বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের মূলপাইন গ্রামে স্থানীয় জনতা কর্তৃক মাদকসহ আটককৃত এক চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের পর অবশেষে মামলা গ্রহণ করেছে উজিরপুর মডেল থানা পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ৩ জুলাই রাতে উপজেলার মূলপাইন বাজার থেকে জীবন চক্রবর্তী (৫০) নামের এক ব্যক্তিকে গাঁজা ও ইয়াবাসহ আটক করে স্থানীয় জনতা। আটক ব্যক্তিকে পুলিশে সোপর্দ করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠে। বিষয়টি নিয়ে জনমনে চরম ক্ষোভ দেখা দেয়।
এই ঘটনাটি “উজিরপুরে মাদকসহ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করলো জনতা—ছেড়ে দিল পুলিশ” শিরোনামে বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক অনলাইন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তা তোলপাড় সৃষ্টি করে। এরপরই গত ৪ জুলাই এসআই মো. আসাদুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা রুজু করেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উজিরপুর মডেল থানার এক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, “কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তার কারণে পুরো থানার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।”
এ ঘটনায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. আলমগীর হোসেন বলেন, “মামলার তদন্তের দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে। নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অভিযুক্ত জীবন চক্রবর্তী মূলপাইন গ্রামের অনন্ত লাল চক্রবর্তীর ছেলে। তাকে আটক করার সময় জনতা তার কাছ থেকে গাঁজা ও ইয়াবা উদ্ধার করে। পরে পুলিশ তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেয়। এ বিষয়ে এসআই আসাদুল ইসলাম বলেন, “আটক ব্যক্তিকে গণধোলাই দেওয়া হয়েছিল। তার শরীরে আঘাত থাকায় চিকিৎসার জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়। উদ্ধারকৃত মাদক রাস্তা থেকে পাওয়া গেছে।”
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় থানার ওসি আবদুস সালামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানা যায়, তিনি ছুটিতে আছেন। এ সময় ডিউটিরত এসআই জ্যোতির্ময় হালদার বলেন, “এ বিষয়ে পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলব।”
এদিকে রাজনৈতিক মহল থেকেও মাদক নির্মূলে কড়া অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা এসেছে। উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. হুমায়ুন খান বলেন, “মাদক ব্যবসার সঙ্গে দলের কেউ জড়িত থাকলে এবং সেই অপরাধীদের পক্ষ নেয়, তাহলে তাকেও দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।”
একই সুরে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি খোকন সরদার বলেন, “যে পুলিশ সদস্যরা মাদক ব্যবসায়ীদের সহায়তা করবে, তাদের বিরুদ্ধেও আমরা সোচ্চার অবস্থান নেব।”
উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক মো. আলী সুজা বলেন, “মাদক নির্মূল এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কেউ অবহেলা করলে, সে যেই হোক না কেন, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
একুশে সংবাদ/ব.প্র/এ.জে