AB Bank
  • ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৬ জুন, ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

মৌলভীবাজারে কোরবানির হাটে চাহিদার চেয়ে বেশি ৭০৮ পশু



মৌলভীবাজারে কোরবানির হাটে চাহিদার চেয়ে বেশি ৭০৮ পশু

পবিত্র ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র তিন দিন। এবার মৌলভীবাজার জেলায় চাহিদার চেয়ে বেশি পশুর মজুত রয়েছে। গতকাল থেকে ক্রেতা ও বিক্রেতার উপস্থিতিতে জমে উঠেছে জেলা শহর ও গ্রামের কোরবানির পশুর হাটগুলো। জানা যায়, জেলার ৭টি উপজেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে মোট ৫৭টি পশুর হাট বসেছে।

প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় নিবন্ধিত খামারির সংখ্যা ৭ হাজার ৩৭২টি। জেলায় এ বছর কুরবানির পশুর চাহিদা ৭৯ হাজার ৯২৯টি হলেও প্রস্তুত করা হয়েছে ৮০ হাজার ৬৩৭টি পশু। এর মধ্যে রয়েছে ৪৬ হাজার ৫৮০টি গরু, ১ হাজার ২৭২টি মহিষ, ২৮ হাজার ৬২২টি ছাগল ও ৪ হাজার ১৬৩টি ভেড়া।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী দীঘিরপাড়ের পশুর হাট, জেলার কমলগঞ্জের আদমপুর, শ্রীমঙ্গলের সাগরদীঘিপাড় ও সিন্দুরখান বাজারের গবাদি পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে স্থানীয় খামারি ও পাইকাররা বিক্রির জন্য সারি সারি পশু প্রস্তুত করে রেখেছেন। পছন্দের পশু কিনতে হাটে ভিড় করছেন ক্রেতারা। হাটে আসা ক্রেতারা চাহিদা ও পছন্দ অনুযায়ী দরদামও তারা করছেন। বেশির ভাগ ক্রেতার পছন্দ মাঝারি আকারের পশু।

কোরবানির হাটে আসা ক্রেতারা বলছেন, বিগত সময়ের চেয়ে এই বছর কোরবানির পশুর দাম কিছুটা বেশি। তবে, ক্ষুদ্র খামারি ও পাইকারা বলছেন গোখাদ্যের দাম এবারও বাড়ায় পশুপালনে তাদের খরচ আগের চেয়ে বেড়েছে।

শ্রীমঙ্গল শহরের সাগরদীঘি পাড়ের কোরবানির পশুর হাটে রাজশাহী থেকে নিয়ে আসা ১৫ মণ ওজনের একটি হরিয়ানা জাতের গরু নজর কেড়েছে সবার। কালচে রঙের কারণে গরুটির নাম রাখা হয়েছে ‘কালো মানিক’। মালিক রুহুল আমিন এটির দাম হাঁকছেন ৯ লাখ টাকা। তবে ক্রেতারা সর্বোচ্চ সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম করে গেছেন। বাজারে এটি সবচেয়ে বড় গরু হওয়ায় অনেকে কিনতে না পারলেও দেখতে ভিড় করছেন। কালো মানিক ছাড়াও রুহুল আমিন ৪ লাখ থেকে ৮ লাখ টাকার দামের আরও ১৭টি গরু এনেছেন হাটে।

শুধু রুহুল আমিন নন, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু ব্যবসায়ী ও খামারিরা গত মঙ্গলবার থেকেই ছোট-বড় গরু, মহিষ ও ছাগল নিয়ে হাটে এসেছেন। বাজারে শুরু থেকেই ক্রেতাদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে অধিকাংশই গরু দখে দরদাম করে চলে যাচ্ছেন। বিক্রেতারা বলছেন, ভিড় থাকলেও বিক্রি তুলনামূলক অনেক কম।

গরু ব্যবসায়ী রুহুল আমিন বলেন, শ্রীমঙ্গলের সাগরদীঘি বাজারে এর আগেও তিনি কয়েকবার এসেছেন। ক্রেতা আসছেন, দরদাম করছেন। কেউ নিচ্ছেন না। তিনি আশা করছেন, ঈদের আগের দিন সবকটি গরুই বিক্রি করে দিতে পারবেন।

বাজারে কথা হয় হবিগঞ্জের মিরপুর থেকে আসা আরেক ব্যবসায়ী সালাম মিয়ার সঙ্গে। তিনি ১৪-১৫ মণ ওজনের ১৫টি ষাঁড় এনেছেন। আলাপকালে তিনি বলেন, প্রতিবছর এই হাটে ভালো গরু বিক্রি হয়, তাই এবারও এসেছেন। প্রথম দিনের হাট ঘুরে দেখা যায়, গরু দেখতে ও কিনতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী দীঘিরপাড়ে পশুর হাটে কথা হয় ক্রেতা ইমরান হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার বাজেট ৯০ হাজার টাকা। গরু পছন্দ হলেও দামে মিলছে না। ঘুরে দেখছি, দরদাম হলে কিনব। আরেক ক্রেতা  হোসান খান বলেন, গরু পছন্দ হয়েছে, দামেও হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো ঈদের আগের কয়েক দিন এই গরু রাখার জায়গা বাড়িতে নেই। তাই আর আজ কিনিনি। ঈদের আগের দিন একটা কিনব।

শ্রীমঙ্গল সাগরদিঘি পশুর হাটের ইজারাদার দুলাল হাজী বলেন, সাগরদিঘি পাড়ে সারা বছরই সপ্তাহে একদিন গরুর হাট বসে। ঈদ এলে সপ্তাহখানেক একটানা গরু ছাগল ইত্যাদি পশু বেচাকেনা হয়। আমরা এবারে এক লাখের ভেতর গরু কিনলে এক হাজার টাকা হাসিল নিচ্ছি। কোরবানির হাটে কেউ যেন অসুস্থ গরু নিয়ে না আসেন ও কেউ যেন দালালের খপ্পরে পড়ে হয়রানির শিকার না হন, সে জন্য আমাদের ভলান্টিয়ারেরা কাজ করছেন। তা ছাড়া বাজারে সার্বক্ষণিক পুলিশ নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত আছেন।

কমলগঞ্জের আদমপুরে পশুর হাটে ৩৮টি পশু নিয়ে আসা আজিম উদ্দিন বলেন, এখন পর্যন্ত ৭টি বড় ও ১১টি মাঝারি আকারের পশু বিক্রি করতে পেরেছি।

এ বিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো: আশরাফুল আলম খান জানান, বাজারে সুস্থ পশু বিক্রির জন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগ প্রচাণার পাশাপাশি জেলায় ২২টি মেডিকেল টিম গঠন করেছে। এবারের ঈদে কোরবানির পশুর মোট চাহিদা রয়েছে ৭৯ হাজার ৯শত ২৯টি। স্থানীয় খামারিদের কাছে মজুত রয়েছে ৮০ হাজার ৬’শত ৩৭টি কোরবানির পশু। উদ্বৃত্ত রয়েছে ৭শত ৮টি গবাদি পশু। পাশাপাশি স্থানীয় খামারিরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে লক্ষে চোরাই পথে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে পশু যাতে প্রবেশ করতে না পারে সীমান্তে নজরদারী বাড়ানো হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

এদিকে আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে গতকাল সুশীল ও সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেছে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, মৌলভীবাজারে নির্বিঘ্নে ঈদ উদযানের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

এর আগে কোরবানির পশুর হাটের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে মৌলভীবাজার জেলার ইজারাদারদের সাথে পুলিশের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মৌলভীবাজার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন ইজারাদারদের উদ্দেশ্যে বলেন, কোন অবস্থাতেই রাস্তা ব্লক করে পশুর হাট বা হাটের আশেপাশে অস্থায়ী দোকানপাট বসানো যাবে না। পশুর হাটে জাল টাকা, চোরাই গরু, অজ্ঞান বা মলম পার্টির কোন ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষনিক পুলিশের সাথে  যোগাযোগ করবেন। এছাড়া কোরবানির হাটে কোন রাজনৈতিক দলের নেতা বা অন্য কেউ চাঁদাবাজি করার চেষ্টা করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পুলিশ সুপার হাটগুলোতে জেলা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় মোবাইল নম্বর ব্যানার বা  ফেস্টুনে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করার আহবান জানান। পশুর হাটে আগত ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত আলো, সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ ইজারাদারদের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের প্রতিও তিনি গুরুত্বারুপ করেন।

 

 

একুশে সংবাদ/মৌ.প্র/এ.জে

Link copied!