AB Bank
  • ঢাকা
  • শনিবার, ২৪ মে, ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

সংস্কারের অভাবে কচুরিপানায় ভরা সিংগাইরের দুটি প্রাকৃতিক জলাধার



সংস্কারের অভাবে কচুরিপানায় ভরা সিংগাইরের দুটি প্রাকৃতিক জলাধার

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার চান্দহর ও জয়মন্টপ (নয়ানী) কোল দুটি বিশাল আয়তনের প্রাকৃতিক জলাধার। এক সময় ধলেশ্বরী নদীর অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ এ দু’টি কোলে এখনও রয়েছে গভীর জলরাশি। মিঠা পানির সুস্বাদু মাছের ভাণ্ডার হিসেবেও এর সুনাম ছিল। তবে গত ৮-১০ বছর ধরে কচুরিপানা জমে অবহেলা ও অযত্নের কারণে আজ তা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। কোল দু’টিকে দেখে মনে হয় যেন সবুজে আচ্ছাদিত অবারিত ফসলের মাঠ।

কয়েক বছর আগেও কোল দুটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ছিল। এখানকার মাছ ছিল সুস্বাদু ও সবার প্রিয়। শীতকালে হাজার হাজার অতিথি পাখির কলকাকলীতে অঞ্চল মুখরিত থাকত। কয়েক বছর আগেও দু’পাড়ের শত শত পরিবারের মানুষ ও গরু বাছুর গোসল, থালা বাসন ধোয়া ও রান্নাসহ নানা কাজে কোল দু’টির পানি ব্যবহার করত। কিন্তু কালের বিবর্তনে অবহেলা ও অযত্নে কোল দুটি আজ মরার পথে। এখন পুরোটাই কচুরিপানার দখলে চলে গেছে। তবু সংস্কারের কোনও উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

বিশেষ করে দুর্ভোগে পড়েছে ওই কোলের মাছের উপর নির্ভরশীল শতাধিক মৎস্যজীবী পরিবার। কচুরিপানার কারণে তারা মাছ ধরতে না পেরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

জানা গেছে, খেলেশ্বর ও কমলনগর মৌজায় আরএস রেকর্ডে ৫৪ একর আয়তনের জয়মন্টপ (নয়ানী) কোলটি অর্ধচন্দ্রাকৃতির, প্রায় ২ কিলোমিটার লম্বা এবং পাশেও প্রায় আধা কিলোমিটার। আর চাঁদহার মৌজার ৭৮ একর ০৭ শতাংশ আয়তনের চান্দহর কোলটিও অর্ধচন্দ্রাকৃতির, প্রায় ৩ কিলোমিটার লম্বা এবং পাশে প্রায় ৫০০ মিটার। বর্ষা মৌসুমে আয়তন অনেক বৃদ্ধি পায়। দুটি কোলই বর্ষাকালে ধলেশ্বরী নদীর সঙ্গে যুক্ত হয়। চান্দহর কোলটি ধলেশ্বরীর পাশাপাশি কালীগঙ্গা নদীর সাথেও সংযোগ ঘটে।

এক সময়ে দুটি কোলেই প্রতিবছর নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হতো। কিন্তু কালের আবর্তে পানি আসার প্রবেশদ্বার ভরাট ও সংকুচিত হওয়ায় বর্ষায় আগের রূপ আর দেখা যায় না। যা ছিল, তা কচুরিপানার দখলে চলে গেছে।

স্থানীয়দের নানা কাজের জন্য কোল দুটির গুরুত্ব থাকলেও কচুরিপানার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। কচুরিপানা এলাকাবাসীর জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে এখানকার আবদ্ধ পানি দূষিত হয়ে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় কোলগুলো কচুরিপানায় ভরে গেছে। এর ফলে পানি দূষিত হয়ে এলাকাবাসীর ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের দাবি, কোল দুটি টিকিয়ে রাখতে সরকারি উদ্যোগে এখনই কচুরিপানা অপসারণসহ সংস্কার করা জরুরি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ এ কোল দুটিতে কচুরিপানায় পরিপূর্ণ হয়ে সবুজে ঢেকে আছে। স্থানীয়রা কিংবা জেলেদের মাছ ধরার সেই দৃশ্য এখন হারিয়ে গেছে। কোল দুটির পানি দূষিত হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

চান্দহর কোলপাড়ের বাসিন্দা আব্দুল কাদের জানান, এক সময় সরকারি ভাবে এটি ইজারা দেওয়া হতো। তখন ইজারাদারের পরিচর্যার কারণে কচু জমতে পারতো না। বছরে কোটি কোটি টাকার মাছ পাওয়া যেত। ১৪-১৫ বছর আগে ‘জাল যার জ্বলা তার’ ভিত্তিতে উন্মুক্ত করা হয়। এরপর থেকেই কচুরিপানা বাসা বাঁধে।

কমলনগর গ্রামের সুজন ও আনেছ খাঁ জানান, আগে আমরা এ কোলের মাছ ধরে সংসার চালাতাম। গত ৮-১০ বছর ধরে কচুরিপানার কারণে মাছ ধরতে পারছি না। দুর্বিষহ জীবন যাপন করছি।

জয়মন্টপ (নয়ানী) কোলপাড়ের বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার দেলোয়ার কবির টিপু বলেন, বাবার মুখে শুনেছি এক সময় এখানে যাত্রীবাহী লঞ্চ ও মালামাল নিয়ে বড় বড় নৌকা চলাচল করতো। নদনদী, খালবিল ভরাট হওয়ার কারণে এখন তা শুধুই স্মৃতি। দখল, দূষণ ও কচুরিপানায় কোল দুটির অস্তিত্ব আজ বিপন্ন। দ্রুত কচুরিপানা অপসারণ করে নান্দনিক এ প্রাকৃতিক জলাধারের সৌন্দর্য ফিরিয়ে এনে পর্যটন শিল্প গড়ে তোলার জোর দাবি জানাচ্ছি।

এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস.এম. আব্দুল্লাহ বিন শফিক বলেন, “সরেজমিনে চান্দহর কোল দেখেছি। গত মাসের উপজেলা রাজস্ব সভায় কোল দুটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। দখল ও কাগজপত্র পর্যালোচনা করে জলমহাল নীতিমালা ২০০৯ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

 

একুশে সংবাদ/মা.প্র /এ.জে

Link copied!