AB Bank
  • ঢাকা
  • শুক্রবার, ১১ জুলাই, ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী
চালকহীন তিন অ্যাম্বুলেন্স:

প্রশাসনিক গাফিলতিতে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ৯ দিন অচল জরুরি সেবা



প্রশাসনিক গাফিলতিতে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ৯ দিন অচল জরুরি সেবা

জরুরি চিকিৎসাসেবার অন্যতম প্রধান উপাদান অ্যাম্বুলেন্স। অথচ ১০০ শয্যাবিশিষ্ট ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে টানা নয় দিন ধরে তিনটি সরকারি অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে আছে গ্যারেজে—চালক না থাকায় সম্পূর্ণ অচল অবস্থায়। ফলে রোগী পরিবহন ও জীবন রক্ষায় মারাত্মক বিঘ্ন দেখা দিয়েছে।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে প্রশাসনিক গাফিলতি, অস্বচ্ছ বদলি প্রক্রিয়া, এবং কিছু প্রভাবশালীর সুপারিশের ভিত্তিতে স্বার্থান্বেষী একটি মহলের অপব্যবহারের বিস্তৃত চিত্র।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১ জুলাই ২০২৫ তারিখের এক আদেশে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের চালক মো. জামাল হোসেন এবং সিভিল সার্জনের চালক আবু বকর ছিদ্দিককে ভোলায় বদলি করা হয়। তবে স্থানীয়ভাবে কোনো বিকল্প চালক নিয়োগ না দিয়েই আদেশ কার্যকর করায় পুরো হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সেবা বন্ধ হয়ে পড়ে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য প্রশাসক বলেন, “এটা আদেশের অপপ্রয়োগ। ঢাকায় প্রভাবশালীদের সুপারিশে হয়তো এটি হয়েছে, কিন্তু এর ফল ভোগ করছে জনগণ।”

বিশেষ তথ্য অনুযায়ী, জামাল হোসেন ও আবু বকর ছিদ্দিক ভগ্নিপতি- বোন জামাই এবং দুজনের বাড়ি ভোলায়। অতীতেও তাঁরা ভোলায় বদলি হয়ে সুবিধা নিয়েছেন। এবারও ‘অটো রিলিজ’ সুবিধার আড়ালে তাঁরা সেখানে ফেরত গেছেন।

জামাল হোসেন ২০০৪ সালে চরফ্যাশন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দেন। ১০ বছর পর বদলি হয়ে ভোলা সদর ও টিভি হাসপাতালে ছিলেন মোট ৬ বছর। এরপর বরিশাল মুলাদীতে ২ বছর ছিলেন।

আবু বকর সিদ্দিক ২০১১ সালে মনপুরায় যোগদান। এরপর তজুমদিনে ৪ বছর, দৌলতখানে ২ বছর এবং ভোলা সদরে ৬ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন।

জানতে চাইলে জামাল হোসেন বলেন,“মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া আদেশে বলা ছিল, তিন কর্মদিবসের মধ্যে বদলিকৃত স্থানে যোগদান করতে হবে। অন্যথায় চার দিনের দিন থেকে সরাসরি অব্যাহতি পাওয়া বলে গণ্য হবে। সে অনুযায়ী আমি ৪ জুলাই ভোলায় যোগদান করি।”

তবে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, “অটো রিলিজ” সাধারণত জাতীয় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ব্যবহারযোগ্য নয়। এই ধরনের সাধারণ বদলিতে তা প্রযোজ্য নয়।

ঝালকাঠির এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,“এই বদলির বিষয়টি স্থানীয় কোনো আলোচনায় আসেনি। সবকিছু হয়েছে ঢাকায় বসেই। ফলে ঝালকাঠির বাস্তবতা পুরোপুরি উপেক্ষিত থেকে গেছে।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রভাবশালী কর্মকর্তা ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও সুপারিশের মাধ্যমে এই বদলির আদেশ তড়িঘড়ি করে জারি করান, যার পেছনে আর্থিক লেনদেনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে ঝালকাঠি থেকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে ভাড়া মাত্র ৪০০ টাকা হলেও, এখন প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সে দিতে হচ্ছে ১০০০–১৫০০ টাকা পর্যন্ত।

রানাপাশা গ্রামের ইমরান হোসেন জানান,“আম্মা অসুস্থ হয়ে পরলে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসি। ডাক্তার বরিশাল রেফার করেন। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সে যেতে হয়, যেখানে ১২০০ টাকা ভাড়া লেগেছে।”

শেকেরহাটের মকবুল হোসেন জানান,“ভাইয়ের বউকে রেফার করে বরিশাল পাঠাতে ১৫০০ টাকা খরচ হয়েছে, যা সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে ৪০০ টাকায় হতো।”

সদর উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়ন থেকে হাসপাতালটিতে আসা রোগীর স্বজন ইমাম হোসেন বিমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সরকারি সেবার নামে তো কাগজে কলমে সুবিধা দেখি, বাস্তবে গরিবের কপালে জ্বালা।”

২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মাত্র একজন চালকের মাধ্যমে অ্যাম্বুলেন্স থেকে সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে ১,৪৪,৬০০ টাকা। অথচ এই আয়ের পরও কোনো অতিরিক্ত চালক নিয়োগ করা হয়নি।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ঝালকাঠির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সত্যবান সেনগুপ্ত বলেন, “চালক নেই, অথচ গাড়ি আছে—এটা যেন কল্পকাহিনি। এটি প্রশাসনের গাফিলতি নয়, এটি রীতিমতো দুর্নীতির প্রতিচ্ছবি।”

সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ও মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. আবুয়াল হাসান বলেন,“বদলির চিঠি আসার সঙ্গে সঙ্গেই সিভিল সার্জন মহোদয়কে বিষয়টি জানাই। তিনি চালকদের রিলিজ না দিতে বলেন। কিন্তু ‘অটো রিলিজ’ শর্ত থাকায় তাঁরা নিজেরাই ভোলায় যোগ দেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”

আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মেহেদি হাসান সানি জানান,“বদলির পরপরই বিভাগীয় পরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো বিকল্প চালক আসে নি।”

এবিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক(স্বাস্থ্য) ডাঃ শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, “বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি এবং দ্রুত চালক দিয়ে সমস্যা সমাধান করা হবে। তিনি আরো বলেন, তাদেরকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বদলি করা হয়েছে।

চিকিৎসা সেবার মতো মানবিক খাতে এভাবে ব্যক্তি স্বার্থ ও ক্ষমতার অপব্যবহার মিলে এক নতুন “সিন্ডিকেটিক স্বাস্থ্যনীতি” তৈরি হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠছে।

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ছুটিতে থাকায় বর্তমানে দায়িত্বে রয়েছেন ডা. আবুয়াল হাসান। অথচ পাঁচ দিন ধরে চালকহীন অ্যাম্বুলেন্স পড়ে আছে গ্যারেজে। জেলার হাজারো মানুষ আজ প্রশ্ন করছেন—এই চরম দুরবস্থার দায় কে নেবে?

 


একুশে সংবাদ/ঝা.প্র/এ.জে

সর্বোচ্চ পঠিত - সারাবাংলা

Link copied!