নিঃসন্তান সোনাভান বেওয়ার (৭০) স্বামী সাদেক আলী মারা গেছেন ১০ বছর আগে। স্বামীর মৃত্যুর পর অন্যের ঘর গৃহস্থালী কাজ করে একরকম চলত সোনাভানের সংসার। বয়স বাড়ায় সে কাজেও তেমন ডাক পাননা তিনি। অনেকটা খেয়ে না খেয়েই চলে তার সংসার। অভাবের সংসারে শীত আসে সোনাভানের জন্য আশির্বাদ হয়ে। শীতের পাঁচ মাস পিঠা বেঁচে স্বচ্ছলে চলে তাঁর সংসার। সোনাভান বেওয়া নাটোরের গুরুদাসপুর পৌর সদরের আনন্দ নগর মহল্লার বাসিন্দা।
শনিবার (২১ অক্টোবর) সকাল ৭ টার দিকে গিয়ে দেখা যায়,আনন্দ নগর-খুবজীপুর প্রধান সড়কের স্কুল মোড়ে চুলা জ্বলছে সোনাভানের। চুড়ায় বসানো হাড়িয়ে গরম হচ্ছে পানি। আর পানির বাস্পে সেদ্ধ হচ্ছে ভাপা পিঠা। পাঁচ টাকায় প্রতিটি পিঠা পেতে তার চুলর সামনে অপেক্ষা করছে শিশুর দল। দাঁড়িয়ে বা বসে শীতে গরম পিঠার স্বাদ নিচ্ছেন অনেকে। সন্ধ্যায় একইস্থানে তিনি বিক্রি করেন চিতই পিঠা।
সোনাভান বলেন,-‘ঢেঁকিছাঁটা চালের গুড়ার সাথে খেজুরের গুড়ের মিশ্রন দিয়ে গরম পানির ভাঁপে তৈরী হয় ভাপা পিঠা। আর চালের গুড়ার সাথে পানি মিশিয়ে মন্ড তৈরী করে সেটি মাটির তাওয়ায় ঢাকনা দিয়ে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রেখে নামিয়ে নিলেই তৈরী হয় চিতই পিঠা। চিতই পিঠার সঙ্গে দেয়া হয় ধনে পাতা,কালো জিরা,শরিষা বাটা,কাঁচা মরিচ ও পেয়াজ দিয়ে তৈরী ভর্তা। যা পিঠার স্বাদকে বহুগুন বাড়িয়ে দেয়।
সোনাভান বেওয়া আরো বলেন,-‘প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ কেজি চালের গুড়ার পিঠা তৈরী করেন তিনি। চালের গুড়া,খেজুর গুড়,জ্বালানী,অন্যান্য উপকরন বাবদ খরচ ১ হাজার টাকা। গড়ে দৈনিক বিক্রি ১হাজার ৫০০ টাকা। খরচ বাদে ৫০০ টাকার মতো আয় হয়। যা দিয়ে ছচ্ছলে চলে তাঁর সংসার।’
পিঠা খেতে আসা যুবক জুয়েল রানা বলেন, ‘বাড়িতে তো সব সময় পিঠা তৈরি সম্ভব হয়না। মাঝেমধ্যে পিঠা খেতে আসেন তিনি। নিজে খেয়ে বাড়ির অন্য সদস্যদের জন্য নিয়ে যান। এখানে প্রতিটি পিঠা ৫ টাকায় পাওয়া যায়।’
সোনাভান বেওয়ার মতো উপজেলার সব হাটবাজার ও সড়কের মোড়ে শীতের পিঠা তৈরি করে বাড়তি আয় করছেন অনেকেই। অস্থায়ী দোকানগুলো সকাল ৬টা থেকে ৯টা এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পিঠা বিক্রি চলে। রস পিঠা,ঝাল পিঠা,তেলে ভাজা পিঠা বিক্রি হলেও চিতই ও ভাপা পিঠার ক্রেতাই।
রোজী মোজাম্মেল মহিলা কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান মাজেম আলী মলিন বলেন,-‘শীত আর পিঠা বাঙালীর ঐতিহ্যের অংশ। আর শীতের পিঠা ভোজন রসিক বাঙালীর অন্যতম প্রধান খাবারও বটে। কর্মব্যস্ত মানুষের পক্ষে বাড়িতে পিঠা তৈরির সময় বের করা কঠিন। এসব মানুষের জন্য শীতের পিঠা খাওয়ার উপযুক্ত স্থান পথের ধারের দোকান।
একুশে সংবাদ/স ক
আপনার মতামত লিখুন :