ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) চলমান না থাকার বিষয়টিকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
শনিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের পথযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের শতবর্ষের মিলনমেলা উপলক্ষে এ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমি ৯ বছর ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ ছিলাম। তখন দেশে সামরিক শাসন চলছিল। তখনও কিন্তু ছাত্র সংসদ ছিল। তারপর যখন দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এলো, তখন থেকে আশ্চর্যজনকভাবে ছাত্র সংসদের কাজ থেমে গেল, নির্বাচন থেমে গেল।
তিনি বলেন, ছাত্র সংসদের নির্বাচন ছিল উৎসবমুখর। মেধাবী ছাত্ররা সেখান থেকে বের হয়ে আসত, মেধাহীন ছাত্ররা কখনো নির্বাচিত হতে পারত না। তাদের গান, বিতর্ক, নাটক কিংবা খেলাধুলা করতে হতো। চৌকস ছেলেরাই নেতৃত্বে আসত। সেখান থেকে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব উঠে আসত। সেই ডাকসু চলমান না থাকাটা দুঃখের।
তিনি আরও বলেন, ১৯৫৩ সালে আমি সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্র সংসদের সদস্য ছিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদে অংশগ্রহণের চার বছরের অভিজ্ঞতা আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের। আমি কেবল ক্লাসরুমে শিখিনি, পাঠাগারে শিখিনি, শিখেছি হল সংসদের বিতর্ক, নাটক ও প্রকাশনা থেকেও।
অতীত ইতিহাস নিয়ে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু শিক্ষার দিকে অগ্রসর ছিল তা নয়, সাংস্কৃতিক দিক থেকেও অগ্রসর ছিল। সংস্কৃতি ও শিক্ষা পরস্পরের পরিপূরক ছিল। শিক্ষা সংস্কৃতিকে সাহায্য করতো, সংস্কৃতি শিক্ষাকে সাহায্য করতো।
তিনি বলেন, আমাদের আবাসিক হলগুলো সাংস্কৃতিক কর্মে মুখর ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সামাজিকতা শিখিয়েছে, সহমর্মিতা শিখিয়েছে, আর্তমানবতার জন্য কাঁদতে শিখিয়েছে। একাত্তরে সালে আমরা দেখেছি এ বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে পাকিস্তানকে তাড়িয়েছিল।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, দেশ থেকে মেধা পাচার হয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতার পরে যে তরুণ শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছিলেন, তারা অনেকেই বিদেশে চলে গেছেন আর ফিরে আসেননি। মেধাবীরা যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করতে পারে এবং দেশে মেধার বিকাশ ঘটানোর পরিবেশ যাতে তৈরি হয়, সে কাজে মনোযোগী হওয়া অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের একটি বড় কর্তব্য বলে আমি মনে করি।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শুধু অবকাঠামো উন্নয়ন নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত উৎকর্ষ যাতে হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অর্থাৎ গবেষণা, প্রকাশনা ও অনুবাদ এই তিন কাজকে উৎসাহিত করতে হবে। কেবল গবেষণা নয় গবেষণাকে হতে হবে সৃজনশীল, উপকারী। তবে খুব বেশি করে দরকার হচ্ছে অনুবাদ।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, লেখক ও রাজনীতিবিদ ইনাম আহমদ চৌধুরী, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. হামিদা আক্তার বেগম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির, সাবেক সংসদ সদস্য শামসুজ্জামান দুদু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. রহমত উল্লাহ প্রমুখ।
একুশে সংবাদ/এসএস
আপনার মতামত লিখুন :