চুয়াডাঙ্গার প্রান্তিক কৃষক থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র, মাঝারি কিংবা বড় খামারি কোরবানির বাজার টার্গেট করে পশু পালনে প্রতিযোগিতায় নামেন। এ বছর জেলায় প্রায় দুই লাখ পশু প্রস্তুত রয়েছে কোরবানির জন্য। এর মধ্যে জেলার চাহিদা মিটিয়ে ৭৫ হাজার পশু বাইরের জেলায় বিক্রি করা হবে।
চলতি কোরবানি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গায় ১ হাজার কোটি টাকার পশু বিক্রি হবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দক্ষিণ চাঁদপুরের কৃষক মোতালেব হোসেন। প্রতিবছর কুরবানিতে বেচবেন বলে একটি করে গরু যত্ন করে পালন করেন।
মুনাফাও হয়। এবার গরুর দাম নিয়ে হতাশ তিনি। মোতালেব জানান, গতবার ২ লাখ টাকায় গরু বেঁচেছিলাম। লাভ হয়েছিল। কিন্তু এবার গরুর দাম কম বলছে ব্যাপারি। গতবারের চেয়ে গরুর চেহারাও ভালো। কিন্তু দাম বলছে দুই লাখ টাকার নিচে। তবে এবার মাঝারি সাইজের গরু বেচে মুনাফা হচ্ছে খামারিদের।
জীবননগর উপজেলার শিংনগর গ্রামের খামারি লাল মিয়া বলেন, আমার খামারে ১৫টি গরু ছিল। ৮টি গরু বিক্রি করেছি। মোটামুটি মুনাফা হয়েছে।
খামারি জাহিদুল বলেন, নতুন খামার করেছি। ৪টি গরু কোরবানির হাটে তুলব। দেখি কি হয়। জেলার বড় খামারি জীবননগর উপজেলার আস্থা অ্যাগ্রো অ্যান্ড ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী অনিক বিশ্বাস বলেন, কোরবানি টার্গেট করে এবার আড়াই`শ গরু পালন করেছিলাম খামারে। ২শ’ গরু ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। ৫০টি বড় গরু ঢাকা ও চিটাগং খামারিদেরকে দিয়েছি। তারাও মুনাফা করেছে। কিছু বড় গরু ঢাকা গাবতলী হাটে নেব। আমাদের খামারে সর্বোচ্চ ১০-১২ লাখ টাকা দামের গরু আছে। তবে এবার বড় গরুর চাহিদা একটু কম।
চুয়াডাঙ্গাতে ৮টি পশুর হাটসহ অনলাইন বাজার চালু আছে কোরবানি পশু বেচা-কেনায়। পশু বিক্রিতে দুঃশ্চিতা নেই বলে জানালেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সাহাবুদ্দিন।
তিনি বলেন, এবার বাইরের দেশ থেকে কোনো পশু আমদানি করবে না সরকার। সুতারাং দেশি খামারিরা পশুর উপযুক্ত দাম পাবে। এতে লাভবান হবেন তারা।
যারা আগে-ভাগে কোরবানির পশু কিনছেন তাদের জন্য পরামর্শ দিলেন পশু বিশেষজ্ঞ চুয়াডাঙ্গা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডা. শামীমুজ্জামান। তিনি বলেন, বর্তমান আবহাওয়ায় গরু গাছের ছায়ায় ঠাণ্ডা জায়গায় রাখতে হবে। কাঁচা ঘাস বিচালি খাওয়াতে হবে। বেশি বেশি তরল স্যালাইন খাওয়াতে হবে। নিয়মিত গোসল করাতে হবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়া মিলিয়ে চলতি বছর চুয়াডাঙ্গা জেলায় কোরবানি উপযোগী পশু রয়েছে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৪৩৬টি। এবার জেলায় চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ২৪ হাজার ৮৫৫টি পশু। জেলার চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত ৭৪ হাজার ৫৮১টি পশু দেশের অন্যান্য জেলায় বিক্রি করা হবে। চুয়াডাঙ্গা জেলায় এ বছর পালন করা কোরবানি পশুর বাজারমূল্য দাঁড়াবে ১ হাজার কোটি টাকা। যা জেলার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি।
একুশে সংবাদ / চু.প্র/এ.জে