কথা ছিল শেরপুর এসে পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন করবেন ব্যবসায়ী আমজাদ আলী মন্ডল (৫৫)। কিন্তু আজ সকালে ঢাকা থেকে শেরপুর ফেরার পথে ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের করাতিপাড়া এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আমজাদসহ তার দুই ছেলে ঘটনাস্থলেই মারা যান।
এ ঘটনায় আমজাদ মন্ডলের কণ্যাশিশু আফরিন আক্তার (৫), স্ত্রী মাকসুদা মন্ডল (৪০), রাহাত মন্ডলের স্ত্রী মরিয়ম বেগম (২২) গুরতর আহত হন। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে মঙ্গলবার বিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকা পাঠানো হয়।
এদিকে আজ সন্ধা ৬টায় তাদের লাশ শেরপুর সদরের কামারেরচর ইউনিয়নের চরবাবনা কান্দাপাড়া গ্রামে পৌঁছালে কান্নার শব্দে ভারি হয়ে উঠে চারপাশ। ঘটনার কথা মনে করে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন আমজাদের স্বজনরা।
স্থানীয়রা জানান, শেরপুর সদরের কামারেরচর ইউনিয়নের চরবাবনা গ্রামের মৃত মোনছের মন্ডলের ছেলে আমজাদ মন্ডল দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে ঢাকায় ঠিকাদারের কাজ করছিলেন। এদিকে আজ ভোরে ঢাকার মাদারটেক বাসা থেকে ঈদের ছুটিতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শেরপুর আসছিলেন। পথিমধ্যে তাদের বহনকৃত মাইক্রোবাসটি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের করাতিপাড়া এলাকায় আসলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে সজোরে ধাক্কা মারে। এতে মাইক্রোবাসের সামনের অংশ ধুমড়ে মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলে আমজাদ মন্ডল (৫৫) এবং তার দুই ছেলে রাতুল মন্ডল (১৪) ও রাহাত মন্ডল (২৬) মারা যান।
টাঙ্গাইল বাসাইল থানার পুলিশ জানায়, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, চালকের অসাবধানতার কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। বিকেলে স্বজনদের কাছে তিনটি মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। মাইক্রোবাস ও ট্রাকটি আটক করে থানায় আনা হয়েছে।
আমজাদের ছোটভাই মোফাজ্জল মন্ডল (৪৫) জানান, ইচ্ছে ছিল পরিবারের সাথে ঈদের নামাজ আদায় শেষে গরু কোরবানি করার। গতকাল গরু কেনার জন্য দেড় লক্ষ টাকা পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু এক মুহূর্তেই আমাদের ঈদ আনন্দ অশ্রু জলে পরিণত হলো।
প্রতিবেশী সখিনা বেগম (৪০) বলেন, আমাজাদ খুব নরম প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। এলাকার সবাই তাকে খুব পছন্দ করত। গত ঈদুল ফিতরেও সে গ্রামে ঈদ করেছিল। এই ঈদেও তার গ্রামে আসার কথা ছিল। কিন্তু কে জানত বাবা ছেলে লাশ হয়ে ফিরবে।
শেরপুর সদরের চরমোচারিয়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান খন্দকার মিজানুর রহমান মিজান জানান, আমজাদ এলাকার গরিবদের কথা ভাবতেন। প্রতি ঈদে তাদের দান করতেন। পাশাপাশি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ মাদরাসাতে তার অনুদান ছিল চোখে পড়ার মতো।
একুশে সংবাদ / শে.প্র/এ.জে