চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ চলছে
একুশে সংবাদ : আগামী মাসেই শুরু হচ্ছে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ। বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ও নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ‘সদরঘাট টু বাকলিয়ার চর ড্রেজিং’ প্রকল্পের আওতায় এ খনন কাজ করবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ তথ্য জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল। উল্লেখ্য, তিন বছর ১০ মাস আগে কর্ণফুলী নদীতে সর্বশেষ ক্যাপিটাল ড্রেজিং হয়েছিল।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, কর্ণফুলী নদীর নাব্য বাড়াতে এই ড্রেজিং প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫৮ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে গত বছর বুয়েট দ্বারা সমীক্ষা চালিয়েছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। সদরঘাট থেকে চর বাকলিয়া পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার এলাকায় নদীর ৪২ লাখ ঘনমিটার বালিসহ বর্জ্য অপসারণ করা হবে এ প্রকল্পের আওতায়। ড্রেজিং সম্পন্ন হলে এই অংশে চার থেকে পাঁচ ফুট ড্রাফটের জাহাজ চলাচল করতে পারবে।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে বন্দরের এক জরিপে ড্রেজিংয়ের জন্য নির্ধারিত স্থানে ৩৩ দশমিক ৮৮ লাখ ঘনমিটার মাটি জমার প্রমাণ পাওয়া যায়। বর্তমানে এর পরিমাণ আরও অনেক বেড়ে গেছে। আগের প্রকল্পের একটা মূল সমস্যা ছিল নদীর সঙ্গে যুক্ত খালের মোহনায় মিউনিসিপ্যাল বর্জ্য জমে থাকার বিষয়টি বিবেচনায় না নেয়া। এর ফলে যেখানে পলিথিন জমে ছিল সেখানে কাজ করতে গিয়ে ড্রেজার আটকে যাচ্ছিল। তাছাড়া বৃষ্টি হলেই লাখ লাখ টন পলিথিন এসে জমা হয়। তাই নতুন প্রকল্পে সেসব বিষয়কে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার নগর ভবনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাথে সেবা প্রদানকারী সংস্থা ও সরকারি দপ্তরসমূহের তৃতীয় সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল ‘কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং’ প্রসঙ্গে বলেন, সামনের মাস থেকে আমরা ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু করছি। এটা সত্যিই একটি সুখবর। আপনারা জানেন গত চার বছর ধরে কর্ণফুলীর ড্রেজিং ছিল ‘সাবজেক্টিভ ম্যাটার (আলোচনার কেন্দ্রে)। আইনি জটিলতায় এতদিন খনন কাজ করা যায়নি। ড্রেজিংয়ের যে স্থগিতাদেশ ছিল তা উঠে গেছে। এখন ড্রেজিংয়ে আর কোন বাধা নেই। সরকার আমাদের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন। নৌবাহিনীর মাধ্যমে, তাদের ‘সুপারভিশনে (তত্ত্বাবধানে) বিদেশি কোম্পানি দিয়ে কাজটি করছি। সদরঘাট থেকে বাকলিয়া চর পর্যন্ত যে জায়গাটা ‘সিল্ট্রেশন’ হয়ে আছে তার পুরোটাই ‘ক্লিয়ার’ হয়ে যাবে। ২৫০ কোটি টাকার প্রজেক্ট। কাজ শুরুর পর চার বছরের মধ্যে শেষ করতে পারবো।’
এর আগে গত ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দরের উপদেষ্টা কমিটির ১১ তম সভা। সভায় জানানো হয়েছিল, ‘আরবিট্রেশন কোর্টে মামলা চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে সদরঘাট থেকে বাকলিয়া চর পর্যন্ত ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা বৃদ্ধি কার্যক্রমে কোন আইনগত বাধা নেই। তাই বুয়েটের মাধ্যমে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি সম্পন্ন করে ড্রেজিং ও তিন বছরের সংরক্ষণ ড্রেজিংয়ের প্রস্তাবনা ডিপিপি আকারে প্রয়োজনীয় অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য ডিপিএম পদ্ধতিতে করা হবে’।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ৫ জুলাই ‘ক্যাপিটাল ড্রেজিং অ্যান্ড এবং ব্যাংক প্রটেকশন’ নামে ২২৯ কোটি ৫৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ যা ২০১৩ সালের আগস্টে বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় ড্রেজিংয়ের কাজ পায় মালয়েশিয়ার মেরিটাইম অ্যান্ড ড্রেজিং করপোরেশন।
ড্রেজিংয়ের ওই প্রকল্পের আওতায়, বন্দরের দুই কিলোমিটার উজানে সদরঘাট জেটির ১০০ মিটার ভাটি থেকে তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর ৫০০ মিটার উজান পর্যন্ত অংশে নদীর নাব্য ফেরাতে ৩৬ লাখ ঘনমিটার বালি/মাটি ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে অপসারণের কথা ছিল। একই প্রকল্পে দুই হাজার ৬১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের তীর নির্মাণ, মেরিন ড্রাইভ তৈরি এবং সদরঘাট এলাকায় ৪০০ মিটার লাইটারেজ জেটি নির্মাণের কথা ছিল। ড্রেজিং শেষ হলে সংশ্লিষ্ট নদী এলাকার গভীরতা চার মিটার এবং নদীর সঙ্গে যুক্ত মূল দুই খাল রাজখালী ও চাক্তাইয়ের সম্মুখভাগের গভীরতা আরও বাড়ার কথা ছিল।
প্রকল্পের কাজ পাওয়া মালয়েশিয়ান প্রতিষ্ঠানটির সাথে চুক্তি ছিল, কাজ শুরুর ৬শ দিনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে। সে হিসেবে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় চুক্তি বাতিল করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। চুক্তি বাতিল করায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি আদালতে মামলা করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ড্রেজিংয়ের উপর স্থগিতাদেশ দেয়। গত বছর সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে আদালত। মূলত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের পর কর্ণফুলীর ড্রেজিংয়ে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ।
একুশে সংবাদ // পপি // রাজি // ২৪.০৫.১৭ 6:45
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :