নলছিটির বিভিন্ন হাটবাজারে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে কথিত অষ্টধাতুর আংটির বিক্রি। বিকেল গড়ালেই তালতলা, নাচনমহল, মানপাশা, হদুয়া, মোল্লারহাটসহ পৌর এলাকার বিভিন্ন মোড়ে বসছে ছোট ছোট অস্থায়ী দোকান। কখনো কখনো টেবিলের উপর সারি করে রাখা কিছু চকচকে আংটি, সঙ্গে একটি সাউন্ডবক্স। কখনো সন্ধ্যার কুফি বাতি জ্বালিয়ে সাউন্ড বক্সের মাধ্যমে চলছে অশ্লীল বাক্য বিনিময়। সেখান থেকে ভেসে আসে জীবন বদলে দেওয়ার আশ্বাস।
বলা হচ্ছে, জীবনের দুঃখ-দুর্দশা, ব্যবসার ক্ষতি, সংসারের অশান্তি কিংবা ব্যক্তিগত দুর্ভাগ্যের মূল কারণ নাকি গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান। এই সব সমস্যার একমাত্র সমাধান হিসেবেই তুলে ধরা হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট ধরনের আংটি যাকে বলা হচ্ছে ‘দৈবশক্তির অষ্টধাতুর আংটি’। আংটির দাম রাখা হচ্ছে ২০১ টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে একজন বিক্রেতা ৫০টির বেশি আংটি বিক্রি করছেন। তবে এসব আংটির প্রকৃত মূল্য খুবই সামান্য। স্থানীয়ভাবে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই ধরনের ধাতব আংটির পাইকারি দাম ১০ থেকে ১৫ টাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
বিক্রেতারা দাবি করছেন, আংটিতে ব্যবহৃত আটটি ধাতু নানা রকম উপকারী শক্তির উৎস। তবে তাদের কাছে ধাতুগুলোর প্রকৃত নাম কিংবা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। পরিবর্তে এসব আংটিকে বলা হচ্ছে ‘সাধনার ফসল’ এবং কার্যকারিতা নির্ভর করছে ‘বিশ্বাস’ ও ‘মনোবলের’ ওপর।
অত্যন্ত কৌশলীভাবে বিক্রেতারা মানুষের বিশ্বাস ও দুর্বলতাকে কাজে লাগাচ্ছেন। তারা আধ্যাত্মিকতা, ধর্মীয় বিশ্বাস, এমনকি ভুয়া চিকিৎসা উপদেশ ব্যবহার করে পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করছেন। প্রচারণায় বলা হচ্ছে, এই আংটি পরিধান করলে শরীর ভালো থাকবে, সবকিছু খাওয়া যাবে এবং কোনো রোগ হবে না।
এভাবে নানাভাবে বিভ্রান্ত করে সহজ-সরল মানুষকে আস্থা করানো হচ্ছে আংটির ওপর। স্থানীয় বাজারগুলোতে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ, দিনমজুর, দোকান কর্মচারী কিংবা স্বল্পশিক্ষিত তরুণরাই এই প্রতারণার প্রধান শিকার।
বিক্রেতারা প্রায়ই স্থান পরিবর্তন করে থাকেন। কোথাও একদিন বসে বিক্রি করে পরদিন অন্য বাজারে চলে যান। ফলে নিয়মিত তদারকি না থাকলে এদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অষ্টধাতুর আংটির নামে এই ধরণের পণ্য বিক্রি বিজ্ঞানের অপব্যবহার এবং ধর্মীয় বিশ্বাসকে বিভ্রান্তিকরভাবে বাণিজ্যে রূপান্তরের একটি অপচেষ্টা। জনসচেতনতা বাড়ানো না গেলে এবং প্রশাসনের কঠোর নজরদারি না থাকলে প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষ প্রতারণার শিকার হতে থাকবে।
এ সকল প্রতারনার বিষয়ে সচেতন মহল প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ও সচেতনামূলক প্রচারনার তাগিদ দেন।
একুশে সংবাদ/ঝ.প্র/এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :