খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা উপজেলার বুদং পাড়া এলাকায় পাহাড়ি মাটি ও প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা থেকে অবসরজীবনে কৃষিকে আলিঙ্গন করে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন অবসরপ্রাপ্ত সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জ্যোতি কিশোর বড়ুয়া।
কৃষি পেশাকে ভালোবেসে সম্পূর্ণ শখের বশে গড়ে তুলেছেন বিশাল এক মিশ্র ফল বাগান, যা বর্তমানে শুধু তার আয়ের উৎস নয়, হয়ে উঠেছে আশেপাশের এলাকার মানুষের জন্য একটি শিক্ষণীয় ও পর্যটন উপযোগী স্থান।
২০১৭ সালে ১০ একর জমিতে মিশ্র ফল বাগান তৈরির পরিকল্পনা করেন জ্যোতি কিশোর। সে অনুযায়ী শুরু করেন বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ গাছ রোপণ। প্রথম ধাপে রোপণ করেন প্রায় ৮০০টি চারা—যার মধ্যে ছিল লেবু, মাল্টা, লটকন, পেপে, চালতা, জলপাই, আমড়া, ইত্যাদি। পরে আরো প্রায় ৬০০ চারা রোপণ করেন।

শুরুর দিকে আশানুরূপ ফলন না হলেও হাল ছাড়েননি তিনি। দ্বিতীয় দফায় পরিশ্রম ও সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে বাগানে ফল আসা শুরু হয়—যা ছিল তার জীবনের এক বড় সাফল্য।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাগানে আছে নানা জাতের দেশি-বিদেশি ফল:আম (বারীফোর, রাঙগই, আম্রপালি, ডকমাই, কাটিমন, গৌরোমতি, মিয়াজাকি),লটকন, রামভুটান, মাল্টা, লেবু, জামরুল, লিচু, কুল, আমলকী, সাদা জাম, কালো জাম, সফেদা, পেপে, পেয়ারা,ভিয়েতনামি কাঁঠাল, বারোমাসি কাঠাল, রেড কুইন লংগান, আলু বোখারা, কলা, আমড়া, জলপাই, বড়ই, অড়বরই প্রভৃতি।
সব ফল স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয় এবং অনেক পাইকার সরাসরি বাগান থেকেই ফল সংগ্রহ করেন। জ্যোতি কিশোরের বারীফোর, কাটিমন, ডকমাই ও গৌরমতি জাতের আম বিশেষ জনপ্রিয়।
তিনি চাষে প্রাকৃতিক পদ্ধতি অনুসরণ করেন। পোকামাকড় দমনে ব্যবহার করেন ফেরোমন ফাঁদ ও কালার টেপ। এতে ফল হয় কীটনাশক ও ফরমালিন মুক্ত, যা স্থানীয় বাজারে বাড়তি চাহিদা সৃষ্টি করেছে।
বর্তমানে বাগানে কাজ করছেন নিয়মিত ৮-১০ জন শ্রমিক। তাঁদের মাসিক আয় ১০-১২ হাজার টাকা, যা দিয়ে চালাচ্ছেন সংসার ও সন্তানের পড়াশোনা।
বাগানের প্রতিষ্ঠায় তার মোট খরচ প্রায় ২৫ লাখ টাকা হলেও তিনি আশা করছেন, এই বছর আম বিক্রি থেকে ১২-১৪ লাখ টাকা আয় হবে।
বাগান দেখতে নিয়মিতই আসছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডেন্টাল টেকনোলজিস্ট জহিরুল ইসলাম মোহন বলেন,“এটি অপূর্ব একটি ফলের বাগান। জ্যোতি বড়ুয়ার পরিশ্রম ও নিষ্ঠা নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বড় অনুপ্রেরণা।”
উদ্যোক্তা জ্যোতি কিশোর বলেন,“এই বাগান আমার শখ থেকে শুরু হলেও এখন বাণিজ্যিক রূপ নিচ্ছে। আরেকটি বাগান করার পরিকল্পনা রয়েছে। সরকারের সহযোগিতা, ব্যাংক ঋণ এবং কৃষি দপ্তরের সহায়তা পেলে এটি জাতীয় পর্যায়ের একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে।”
গুইমারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ওঙ্কার বিশ্বাস বলেন,“জ্যোতি কিশোর বড়ুয়ার এই উদ্যোগ মিশ্র ফল চাষে অন্যদের উৎসাহিত করছে। কৃষি অফিস থেকে তাকে নিয়মিত কারিগরি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।”
একুশে সংবাদ/ খ.প্র /এ.জে