চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ভূজপুর ইউনিয়নের কাজীবাড়ি—যা স্থানীয়ভাবে `মিঞা বাড়ি` নামে পরিচিত—এখনও বহন করছে শতাব্দীপ্রাচীন জমিদারি ঐতিহ্যের স্মৃতি। চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত এই জমিদারবাড়ি শুধু স্থাপত্যশৈলীর জন্য নয়, বরং রহস্যময় লোককথার জন্যও আলোচিত।
জমিদারি ইতিহাস ও প্রতিষ্ঠা
১৮০০ শতকের শুরুতে গৌড় নগর থেকে আগত মহব্বত সাধুর বংশধর কাজী শাহাব উদ্দিন ভূজপুরে জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে তাঁর পুত্র কাজী হায়দার আলী চৌধুরী এবং নাতি কাজী হাসমত আলী চৌধুরী জমিদারির উত্তরসূরি হন। কাজী হাসমত ছিলেন একজন খ্যাতিমান কবি, যাঁর রচিত ‘আলিফ লায়লা’ ও ‘চিন ফগফুর শাহ নামা’ সে সময়ের সমাজে বেশ প্রভাব ফেলেছিল।

স্থাপত্যশৈলী ও নিদর্শন
মুঘল স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত এই বাড়িতে ছিল ৬০ কক্ষবিশিষ্ট জমিদার প্রাসাদ, ২৪টি মহাল, ১২টি তরফ, ২২টি দীঘি ও মসজিদ এবং ২২টি ব্রিজ ও কালভার্ট। বাড়ির প্রবেশপথে তিন গম্বুজ ও ১২ মিনারবিশিষ্ট প্রায় ২৫০ বছর পুরোনো মসজিদটি এখনও ব্যবহারযোগ্য। লালবাগ কেল্লার আদলে নির্মিত প্রধান প্রাসাদটি এখন ধ্বংসপ্রায়।

রহস্যময় লোককথা: ফাঁসির মঞ্চ ও `নিমা`
বাড়ির ভেতরে ছিল একটি সেগুন কাঠের গোলাকার ফাঁসির মঞ্চ। স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী, ব্রিটিশ আমলে এখানে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া হতো। আরেকটি ভয়াবহ লোককথা হলো ‘নিমা’—অপরাধীকে ফুটন্ত তেলের কড়াইয়ে ভেজে তার মাংস দিয়ে হালুয়া তৈরি করা হতো বলে কথিত আছে, যা খেলে রোগ সারে—এমন বিশ্বাস প্রচলিত ছিল। তবে এসবের কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
জমিদারগণের তালিকা
১. কাজী শাহাব উদ্দিন চৌধুরী
২. কাজী হায়দার আলী চৌধুরী
৩. কাজী হাসমত আলী চৌধুরী
৪. কাজী আহমদুজ্জামান চৌধুরী
৫. কাজী দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী
এই বংশধরদের মধ্যেই একজন ছিলেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদ।
অবহেলা ও সংরক্ষণের প্রয়োজন
১৯৫৫ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পর থেকে প্রাসাদ ও অন্যান্য স্থাপনাগুলো অযত্নে পড়ে আছে। বর্তমানে শুধু মসজিদটি ব্যবহৃত হওয়ায় কিছুটা সংরক্ষিত আছে। ঐতিহ্যবাহী এই স্থাপনাটি চট্টগ্রামের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং মুঘল স্থাপত্যের অমূল্য নিদর্শন হিসেবে রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।
একুশে সংবাদ/ চ.প্র/এ.জে