ব্রহ্মপুত্রে খাঁচায় মৎস্য চাষ বাড়ছে
একুশে সংবাদ : খরস্রোতা ব্রহ্মপুত্র নদে খাঁচায় মৎস্য চাষ করে বেকারত্ব ঘুচিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছে বেকার যুবক বেলাল হোসেন (৪৫)। অপরদিকে এই নদীতে খাঁচায় মৎস্য চাষের উজ্জল সম্ভাবনার দ্বারও তিনি উন্মোচন করেছেন। যা দেখে এ এলাকার বেকার যুবকদের পাশাপাশি জেলেরাও উৎসাহিত হচ্ছে খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষে।
কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউিনিয়নের সড়কটারী গ্রামের যুবক বেলাল হোসেন। চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসের একজন ফটোস্ট্যাট অপারেটর। সামান্য বেতন দিয়ে আগে তার সংসার ভালমতো চলতো না।
বেলাল হোসেন জানান, কাজের ফাঁকে ফাঁকে মৎস্য অফিসার বদরুজ্জামান রানার কাছে গিয়ে পরামর্শ নিতেন মাছ চাষের নানা কৌশল নিয়ে। তিনি বেলালকে ব্রহ্মপুত্র নদের পরিষ্কার পানিতে খাঁচায় মাছ চাষের সম্ভাবনার কথা জানালেন। অনুপ্রাণিত হয়ে বুকে সাহস নিয়ে নেমে পড়লেন কাজে। নেটের জাল, বাঁশ, লোহার পাইপ ও তেলের ড্রাম দিয়ে প্রথমে তিনটি খাঁচা তৈরি করলেন বেলাল হোসেন। মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছের পোনা সংগ্রহ করে খাঁচায় ছেড়ে দিলেন তিনি।
প্রথম অবস্থায় খাঁচা তৈরি করতে তার খাঁচা প্রতি পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা করে খরচ পড়লো। পাঁচ টাকা পিস দরে মাছের পোনা কিনে এক একটি খাঁচায় এক হাজার পোনা ছাড়লেন। মাছের খাদ্য ও পরিচর্চা নিজেই করতে শুরু করলেন। মাত্র তিন মাস পরে প্রতিটি মাছ বেড়ে দেড় কেজি পরিমাণ হলে তিনি বিক্রি করে লাভের মুখ দেখলেন। সামান্য পুঁজি নিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে তিনি স্বাবলম্বী হয়েছেন।
তিনি আরো জানান, গত জানুয়ারি মাসে তিনি ১২ ফুট বাই ২০ ফুট সাইজের এবং ১৫ ফুট উচ্চতার ৪০টি খাঁচা বানিয়ে খরস্রোতা ব্রহ্মপুত্র নদীর কুল ঘেসে তার মৎস্য প্রকল্প চালু করলেন। এবারে তার ৪০টি খাঁচায় মাছের সংখ্যা ২০ হাজার। তিন মাসে তার খাদ্য, জনবল ও নানা আনুষঙ্গিক ব্যয় মিলে মোট ব্যয় দাঁড়াবে ৯ লাখ টাকা। তিন মাস পরে তিনি ১৫ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করবেন মর্মে আশা প্রকাশ করছেন। এতে তার লাভ হবে প্রায় ছয় লাখ টাকা। গত পাঁচ বছর ধরে বেলাল হোসেন এই ব্যবসা করে আর্থিকভাবে অনেক স্বাবলম্বী হয়েছেন।
ব্রহ্মপুত্র নদের মিষ্টি ও পরিষ্কার জলে মাছ চাষ করে বেলাল হোসেন এখন সফল মৎস্য চাষী। তিনি শিক্ষিত-অশিক্ষিত বেকার যুবকদের নিকট উজ্জল সম্ভাবনার দার উম্মোচন করেছেন। ভবিষ্যতে একশটি খাঁচা স্থাপনের ইচ্ছার কথা জানালেন বেলাল।
এ ব্যাপারে চিলমারী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত মৎস্য অফিসার বদরুজ্জামান রানা বলেন, আইএপিপি প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে জোড়গাছ এলাকায় ২০জন জেলের একটি দল খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করেছে। বিভিন্ন এলাকার জেলে ও বেকার যুবকরা বেলাল হোসেনের প্রকল্পটি দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছে। আমারাও তাদেরকে কারিগরি ও লজিস্টিক সাপোর্ট দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
একুশে সংবাদ // পপি // বিবা // ২৭.০২.১৭
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :