চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি পৌরসভা এলাকায় ছয়তলার অনুমোদন নিয়ে নির্মিত একটি সাততলা ভবন পাশের ছয়তলা ভবনের গায়ে হেলে পড়েছে। এতে এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা আশঙ্কা করছেন, যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
স্থানীয়রা জানান, কিছুদিন আগেও ভবন দুটির মাঝে এক হাতের মতো ফাঁকা জায়গা ছিল। কিন্তু বর্তমানে সাততলা ভবনটি পুরোপুরি পাশের ভবনের গায়ে ঠেকে গেছে। নির্মাণের শুরু থেকেই ভবনটির কাঠামোগত ত্রুটি ও নিয়মভঙ্গের অভিযোগ ছিল। শুরুতে ৩-৪ ইঞ্চি হেলে পড়া ভবনটি বর্তমানে ১৮-২০ ইঞ্চি পর্যন্ত হেলে পড়েছে।
জানা গেছে, পৌরসভার প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের কাছাকাছি বিএস ৭৮৫৫ দাগে স্থানীয় বাসিন্দা মো. আবদুল খালেক ২০১৯ সালে ছয়তলা ভবনের অনুমোদন নিয়ে সাততলা ভবন নির্মাণ করেন। ভবনটি নির্মাণ শেষে ২০২১-২২ সালে তিনি ২১টি পরিবারকে ভাড়া দেন। বর্তমানে তিনি প্রবাসে থাকায় ভবনটির দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন আত্মীয় মো. নেজাম উদ্দিন বুলবুল, যিনি ভবনের দায়ভার পৌর কর্তৃপক্ষ ও প্রকৌশলীর ওপর চাপান।

ফটিকছড়ি পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত প্রকৌশলী রাজীব বড়ুয়া বলেন,“ভবনটির ছয়তলা পর্যন্ত অনুমোদন ছিল। নিয়ম না মেনে সাততলা নির্মাণ করা হয়েছে। ভবনটির ঝুঁকিমুক্ত সনদ নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে, না নিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান,“ভবনটি কবে থেকে হেলে পড়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
ফায়ার সার্ভিসের ফটিকছড়ি ইউনিট প্রধান কামাল উদ্দিন বলেন,“হেলে পড়ার বিষয়টি জানি, তবে এখনো বড় ধরনের কাঠামোগত ক্ষতির তথ্য মেলেনি। বিশেষজ্ঞ পরামর্শের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) প্রকৌশলী সঞ্জয় দেবনাথ বলেন,“ভবন হেলে পড়া মানে নির্মাণ ও নকশা ত্রুটি রয়েছে। মালিক, প্রকৌশলী ও অনুমোদনকারী সংস্থা কেউ দায় এড়াতে পারে না। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”
স্থানীয়রা জানান, শুধু এই ভবন নয়, ফটিকছড়ি পৌর এলাকায় আরও অনেক ভবন নিয়ম লঙ্ঘন করে নির্মিত হয়েছে। অনুমোদিত তলা সংখ্যার বেশি ভবন নির্মাণ, দুর্বল মাটি ও নকশা না মেনে কাজ করার ফলে পুরো এলাকাই এখন ভূমিকম্প বা অন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে বড় ঝুঁকিতে রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. তসলিম বলেন,“ভবনটির অবস্থা ভয়াবহ। ইতোমধ্যে ১৮-২০ ইঞ্চি হেলে পড়েছে। ভবনটিতে বহু মানুষ বাস করে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে।”
এলাকাবাসীর দাবি, পৌর এলাকার সব ভবনের অনুমোদন ও নির্মাণ নথি যাচাই করে যেসব ভবন নিয়ম না মেনে নির্মিত, তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।
একুশে সংবাদ/ চ.প্র/এ.জে