শ্রীমঙ্গলে চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা উদ্যোক্তার পকেটে। প্রতারণা মামলায় ব্যাংক এশিয়ার এজেন্টসহ দুইজন গ্রেপ্তার। মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নে চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
অভিযুক্তরা হলেন, উপজেলার ১নং র্মিজাপুর ইউনিয়নের বৌলাশীর গ্রামের নিকুঞ্জ দাশের ছেলে সৌরভ কান্তি দাশ এবং মির্জাপুর চা বাগান এলাকার শঙ্কর লোহার ছেলে গোপাল লোহার।
উপজেলা সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা যায়, সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তায়িত চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এককালীন জনপ্রতি চা-শ্রমিককে ৬ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়। উক্ত টাকা ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে আঙুলের ছাপ নিয়ে বায়োম্যাট্রিক পদ্ধতিতে উপকারভোগীদের হাতে প্রদান করার কথা।
কিন্তু গত ১৩ জুন মির্জাপুর ইউনিয়নের ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ও উদ্যোক্তা সৌরভ কান্তি দাশ ২৪ জন চা-শ্রমিকের আঙুলের ছাপ নিয়ে উপকারভোগীদের হাতে টাকা না দিয়ে মির্জাপুর চা-বাগানের শঙ্কর লোহারের ছেলে গোপাল লোহারের হাতে জনপ্রতি ৬ হাজার টাকা করে ২৪ জনের নামে বরাদ্দকৃত ১ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা প্রদান করেন। গোপাল লোহার ওই ২৪ জনকে জনপ্রতি ৪ হাজার টাকা করে প্রদান করেন। বাকি ৪৮ হাজার টাকা ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ও উদ্যোক্তা সৌরভ কান্তি দাশ এবং গোপাল লোহার পরস্পর যোগসাজশে আত্মসাৎ করেন।
পরে বিষয়টি জানাজানি হলে একদিন পর গোপাল লোহার ১৭ জনকে ২ হাজার টাকা করে ৩৪ হাজার টাকা ফেরত প্রদান করেন। বাকি ৭ জনকে তাদের প্রাপ্য ২ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়নি। এরই মধ্যে চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের ঘটনাটি জেলা ও উপজেলার প্রশাসনের নজরে এলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের মির্জাপুর ইউনিয়ন সমাজকর্মী মো. বশির মিয়া বাদী হয়ে শ্রীমঙ্গল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার বাদী মির্জাপুর ইউনিয়ন সমাজকর্মী মো. বশির মিয়া বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয় ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মহোদয়ের নির্দেশক্রমে আমি বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছি।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. সোয়েব হোসেন চৌধুরী বলেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলার ছোট-বড় ৪২টি চা বাগানের ১০ হাজার ৬৫০ জন চা-শ্রমিককে তাদের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৬ হাজার টাকা করে এককালীন বছরে ৬ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়। প্রতিটি ইউনিয়নে ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে এ টাকাগুলো যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে চা-শ্রমিকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়ে থাকে। মির্জাপুর ইউনিয়নে ১৩ জুন ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ও উদ্যোক্তা সৌরভ কান্তি দাশ এবং মির্জাপুর চা বাগানের শ্রমিক গোপাল লোহার নামের একজন ৪৮ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি অতীব গুরুত্বের সাথে নিয়ে জেলা প্রশাসক স্যার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্যারের নির্দেশনায় আমরা আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চা শ্রমিকদের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় শ্রীমঙ্গল থানায় একটি প্রতারণা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার দু’জনকে মঙ্গলবার মৌলভীবাজার আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, চা শ্রমিকদের ভাতার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত দু’জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আত্মসাৎকৃত ২৪ জনের মধ্যে ইতোমধ্যে ১৭ জনের ৩৪ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে এবং বাকি ৭ জনের টাকা  ফেরত প্রদান প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
 
একুশে সংবাদ/মৌ.প্র/এ.জে
    
                        

                                            
                                                        
                            
একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
												
												
												
												
												
												
												
												
                                            
                                            
                                            
                                            
