AB Bank
  • ঢাকা
  • বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

দখল-দূষণে নিখোঁজ হতে চলেছে শ্রীপুরের লবণদহ সাগর


Ekushey Sangbad
একুশে সংবাদ ডেস্ক
০৪:১০ পিএম, ২৬ জানুয়ারি, ২০২১

দখল-দূষণে নিখোঁজ হতে চলেছে শ্রীপুরের লবণদহ সাগর

জনশ্রুতি আছে লবলং সাগর হিসেবে।একসময় এ নদ বা সাগর দিয়ে চলত পালতোলা নৌকা, শোনা যেত মাঝির আকুল করা গান। নদটি গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার দক্ষিণ সীমাস্তঘেঁষা ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার ক্ষীরু নদীর সংযোগস্থল থেকে উৎপত্তি হয়ে আঁকাবাঁকা দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে মীর্জাপুরের কাছে তুরাগ নদে গিয়ে মিশেছে। 

একসময় একে দেখে মনে হতো, জলে টইটম্বুর এক রাক্ষস! আর সেই রাক্ষসরূপী নদ এখন চরম অস্তিত্ব সংকটে লবণদহ খাল। হারিয়ে ফেলেছে তার নদী চরিত্র। এখন কেউ বলে লবলং খাল আবার কেউ বলে লবলং নালা। লবণদহ দখল ও ভরাট করে নদের ওপরে বা গতিপথ পরিবর্তন করে গড়ে উঠেছে শত শত কলকারখানা।

এই খালকে কেন্দ্র করে এলাকার কৃষিনির্ভর অর্থনীতি গড়ে উঠেছিল। নব্বই দশকে শ্রীপুরে শিল্প কারখানা বিস্থৃত হতে শুরু করলে তখন থেকে খাল দূষণ শুরু হয়। বর্তমানে এই খালের শ্রীপুর অংশে প্রায় ৩০ কিলোমিটার জুড়ে চলছে দখল-দূষণ। ফলে এক সময়ের খরস্রোতা এই খাল এখন মৃতপ্রায়। শুধু লবণদহ নয়, দূষণ-দখলে একই অবস্থা শ্রীপুরের হল— ধাউর, টেংরার খাল, কাটার খাল, সেরার খাল, বৈরাগীরচালার খাল, তরুণের খাল ও সালদহ খাল। 

সরকারি এসব খাল দখল-দূষণে কোথাও কৃষক, কোথাও প্রভাবশালী ও শিল্প-কারখানার মালিকরা জড়িয়ে পড়ছেন। জানা গেছে, শুধু দখল করেই থেমে নেই তারা। ইচ্ছামত বিভিন্ন জায়গায় খালের গতিপথও পরিবর্তন করছেন। 

সরেজমিন দেখা যায়, শ্রীপুর পৌর এলাকার একটি কারখানা কর্তৃপক্ষ লবণদহ খালের কেওয়া মৌজার প্রায় আধা কিলোমিটার অংশে দখলকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আর বর্জ্য অপসারণ তো চলছেই। কয়েকটি জায়গায় খালের গতিপথেরও পরিবর্তন আনা হয়েছে। দখলের বিষয়টি অস্বীকার করে ওই কারখানার ব্যবস্থাপক জানান, খালের দুই পাশের জমি তাদের। নকশা অনুযায়ী খালের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিয়েই আমরা সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেছি। 

এ ছাড়া লবণদহ খালের মাওনা ইউনিয়নের মাওনা টু ফলবাড়িয় সংযোগ সড়কের দুই পাশে গ্রামীন ফোন কোম্পানী ও ক্রাউন করাখনা এবং গাজীপুর ইউনিয়নের ধনুয়া অংশের নয়নপুর টু মেডিকেল মোড় সংযোগ সড়ক সংল্গন্ন সেলবু কারখানাসহ কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান দখল চেষ্টায় রয়েছে। তেলিহাটি ইউনিয়নের অংশে দখলে অস্তিত্ব হারিয়েছে ধাউরের খাল। শ্রীপুর পৌর এলাকার একমাত্র বৈরাগীরচালা খালটি শিল্পবর্জ্য ও দখলে সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ওই খালের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি অংশে কয়েক মাস ধরে বর্জ্য ফেলায় পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে পড়ছে। গোসিঙ্গা ও রাজাবাড়ি ইউনিয়নের তরুণের খালটির বিভিন্ন অংশ দখল-দূষণে এখন মৃত! অধিকাংশ জায়গায় খাল ভরাট করে কৃষি জমিতে পরিণত করেছেন স্থানীয়রা। 

লবণদহ খালসহ উপজেলার বেশির ভাগ খাল দখলে সংকুচিত হয়ে নিষ্কাশনের পথরোধ হওয়ায় জলাবদ্ধতার কবলে রয়েছে এলাকার হাজার হাজার লোক। চকপাড়ার আবু সাঈদ জানান, লবণদহ খালে এক সময় দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ পাওয়া যেত। আমরা এ খালের পানি দিয়েই চাষাবাদ করতাম। এখন খালে কোন জলজ প্রাণী খুঁজে পাওয়া যায় না। 

বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজিবী এডভোকেট হারুন অর রশিদ ফরিদ জানান,শ্রীপুর উপজেলাধীন ঐতিহ্যবাহী লবনদহ নদীটির পাশে ছোট বড় শিল্প কারখানা গড়ে তুলে নদীটি দখল করে নেয় এবং নদীর পানি দূষিত করে যার ফলে কৃষি জমিতে কোন ফসল উৎপাদন হয় না। ব্যপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষকরা,এবং ভিষণ ভাবে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এমতাবস্থায় নদী রক্ষা ও খালের সীমানা নির্ধরণ ও পরিবেশ দূষণরোধ কল্পে প্রয়েজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিশেষ ভাবে অনুরোধ করছি। 


নদী রক্ষা ও খালের সীমানা নির্ধরণ ও পরিবেশ দূষণরোধ করার জন্য বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়েছে। আমার নিম্নস্বাক্ষরকৃত আবেদনের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে বিষয়টি ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন বোর্ড সচিবালয় দাখিল করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। 

পরিবেশ অধিদফতর গাজীপুর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আব্দুস ছালাম জানান, বিভিন্ন সময় খাল, বিল ও নদী দখল-দূষণের অভিযোগে কারখানায় অভিযান চালিয়ে ক্ষতিপূরণ বা জরিমানা করা হয়েছে। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত আছে। গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম জানান, খালগুলোর তালিকা তৈরি করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে তা দখলমুক্ত করে খননের মাধ্যমে পানি প্রবাহ নিশ্চিত এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


একুশে সংবাদ/ টি.আই/এস

Link copied!