আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা ও প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে মানসিক চাপ একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ শুধু মনের উপর নয়, শরীরের উপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলে। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ, হতাশা, আত্মবিশ্বাসের অভাব ও মানসিক চাপের মতো সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের মানসিক সুস্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন করতে সাজেদা ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ফিন্যান্স বিভাগে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সেমিনার "Let`s talk about mental health" অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানটির সম্পন্ন করতে অন্যতম সহযোগিতায় ছিলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ফিন্যান্স ক্লাব।
আজ সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের ৫০৪ নম্বর কক্ষে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সেমিনারটিতে ২২০ জনের অধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে বলে জানা যায়।
সেমিনারটি শুরু হয়েছে ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. বায়েজিদ আলীর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। বক্তব্যে তিনি বলেন "এই ওয়ার্কশপের অংশ হতে পেরে আমি আনন্দিত। সাজেদা ফাউন্ডেশনের আজকের আলোচনা থেকে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে বলে আশা করি।"
উক্ত সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. মোঃ ওমর ফারুক, ছাত্র উপদেষ্টা শেখ আলমগীর হোসেন, এমবিএ প্রফেশনাল প্রধান অধ্যাপক ড. নাফিসা রওনক, সহকারী অধ্যাপক মুক্তা রানী সরকার, সহযোগী অধ্যাপক আয়েশা আক্তার, সাজেদা ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধিবৃন্দ।
স্বাগত বক্তব্যে ফিন্যান্স বিভাগের ছাত্র উপদেষ্টা শেখ আলমগীর হোসেন বলেন, "আমরা সবাই কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় জর্জরিত। আমাদের যে মানসিক সমস্যা আছে তা আমরা উপলব্ধি করতে পারি না। বিশ্বে যত মানুষ আত্মহত্যা করে তাদের অনেকেই আত্মহত্যা করে শুধুমাত্র তার কথা অন্য মানুষদের সাথে শেয়ার করতে না পারার কারণে। অনেক সময় শিক্ষার্থীরা তাদের ব্যক্তিগত কথা শিক্ষক বা সহপাঠীর কাছে শেয়ার করতে ভয় পায়। সেই কথা চিন্তা করে মূলত সাজেদা ফাউন্ডেশন কে এই কর্মশালায় আমন্ত্রণ জানানো হয়। যাতে শিক্ষার্থীরা সরাসরি মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং থেরাপিস্টদের থেকে তাদের অভিজ্ঞতা শুনে উপকৃত হতে পারে।"
তিনি আরো বলেন, "আপনাদেরকে একটা হেল্পলাইন নাম্বার দেওয়া হয়েছে। আপনাদের প্রাইভেসি যথাযথভাবে বজায় থাকবে। দয়া করে নিজেদের সমস্যা মনের ভেতর জমিয়ে রাখবেন না। যেকোনো মানসিক সমস্যা হলে এখানে ফোন দিবেন। তাছাড়াও বিভাগের যে কোনো সমস্যায় ছাত্র উপদেষ্টাদের সাথে যোগাযোগ করার কথা ব্যক্ত করেন তিনি।"
উক্ত সেমিনারের মূল লক্ষ্য ছিল শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা, উদ্বেগ ও হতাশা মোকাবিলার কৌশল শেখানো এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রচলিত নেতিবাচক ধারণা দূর করা। বক্তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের মাঝে মানসিক চাপ ও উদ্বেগের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ইন্টারেকটিভ সেশনে শিক্ষার্থীরা সরাসরি প্রশ্ন করার সুযোগ পান এবং বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণ করেন।
সেমিনার নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য জানান।
ফিন্যান্স বিভাগের ১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী মারিয়া ইসলাম মীম বলেন, "এমন অনেকেই আছে যাদেরকে দেখে স্বাভাবিক, হাসিখুশি মনে হলেও তারা ভিতর থেকে তারা কিছু নিয়ে ডিপ্রেসড থাকে, জীবন নিয়ে হয়তো অনেক অভিযোগ, যেটা কাউকে বলতেও পারছিলো না, কি করা উচিত সেটাও বুঝতেছিলো না। কিন্তু এরকম একটা সেমিনারে এটা ওইরকম মানুষদের কাছে একটা রিমাইন্ডার হিসাবে আসছে যে এরকম অনেকের জীবনেই আছে, এটা কোপ আপ করে জীবনে সাকসেস হতে হবে। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে খুব বেশি সাহায্যের প্রয়োজন হলে নিজের গোপনীয়তা রক্ষা করে সে চাইলে এমন একটা ফাউন্ডেশন থেকেও হেল্প পাবে, এটা তার একটা ভরসার জায়গা হতে পারে। ধন্যবাদ সাজেদা ফাউন্ডেশনকে এই সেমিনার আয়োজন করার জন্য।"
ফিন্যান্স বিভাগের ১৮ ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী কেয়ারুল ইসলাম বলেন, "আজকের সেমিনারে আমার কাছে কিছু বিষয় খুব ভালো লেগেছে যেমন, আমরা আগে ভাবতাম মানসিক সমস্যা বলতে শুধুমাত্র পাগল বোঝায়। কিন্তু ব্যাপারটা একদমই এমন নয়। বরং সমাজের প্রতিটি মানুষ ই কোন না কোন ভাবে ভীষণ ডিপ্রেশনে ভুগে এটাও মানসিক এক প্রকার মানসিক অস্থিরতা। আজকে সেমিনারে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, আমাদের শরীরের রোগ হলে যেভাবে যত্ন নেই সেভাবে মনেরও অসুস্থতা আছে এবং মনের যত্ন নেয়া প্রয়োজন। এবং কী কী কারণে একজন মানুষ আত্মহত্যার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নেয় এবং কীভাবে তাদের মানসিক চাপ কমানো যায়। সেই সাথে আমরা মেডিটেশন ব্যায়ামের মাধ্যমে আমাদের মানসিক অস্থিরতা কিছুটা কমানোর উপায় পেয়েছি। আজকের সেমিনারের সময়টা অল্প হলেও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ কিছু শিখেছি। কারণ আমাদের সমাজ শুধু শরীরের স্বাস্থ্য নিয়েই কথা বলে অথচ মনেরও সঠিক এবং ভালো দিকনির্দেশনার প্রয়োজন। এই সেমিনার আয়োজন করার জন্য সাজেদা ফাউন্ডেশন ও জবি ফিন্যান্স ক্লাবকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।``
একুশে সংবাদ//জবি.প্র//এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :