AB Bank
  • ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই, ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী
বাসস্ট্যান্ডে গ্যাংয়ের তাণ্ডব:

লোহার রড-গ্যাস পাইপ নিয়ে হামলা, আহত কিশোর হাসপাতালে



লোহার রড-গ্যাস পাইপ নিয়ে হামলা, আহত কিশোর হাসপাতালে

সোমবার (৭ জুলাই) রাতে ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের হঠাৎ তাণ্ডবে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে জনমনে। আচমকা একদল কিশোর গ্যাং সদস্য গ্যাস পাইপ, লোহার রড ও হকি স্টিক হাতে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মহড়া দেয়, হামলা চালায় পথচারীদের ওপর, এবং ভালুকা-গফরগাঁও সিএনজি স্টেশনে পার্কিংয়ে থাকা একাধিক সিএনজিতে ভাঙচুর চালায়।

এ ঘটনায় এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। হামলায় আহত হন কয়েকজন, যাদের মধ্যে একজন কিশোরকে তাৎক্ষণিকভাবে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

স্থানীয় সূত্র অনুযায়ী, ভালুকা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস প্রাঙ্গণ রাত হলেই কিশোর গ্যাংয়ের অবাধ বিচরণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। মূল গেট বন্ধ থাকলেও তারা দেয়াল টপকে প্রবেশ করে সেখানে গভীর রাত পর্যন্ত চলে আড্ডা, জুয়া, মাদক সেবন, যৌনকর্মীদের আনাগোনা এবং অবৈধ কর্মকাণ্ড।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, চুরি ও ছিনতাইয়ের মাধ্যমে অর্জিত মালামালও এখানেই ভাগাভাগি করা হয়।

অত্যন্ত উদ্বেগজনক হলেও সত্য, স্থানীয়দের ভাষ্যমতে এই গ্যাংটির আত্মপ্রকাশ ঘটে গত বিতর্কিত (ডামি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। নির্বাচনের আগের দিন থেকেই তারা নিজেদের ‍‍`প্রভাব‍‍` বিস্তারের প্রয়াস চালিয়ে আসছে।

এমনকি লোকমুখে অভিযোগ রয়েছে, ভালুকা উপজেলায় যত মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটে তার পেছনেও এই চক্রের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ঘটনার পরপরই ভালুকা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ুন কবির তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আহত কিশোরকে হাসপাতালে ভর্তি করায়।

ওসি হুমায়ুন কবির বলেন,“আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।”

স্থানীয়দের মতামত অনুযায়ী, ওসি হুমায়ুন কবির শুধুমাত্র দায়িত্ব পালনকারী নন, বরং অপরাধ দমনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এক পুলিশ কর্মকর্তা। কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, “তিনি কাজ করেন অ্যান্টিবায়োটিকের মতো—অপরাধ যতই পুরনো হোক, নির্মূল হবেই ইনশাআল্লাহ।”

“কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে ‘ব্যাটিং’ শুরু হয়ে গেছে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা—তারা আইনের মুখোমুখি হবেই।”

ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং ভালুকা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান মামুন।

তিনি বলেন,“গতরাতে ভালুকা বাস স্ট্যান্ড এলাকায় কিশোর গ্যাং এর আচমকা মহড়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে পথচারীরা। এরা শুধু সাধারণ মানুষকে হামলা করেনি ভালুকা টু গফরগাঁও সিএনজি স্টেশনে পার্কিং করে রাখা সিএনজি গুলিতে ব্যাপক ভাংচুর করেছে বলে শুনতে পেরেছি।”

তিনি আরও বলেন, “এই সকল কর্মকান্ড কে অবশ্যই আমাদেরকে নিরুৎসাহিত করতে হবে। তারা যদি কোন রাজনৈতিক এর সাথেও যুক্ত হয় আমাদের উচিত তাদেরকে উপলব্ধি করানো এইটা কোন রাজনৈতিক অংশ হতে পারে না। সন্ত্রাসী, মস্তানি, বেয়াদবি, উচ্ছৃংখলতা এইগুলো আমাদের রাজনৈতিক অংশ নয়। সুতরাং যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বলবো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন আমরা আপনাদের সহযোগিতা করব।”

এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হলো—শুধুমাত্র পুলিশি অভিযান যথেষ্ট নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অভিভাবক, সমাজপতি, শিক্ষক এবং রাজনৈতিক নেতাদের সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি।

অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ: আপনার সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে চলাফেরা করছে, সে কি মাদকাসক্ত, কিশোর গ্যাংয়ে যুক্ত—এই সবকিছু জানতে হবে। সঙ্গ দোষের ফলে আদরের সন্তানের ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। সন্তানকে পড়ার টেবিলে ফিরিয়ে আনুন, না হলে কোনো দক্ষতা অর্জনে তাকে ব্যস্ত রাখুন।

সন্তানকে সময়মতো নিয়ন্ত্রণে না আনলে, মাদকাসক্ত হয়ে সে চুরি, ছিনতাই, এমনকি পিতা-মাতাকেও হত্যার মতো ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িয়ে যেতে পারে—ভালুকাতেও এমন নজির আছে।

ভালুকায় সন্ধ্যার পর চোখে পড়ে—অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেরা দ্রুতগতির মোটরসাইকেল চালিয়ে ঘুরছে। তাদের কাছে নেই লাইসেন্স, নেই নিয়ন্ত্রণ। দামি হোন্ডায় মাদক বহনেরও অভিযোগ রয়েছে।

এই অপরাধ প্রবণতা রোধে কিশোরদের আইনের আওতায় আনা এবং মোটরসাইকেল ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।

ভালুকায় মাদকবিরোধী অভিযানে ধারাবাহিক সফলতা অর্জন করায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। তাদের সময়োপযোগী ও কার্যকর পদক্ষেপে মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে একটি কঠোর বার্তা পৌঁছে গেছে।

এসব অভিযান শুধু আইন প্রয়োগেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং সমাজকে নিরাপদ ও মাদকমুক্ত রাখার এক বলিষ্ঠ প্রয়াস। মাদকসংশ্লিষ্ট অপরাধীদের গ্রেপ্তার, চক্র ভাঙা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির প্রতিটি উদ্যোগেই দেখা যাচ্ছে বাহিনীর পেশাদারিত্ব ও দায়িত্ববোধ, যা নিঃসন্দেহে অনুকরণীয়।

ভালুকা আজ এক ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কিশোর গ্যাং, মাদক, সামাজিক অবক্ষয় এবং রাজনৈতিক ছত্রছায়া—সব মিলিয়ে নিরাপত্তাহীনতার চিত্র ভয়ঙ্কর। তবে আশার কথা, ওসি হুমায়ুন কবিরের মতো কিছু সাহসী ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তার তৎপরতা এবং সচেতন নাগরিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা—এই ভয়ঙ্কর চক্র ভেঙে ফেলার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী হতে পারে।

সতর্ক হোন, সচেতন হোন—আপনার সন্তান যেন অপরাধের পথে না চলে, সেই দায়িত্ব আপনারই।

 

একুশে সংবাদ/ম.প্র/এ.জে

সর্বোচ্চ পঠিত - সারাবাংলা

Link copied!