শুধু কৃষিতে নয়,ডাক্তারি পেশাতেও তিনি দেশে সুনাম বয়ে এনেছেন,অটিজম সন্তানকে নিয়েও দক্ষ হাতে সংসারটাকেও দরে রেখেছেন শক্ত হাতে। এবং সকল প্রকার প্রথা ভেঙ্গে সফল হওয়া নারী কৃষি উদ্যোক্তা ডাঃ শারমিন হোসাইন রাজধানী ঢাকার অদূরে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ২নং গাজীপুর ইউনিয়নের গাজীপুর গ্রামে মাত্র সাত বিঘা জমি ক্রয় করেন ডাঃ শারমিন হোসাইন এর স্বামী আমিনুর রহমান খান (দিপু), জমি টুকু কিনার পর তার স্ত্রী ডাঃ শারমিন হোসাইন এর মাথায় আসে কিছু একটা করবেন। সেই চিন্তা চেতনা থেকে ও মনের ইচ্ছা থেকে শুরু,এরপর উৎসাহী হয়ে বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ,ফল ফলাদির গাছসহ হাঁস,মরগী, গরু, ছাগল পালনসহ নানামুখী চাষাবাদ শুরু করেন তিনি।
ঢাকার শিক্ষিত নারী চাষাবাদে নেমেছেন তাই উপহাস করেছিলো অনেকে। অথচ অল্প কয়েক বছরে তার চাষাবাদের ব্যাপ্তি ঘটেছে। শুধু সবজি নয় এই খামারে রয়েছে কয়েক প্রকার মুরগী,কবুতর,গরু,ছাগল,এসব বিক্রি করেই এক মৌসুমে তার আয় হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
ডাঃ শারমিন হোসাইন জানিয়েছিলেন কিভাবে তিনি প্রথা ভেঙ্গে এগিয়েছেন আজকের সফলতার পথে। তিনি বলেন,প্রতিটা মানুষ তার মনের ইচ্ছা শক্তি দিয়ে নিজেকে অনেক দুর এগিয়ে নিতে পারে। ঢাকা বসুন্ধরা শিক্ষিত নারী ডাঃ শারমিন হোসাইন উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের মানুষকে নয় সার বাংলাদের প্রতিটা মানুষের কৃষিতে এগিয়া আসা দরকার বলে মনে করেন তিনি।
চার দেয়ালের গণ্ডির মধ্যে যার নিরিবিলি জীবনযাপন করার কথা তিনি আজ রীতিমত একজন সমাজ উন্নয়ন কর্মী ও নারী উদ্যোক্তার দায়িত্ব পালন করছেন। নিবিড় সবজি, ফলমূল, পোল্ট্রী ও গাভীর খামার করে এলাকার নারীদের কৃষিকাজে উদ্বুদ্ধ করেছেন। দেশের সকল নারী কৃষককে ডিঙ্গিয়ে তিনি দেশের মানুষকে তাক লাগিয়ে দেন। টেলিভিশনে মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শায়েখ সিরাজের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান দেখে তার ইচ্ছে জাগে বসতবাড়ির আশপাশে শাক—সবজি ও ফলমূলের বাগান গড়ে তোলার। এরপর আর থেমে থাকেননি ডাঃ শারমিন হোসাইন। লালশাক, পুঁইশাক, বেগুন, গোল আলু, পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচামরিচ, যা কিছু তিনি বাড়ির আঙ্গিনায় চাষ করেন তা দিয়েই সারা বছরের সবজির চাহিদা মিটে যায়। এমনকি বাড়তি কিছু আয়ও হয়।
প্রথম প্রথম স্বামী তার এমন কর্মকাণ্ডে কিছুটা বিরক্ত হতেন। এতে করে তার স্বামীর আগ্রহ আরো বেড়ে যায়। কোন প্রকার ঋণ না নিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নে ৭ বিঘা জমিতে ফুলকপি, বাধাকপি, ওলকপি, গাজর, ইত্যাদি ফসলের আবাদ করে আশাতীত লাভবান হন। এ অবস্থায় তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে চারা কিনে এনে বিভিন্ন ফলের ১০৭৫টি গাছের বাগান গড়ে তোলেন। এছাড়া উন্নত জাতের পেয়ারার (৪০)টি গাছও লাগান আঙ্গিনায়। বর্তমানে তার খামারে ১০টি গরু, ৪ শ’ সোনালি মুরগি, ড্রাগন, ৭ বিঘা জমির মধ্যে রয়েছে মাছের পুকুর, পেয়ারা, লিচু, পেঁপে, কলা, লাউ, ফুলকপি, পেঁয়াজ, রসুন, টমেটো, বেগুন, মটর, গম, আলু, মশুর চাষ করছেন। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ডাঃ শারমিন হোসাইন এর কাছে কৃষি কাজের পরামর্শ নিতে ছুটে আসেন অনেকেই। ডাঃ শারমিন হোসাইন ও তাদের মাঝে ছড়িয়ে দেন তার সফলতার দিকগুলো। শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বলেন, ডাঃ শারমিন হোসাইন পরিশ্রমী, ধৈর্য, অধ্যবসায়, সাহস ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে সংগ্রাম করে সাহসিকতার মধ্য দিয়ে কৃষি খামার করে তিনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা ও খামারি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। পরিশ্রম মানুষকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যায় তার বাস্তব প্রমাণ হলো কৃষি খামারের স্বত্বাধিকারী কৃষাণি ডাঃ শারমিন হোসাইন । কঠোর পরিশ্রম করে ডাঃ শারমিন হোসাইন একজন মডেল খামারি হিসাবে ইতোমধ্যে অনেক পরিচিতি লাভ করেছেন। ডাঃ শারমিন হোসাইন এর সফলতা দেখে গাজীপুর ইউনিয়নের নারীরাও রীতিমতো প্রতিযোগিতামূলক কৃষি কাজে এগিয়ে এসেছেন। পরিশ্রম, ধৈর্য, অধ্যবসায়, সাহস ও মেধাকে কাজে লাগাতে পারলে ডাঃ শারমিন হোসাইন এর মতো সকলেই এক সময় ক্রমান্বয়ে উপরে উঠতে থাকবে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :