নওগাঁর মান্দায় বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের নানার বাড়িতে অনশন করেছেন এক প্রেমিকা । দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়াসহ আত্মহত্যার হুমকি প্রদান করেন ওই শিক্ষার্থী। গত সোমবার বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত উপজেলার ৩নং পরানপুর ইউনিয়নের বোর্ডঘর এলাকায় প্রেমিকের নানা ফুল মোহাম্মদ ওরফে ফুলুর বাড়িতে অনশন করে সে। অভিযুক্ত প্রেমিকের নাম বোরহান উদ্দিন ওরফে ফয়সাল (১৮)।
তিনি নিয়ামতপুর উপজেলার বালাতৈড় কলেজ এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য বদর উদ্দিনের ছেলে এবং রাজশাহীর একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষার্থী। বর্তমানে তারা স্বপরিবারে পলাতক রয়েছেন।
ওই প্রেমিকা জানান, প্রায় এক বছর আগে এসএসসি পরীক্ষার পূর্ব মুহূর্তে নানার বাড়ি নিয়ামতপুরের আমইল থেকে নিয়ামতপুর উপজেলা সদরের এশিয়ান স্কুলে কোচিং করতে গিয়ে বালাতৈড় উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বোরহান উদ্দিন ওরফে ফয়সালের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রেমের সূত্রে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা শুরু করেন। এরই ধারাবাহিতায় বিয়ের আশ্বাসে একাধিকবার শারিরিক সম্পর্কে জড়ান তারা। এমতাবস্থায় ৯ মাস পর বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর টেনশনে ওই প্রেমিকার নানী মারা যান।
এরপর নিয়ামতপুর সরকারি কলেজে এইচএসসি ১ম বর্ষে ভর্তি হওয়ার পর ঢাকায় চলে যায় সে। পরবর্তীতে গত ২০ জুন পারিবারিকভাবে সম্মতিক্রমে নিয়ামতপুর সদরে এক ছেলের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক হয়। বিষয়টি জানার পর বিয়ের আগের রাতেই ওই প্রেমিক তাকে নিয়ে পালিয়ে গিয়ে ঢাকার আশুলিয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের এক বন্ধুর বাসায় আশ্রয় নেয়। এর আগে ওই প্রেমিকের বাবা-মা প্রেমিকার বাসায় এসে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়ে যান। গত ২১ জুন সকালে প্রেমিকের বাবা, একই রাতে মা এবং মামা ঢাকায় যান তাদের উভয়কে খুঁজে বের করতে। এরপর মিথ্যে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহায়তায় একটি ক্লাবে নিয়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সু-কৌশলে সেখান থেকে ওই প্রেমিককে উদ্ধার করে গত ২২ জুন সকালে রাজশাহীতে নিয়ে চলে আসেন। এরপর ২৩ জুন তার নানার বাড়িতে নিয়ে এসে জিম্মি করে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার আয়োজন করে। ওই প্রেমিকের এমন ম্যাসেজ পেয়ে সে ওই প্রেমিকের নানার বাড়িতে গিয়ে অনশন শুরু করে।
এ সময় বিষয়টি বুঝতে পেরে তারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরদিন মঙ্গলবার সকালেও পুনরায় ওই প্রেমিকের বাড়িতে অনশনের প্রস্তুতি নেয় ওই প্রেমিকা। কিন্তু প্রেমিকের পরিবারের লোকজন পলাতক থাকায় তা ভেস্তে যায়। বর্তমানে ওই প্রেমিক সকল মাধ্যমে প্রেমিকার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ায় সে আইনের আশ্রয় নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছে।
অপরদিকে, প্রেমিক পরিবারের লোকজনের দাবি যে, সে একজন বিবাহিত মেয়ে। এক বাপের এক ছেলে এবং অগাধ সম্পদ দেখে লোভে পড়ে পরিকল্পিতভাবে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ফাঁসানোর জন্য এমনটি করা হচ্ছে। যার কোনো ভিত্তি নেই। এর আগে যা কিছু হয়েছে, ঢাকায় যাওয়ার পর উভয়ের সম্মতিক্রমে লিখিতভাবে আপস করা হয়ে গেছে। এরপরেও যা কিছু হচ্ছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনসুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘ভুক্তভোগী মামলা করতে চাইলে সব ধরনের আইনি সহায়তা দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, নওগাঁর মান্দা উপজেলার পরানপুর ইউনিয়নের কুকরাইল গ্রামের প্রেমিকার স্বপরিবারে প্রায় ২০ বছর যাবৎ ঢাকার মিরপুর ১৩ তে থাকেন। পেশায় সকলে গার্মেন্টস কর্মী। অনেক ছোটবেলা থেকেই ওই প্রেমিকা নানার বাড়ি থেকে লেখাপড়া করত। ২০২৪ সালে আমইল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় সে।
একুশে সংবাদ/ন.প্র/এ.জে