংলাদেশ হবে শ্রমিকের বাংলাদেশ, কৃষকের বাংলাদেশ, মধ্যবিত্তের বাংলাদেশ, আজ জনতার বাংলাদেশ হবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, নদী বিধৌত এ অঞ্চল, সংগ্রামের সাথে লড়াই করে থাকে এ জনপদের মানুষ। অদস্য সাহসের অপর নাম হচ্ছে ভোলা। এখানকার মানুষ লড়াই করে টিকে থাকে, সংগ্রাম করে টিকে থাকে। প্রতিবাদের জায়গা হচ্ছে ভোলা। জুলাই-আগষ্ট অভ্যুত্থানে সবচেয়ে বেশী জীবন দিয়েছে এ জেলার মানুষ। এ থেকে বুঝা যায় ভোলা জেলার সন্তানেরা কতটা সাহসী, কতটা দেশ প্রেমিক।
আমরা ভোলায় এসেছি কিছু প্রতিশ্রতি দিতে। যে জুলাই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তোলার জন্য হয়েছিল, বৈষম্য-চাঁদাবাজ-মাফিয়া মুক্ত, ইনসাফ ভিত্তিক, মর্যাদা ভিত্তিক ও গণতান্ত্রিক ভিত্তিক রাষ্ট্র কায়েমের জন্য হয়েছিল, আমরা সেই ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছি। আমরা চাই গণঅভ্যুত্থানে ভোলার ছেলেরা অগ্রসৈনিক ছিল, এখনও ঠিক সেই ভাবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে।
নাহিদ বলেন, এখানে এসে আমরা এক শহীদ পিতার কথা শুনলাম। যার সন্তান হারায় তিনিই বুঝে সন্তান হারানোর কষ্ট। তার সন্তান রাজপথে নেমেছিল, তার মত আমাদের হাজারো ভাইয়েরা-বোনেরা রাজপথে নেমেছিল, জীবন দিয়েছিল।
এনসিপি’র আহ্বায়ক বলেন, এই ভোলাকে যুগের পর যুগ সকল উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছিল। আজকে আধুনিক যুগে এসেও ভোলাবাসীকে যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন করে রাখা হয়েছে। আমরা আজকে এসেছি সেই দূরত্ব ঘোচাতে। ভোলাবাসীকে আমরা আপন করে নিতে এসেছি। এখন থেকে ভোলাবাসী কোন দূরুত্বে থাকবে না। এখানে একাধিক গ্যাস ক্ষেত্র রয়েছে। সারাদেশে গ্যাস যোগানদাতাদের মধ্যে অন্যতম জায়গা। কিন্তু এই জেলা গ্যাসের লাইন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ভোলাবাসীকে গ্যাস থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। এছাড়া ভোলাকে উন্নত চিকিৎসা ও শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। আমরা চাই ভোলা একটি সমৃদ্ধ ও স্বনির্ভর জেলা হিসেবে গড়ে তুলতে। জাতীয় নাগরিক পার্টি আপনাদেরকে সেই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ভোলাবাসী দীর্ঘদিন যাবত সংগ্রাম করছে ভোলা-বরিশাল সেতুর জন্য। আমরা আপনাদের সেই দাবীর সাথে এক মত। ভোলার সাথে সকল দূরত্ব ঘোচাতে হবে, ভোলাকে যথাযথ মর্যাদা দিতে হবে। সকল সুযোগ-সুবিধার ভাগিদার ভোলাকে করতে হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সার্জিস আলমের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা সারমিন, ভোলার সন্তান শহীদ হাসানের পিতা মনির হোসেন, ঢাকা মহানগরের যুব নেতা এডভোকে রাসেল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেত্রী সালমা আক্তার, ফারজানা আহমেদ, এনসিপি নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন, বরিশাল অঞ্চল তত্ত্বাবধায়ক কেন্দ্রীয় যুগ্ম সমন্বয়ক ফয়সাল মাহমুদ শান্ত প্রমূখ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, যুগ্ম সদস্য সচিব মশিউর রহমান, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ডা. মাহমুদা আক্তার মিতু, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আরিফুর রহমান তুহিন, ভোলা জেলার প্রধান সমন্বয়কারী মেহেদী হাসান শরীফ, জেলা যুগ্ম সমন্বয়কারী ইয়াসির আরাফাত, মু. মাকসুদুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেত-কর্মীরা। এ সময় নেতা-কর্মীরা নানা শ্লোগানে মুখরিত করে রাখেন সমাবেশস্থল।
সমাবেশের আগে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ভোলার সদর রোডে পদযাত্রায় অংশ নেন।
একুশে সংবাদ/ভো.প্র/এ.জে