মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ভিনদেশি ফল আঙুর চাষে প্রথমবারেই সফল হয়েছেন কৃষি উদ্যোক্তা সৈয়দুর রহমান ফারুক তরফদার। তিনি শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের দিঘীরপাড় গ্রামের বাসিন্দা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দিঘীরপাড় জামে মসজিদের ছাদের টবে থোকায় থোকায় ঝুলছে আঙুর। আঙুরের বাম্পার ফলনে লাভের স্বপ্ন বুনছেন উদ্যোক্তা ফারুক। আলাপকালে তিনি জানান, এবার প্রথম বাণিজ্যিকভাবে আঙুর চাষ করে সফল হয়েছেন। এর আগে ২০২৪ সালে যশোর থেকে ১২ হাজার টাকা দিয়ে চয়ন জাতের ৪০ টি আঙুরের চারা কিনে এনে দিঘীরপাড় মসজিদের ছাদের টবে পরীক্ষামূলক রোপণ করেছিলেন। চাষে সফল হওয়ায় এবার বাণিজ্যিক চাষ করেন। এ বছর দিঘীরপাড় মসজিদের ছাদের টবে সাড়ে তিন শতক ও তার বড়ির আঙিনায় প্রায় আরও ৩ শতাংশ জমিজুড়ে বাণিজ্যিকভাবে আঙুর চাষ করে নিয়মিত গাছের পরিচর্যা করছেন তিনি।
তার সংগ্রহে চয়নজাতসহ বিভিন্ন জাতের প্রায় অর্ধশত আঙুর গাছ রয়েছে। তিনি বলেন, আঙুর গাছ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বাঁশের খুঁটি, তার ও বাঁশ দিয়ে মাচা তৈরি করে দেন। চলতি বছরের মার্চ মাসে আঙুর গাছে ফুল এসেছে গাছে। এপ্রিল মাসে ফল ধরা শুরু করে। বর্তমানে গাছগুলোতে বিপুল পরিমাণ আঙুর ফলে ভরে গেছে আঙুরের মাচাগুলি।
এ বছর এখন পর্যন্ত ত্রিশ হাজার টাকার চারা ও আঙুর বিক্রি করেছেন। আরও দুই লক্ষাধিক টাকা বিক্রি করার আশা করছেন তিনি। সব খরচ বাদ দিয়েও লাভবান হওয়ার আশা করছেন উদ্যোক্তা ফারুক।
এবার চারা ও ফল বিক্রির আয় থেকে মসজিদের উন্নয়নে দান করবেন বলেও জানান।
মসজিদের ছাদ বাগান ও বাড়ির আঙিনায় আঙুর ছাড়াও মালটা, কমলা, কাচা মরিচ, নাগা মরচি, বেগুনসহ অরেনক ধরণের সবজিও চাষ করছেন তিনি।
ফারুকের আঙুর চাষ দেখে অভিভূত এলাকাবাসী। দেশের মাটিতে বিদেশি ফল উৎপাদন করায় ফারুককে সাধুবাদ জানাচ্ছেন তারা। আঙুর চাষে আগ্রহি হচ্ছেন অন্যান্য কৃষকরাও।
কৃষি উদ্যোক্তা সৈয়দুর রহমান ফারুক তরফদার বলেন, আঙুরের গাছ থেকে বিপুল পরিমাণের চারা গাছ তৈরি করে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন ও সরবরাহের পরিকল্পনা করছেন তিনি। স্থানীয়ভাবে আঙুর চাষ হলে ফরমালিনমুক্ত এবং কোনো ধরণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ছাড়া মানসম্মত ফল পাওয়া যাবে। অক্টোবর-নভেম্বর মাসে আঙুর গাছ ছাঁটাই করলে মার্চ-এপ্রিলে ফল পাওয়া যায়। আঙুর চাষে বাড়তি কোনো খরচ নেই। জৈবসার প্রয়োগের পাশাপাশি সঠিক পরিচর্যায় জাত ভেদে একটি গাছে ৪০-৫০ বছর ফলন পাওয়া সম্ভব। এ ছাড়া বছরে একটি গাছে তিনবার ফল আসে। প্রতিটি গাছে দেড় থেকে দুই মণ ফলন পাওয়া যায়।
শ্রীমঙ্গল কৃষি অফিসের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. সেলিম হোসেন জানান, তিনি কৃষক ফারুককে আঙুর গাছ রোপণ থেকে নিয়ে এখন পর্যন্ত নিয়মিত পরামর্শসহ সার্বিকভাবে দেখভাল করছেন। আঙুর ফল চাষাবাদে ফারুককে আগামীতে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আলাউদ্দিন জানান, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় এবার প্রথমই বাণিজ্যিকভাবে আঙুর চাষ করছেন কৃষক ফারুক, ভালো ফলনও হয়েছে। আঙুরে সাত শতাংশ কার্বোহাইড্রেট আর ৯২ শতাংশই জলীয় অংশ রয়েছে। এর মধ্যে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেল আছে। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ভিটামিন সি। বছরজুড়ে এই ভিনদেশি ফলটির কদর থাকে। আমাদের দেশের উদ্ভাবিত আঙুরের নিজস্ব কোনো জাত নেই। অনেকে শখের বশে বাসাবাড়িতে আঙুর চাষ করে থাকেন। ফলন আশানুরূপ হয় কিন্তু মিষ্টতা কম থাকে। যারা আঙুর চাষ করেন তাদের সাধ্যমতো পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ফারুকের মতো উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসলে আশা করা যায়, বাণিজ্যিকসহ বাসাবাড়িতেও ব্যাপক পরিসরে আঙুর চাষ করা সম্ভব।
একুশে সংবাদ/মৌ.প্র/এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :