AB Bank
ঢাকা মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

কৌতুক অভিনেতাদের হাসি কান্না


Ekushey Sangbad

০১:৪৯ পিএম, অক্টোবর ২৭, ২০১৪
কৌতুক অভিনেতাদের হাসি কান্না

একুশে সংবাদ : বিশ্বখ্যাত অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিন বলেছিলেন- ‘অভিনয়ের মাধ্যমে কাউকে কাঁদানোর চেয়ে হাসানো বেশি কঠিন।’ কথাটি মিথ্যে বলেননি। কারণ নিছক হাসি নয়, মানুষকে প্রকৃত আনন্দে আনন্দিত করা কঠিন বটে। শিল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা চলচ্চিত্র। একটি চলচ্চিত্র দর্শকের কাছে বিভিন্ন কারণে ‘আনন্দময়’ হয়ে উঠতে পারে। কৌতুকাভিনেতারা সম্ভবত এখানে অনেক সময় নায়ক অথবা নায়িকার চেয়ে এগিয়ে থাকেন। কৌতুকাভিনেতাদের পর্দায় দেখে আমরা কত সহজেই না আনন্দ প্রকাশ করি। কিন্তু এই অভিনয় মোটেই সহজ নয়। আমরা গভীরে যেতে পারি না বলেই পর্দায় তাদের দেখে অমন খলখলিয়ে হেসে উঠি। কখনও সেই হাসির আড়ালে অব্যক্ত দুঃখ চাপা পরে যায়। আমরা এড়িয়ে যাই সেই হাসির অভিনয়ের আড়ালের মর্মকথা। দর্শককে এভাবে হাসাতে গিয়ে কৌতুকাভিনেতাদের যে কত করুণ-কঠিন-জটিল জীবনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় এ খবর কজনই বা রাখি? কৌতুকাভিনেতা টেলি সামাদকে দিয়েই শুরু করা যাক। তার মায়ের মৃত্যুর সময়ের ঘটনা। তত দিনে মায়ের আদুরে সামাদ ‘টেলি সামাদ’ হয়ে দর্শকের কাছে দারুণ জনপ্রিয়। তার মা মারা যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। টেলি সামাদ তখন সেখানেই ছিলেন। মাতৃ বিয়োগে তখন তিনি কাঁদছেন। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীও ছিল। তারা ভেবেই নিয়েছিল, এটাও টেলি সামাদের অভিনয়। তিনি সম্ভবত সবাইকে হাসানোর জন্য এমন কান্নার অভিনয় করছেন। তাই সবাই তাকে ‘টেলি, টেলি’ বলে ট্রিক্স করছিল। কেউ কেউ তার পেটে খোঁচা দিয়ে, কাতুকুতু দিয়ে মজাও করছিল। পাঠক টেলি সামাদের সে সময়ের মনের অবস্থাটা একবার ভাবুন। টেলি সামাদ এক টিভি অনুষ্ঠানে সবচেয়ে দুঃখের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে এ ঘটনার উল্লেখ করেছিলেন। ১৯৭৩ সালে তিনি ‘বৌ কার’ চলচ্চিত্র দিয়ে প্রথম দর্শকের সামনে আসেন। তখন তার নাম ছিল ‘সামাদ’। সিনেমার কাটতি বাড়ানো জন্য পরের চলচ্চিত্রেই রীতিমত গবেষণা করে তার নামের আগে ‘টেলি’ যোগ করা হয়। এতে অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে তার নামও মানুষকে কৌতুক যোগাবে এই ছিল আশা। আমি অনেকের কাছে জিজ্ঞাসা করে দেখেছি, ‘টেলি’ তাদের কাছে আঞ্চলিক শব্দ- ট্যালা, ট্যারা বা টিলিক শব্দের দ্যোতক হয়েই দাঁড়িয়েছে। সুতরাং নাম এবং অভিনয় উভয় দিক দিয়েই তিনি দর্শকের কাছে কৌতুকাভিনেতার স্বীকৃতি পান। আর এ কারণে ‘মন পাগলা’, ‘দিলদার আলী’ ও ‘ডাইনী বুড়ি’ সিনেমায় টেলি সামাদ নায়কের ভূমিকায় সিরিয়াস অভিনয় করেও দর্শকপ্রিয়তা পান নি। তার অভিনয় শৈলি কৌতুকাভিনেতার আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে। চলচ্চিত্রে তার আরো কিছু অবদান রেয়েছে। যেমন তিনি প্রায় অর্ধশত সিনেমায় গান লিখেছেন, প্লে ব্যাক করেছেন। সংগীত পরিচালনা করেছেন ‘মনপাগলা’ সিনেমায়। এক সময় সিনেমা প্রযোজনাও করেছেন তিনি। হতে চেয়েছিলেন চিত্রশিল্পী। এজন্য ঢাকা আর্ট কলেজে কোর্স করেছেন। অবসরে ছবিও আঁকেন। এই তথ্য অনেকে জানেই না। অথচ অনেক অভিনেতার ক্ষেত্রে দেখেছি, তার ভেতর এই সব প্রতিভার ছিটেফোঁটা আছে কিনা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তা বের করে আনার চেষ্টা হয়েছে। তার ক্ষেত্রে কেন হলো না? শুধুমাত্র কৌতুকাভিনেতা বলেই কি তার এই গুণগুলো সামনে আনা হয় নি। এমন কি অনেক অভিনেতার ‘শততম চলচ্চিত্র’ বেশ ঘটা করে উদযাপন করা হলেও টেলি সামাদের ক্ষেত্রে তা ঘটেনি। অথচ তিনি সাতশ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। পাঠক ভেবে দেখুন, সিনেমা জগতে এসে অনেকেরই নাম বদলে যায়। নায়ক, নায়িকাদের জন্য কতো শৈল্পিক-আধুনিক নাম খোঁজা হয়, কিন্তু কৌতুকাভিনেতার ক্ষেত্রে চেষ্টা করা হয় নাম কতটা হাস্যকর করে তোলা যায় সেদিকে। আমাদের অনেক দর্শকের দিল রক্ষা করে চলা দিলদারের ক্ষেত্রেও এ কথা বলা যায়। দিলদার তার সময় এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন যে, সিনেমার কাহিনির আঙ্গিক দূর্বলতা থাকলেও তার অভিনয় দক্ষতা সে ঘাটতি অনেকটা পুষিয়ে দিত। শুধু দিলদার আছে বলে অনেকে সিনেমা দেখতে গেছেন। তবে তার অভিনয় শৈলি দর্শক কতটা দেখেছেন এ প্রশ্ন থেকেই যায়। নইলে নায়ক চরিত্রে অভিনীত দিলদারের ‘আব্দুল্লাহ’ সিনেমাটি যথেষ্ট কদর পেত। জানা যায় ব্যক্তি জীবনেও দিলদার ছিলেন অকৃতদার। অন্য শিল্পীরা যেখানে নিজেদের প্রাপ্য ও লভ্যাংশ ষোল আনা আদায় করে নিতে ভুলতেন না সেখানে দিলদার উজ্জ্বল ব্যতিক্রম ছিলেন। যে কারণে প্রায়ই তাকে অর্থ কষ্টে ভুগতে হয়েছে। মৃত্যুর আগে এই অর্থ কষ্ট বেড়েছিল। তার মৃত্যুর পর প্রাপ্য পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত হওয়া নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। অথচ তাকে নিয়ে বাণিজ্য করতে কেউ ছাড়েনি। কি আশ্চর্য! সবাই আমরা তার কথা ভুলেই গেলাম। এখন যারা অভিনয় করছেন তারা যতটা না কৌতুকাভিনেতা তার চেয়ে বেশি ‘ভাঁড়’। এই ভাঁড় ও কৌতুকের মধ্যে পার্থক্য করেছিলেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। সামাজ-রাষ্ট্র ও জীবনে চাপা যে কৌতুক, তিনি তা ফুটিয়ে তুলেছিলেন। এমনকি তিনি মঞ্চ-চলচ্চিত্র-শ্রুতিনাট্যে হাস্য কৌতুকের সংজ্ঞাটাই পাল্টে দিয়েছিলেন। দেব-দেবীদের নিয়েও কৌতুক করতে তিনি ছাড়েন নি। নাটক, যাত্রা, সিনেমা, বেতার- সর্বক্ষেত্রেই তার সাবলীলতা ছিল। অভিনয় ছিল তার কাছে ব্রত। গভীর আন্তরিকতা থেকে নিজেই গড়েছিলেন ‘সুনীল নাট্য কোম্পানি’ ও ‘মুক্তমঞ্চ’ নামক যথাক্রমে নাটক ও যাত্রা দল। এজন্য তার প্রাপ্য সম্মানটুকু কি আমরা তাকে দিয়েছি? ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় শিক্ষাদীক্ষায় ছিলেন অত্যান্ত মেধাবী। ব্রিটিশরাজের উচ্চপদস্ত কর্মচারী তার পরিবারের অনেকে ছিলেন। পারিবারিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তিনি যুক্ত ছিলেন বিপ্লবী রাজনীতির সঙ্গে। অগ্নিযুগের বিপ্লবী দল ‘অনুশীলন’- এ যুক্ত থাকা ও বিভিন্ন আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কারণে তাকে বাংলাদেশ ছাড়তে হয়। কলকাতা গিয়েও তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন ‘আমি ঢাকার ভানু’ হিসেবে। ধান বানতে শিবের গীত মনে হলেও এতো সব বললাম এই জন্য যে, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেলায়ও এসব খোঁজার প্রয়াস কেউ করেন নি। এমনি কি তার যে রাজনৈতিক দর্শন, কমিউনিজম, এটাও কেউ সামনে আনতে চান না। পাছে কৌতুক অভিনেতা বলে তাও হালকা হয়ে যায়। অথচ দেখুন, এত কিছুর মধ্যেও তার আসল নাম, ‘সাম্যময় বন্দ্যোপাধ্যায়’ রীতিমত উবে গেছে। কৌতুকাভিনেতার সবচেয়ে বড় খেসারত তিনিই দিয়েছেন। তাও শ্যুটিং স্পটে। তখন সিনেমার শ্যুটিং চলছিল। তিনি অভিনয় করছেন। এরই মধ্যে সেটের পেছনে আগুন ধরে গেছে। কেউ খেয়াল করেননি। খেয়াল করেননি তার শোর্টেও আগুন ধরেছে। তিনি তখন বাঁচার জন্য ছটফট করছেন। সবাই ধরেই নিয়েছে যে, তখন তিনি অভিনয় করছেন। তাই তৎক্ষণাৎ কেউ এগিয়ে আসেননি। কিন্তু যখন সেটের সবাই বুঝতে পারলেন এটা অভিনয় নয়, বাঁচার আকুতি- ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। যতদূর জানা যায়, এই অগ্নিদগ্ধ হয়েই তিনি মারা গিয়েছেন! এবার আমরা ভাঁড় ও কৌতুক প্রসঙ্গে আসি। সাম্প্রতিক সময়ে ঢালিউড-টালিউড-বলিউড এমন কি হলিউডেও কৌতুকের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। তাই খোদ চলচ্চিত্রের নামই হয়ে যাচ্ছে ‘কমেডি সিনেমা’। এখানে চলচ্চিত্রের নায়কই বড় ‘ভাঁড়’। ‘ভাঁড়’ বললাম এই জন্য যে, ভাঁড় ও কৌতুক অনেকেই এক করে ফেলেন। এই গোলক ধাঁধা ভাঙতে না পারলে চলচ্চিত্রের সুক্ষ্ম রস আস্বাদন করা যাবে না। সার্কাসেও ভাঁড় থাকে, নিছক হাসায়। কিন্তু কৌতুক নিছক হাসায় না, ভাবায়। এর একটা দর্শনগত দিকও থাকে। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৭-১০-০১৪:
Link copied!