ভারতের মেঘালয়
একুশে সংবাদ: আঁকা-বাঁকা, উচু-নিচু পথ পাড়ি দিতে দিতে মনে হবে, আপনি পৌঁছে যাচ্ছেন মেঘেদের বাড়ি। আবার কোনো কোনো মেঘে ঢাকা পথ আপনাকে জানাবে উষ্ণ অভিনন্দন।পথ চলতে চলতেই কোনো না কোনো পাহাড়ের ভেতর থেকে শুনতে পাওয়া যায় ঝরনার শব্দ।
মেঘ পাহাড় ও ঝর্ণার দেশ উত্তর পূর্ব ভারতের মেঘালয় রাজ্য। চারদিকে উঁচু উঁচু সব পাহাড়, হাত বাড়ালেই মেঘের স্পর্শ, পাহাড়ের বুক চিড়ে নেমে আসা অসংখ্য ঝর্ণা, স্বচ্ছ পানির নদী, লেক ও ছবির মত সুন্দর গ্রাম, এই সব কিছু মিলেমিশে প্রকৃতির অনাবিল সৌন্দর্য নিয়ে মেঘালয় হাতছানি ভ্রমণ প্রেমীদের।মেঘালয়ের রাজধানী শিলং কে বলা হয় প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড। বাংলাদেশের সিলেট সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থান ও কম খরচে সহজেই মেঘালয়ের জনপ্রিয় স্থান শিলং, চেরাপুঞ্জি ও ডাওকির বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে বেড়ানো যায় বলে পাহাড় ও ঝর্না প্রেমীদের কাছে পছন্দের এক জায়গা এই মেঘালয়।
ভ্রমণের সময়:
পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী বৃষ্টি হয় মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে। তাই এখানকার উঁচু পাহাড়ের বুকে ঝর্নার শব্দ শুনবার জন্য বর্ষাকাল শ্রেষ্ঠ সময়। মে থেকে অক্টোবর সাধারণত এই জন্য পর্যটক এখানে বেশী আসে। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির ঠাণ্ডায় পাহাড়ের অন্য রুপ দেখা যায় কিন্তু তখন এখানে বেশ ঠাণ্ডা পরে। তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রী থেকে ১৫ ডিগ্রীর মধ্যে থাকে। পছন্দমতো সময় বুঝে শীত বা বর্ষা – যেকোন সময় ঘুরে আসতে পারেন মেঘালয়।
কিভাবে যাবেন মেঘালয়:
সড়কপথে মেঘালয় (শিলং) গেলে তুলনামুল কম খরচ হয়। এক্ষেত্রে শ্যামলী পরিবহন ভিসা ব্যবস্থা সহ সরাসরি ঢাকা থেকে শিলং যাবার ও আসবার সেবা দিয়ে থাকে। আরও সাশ্রয়ে বা নিজ ব্যবস্থায় যারা ভ্রমণ করতে চান তারা বাসে, প্লেনে বা ট্রেনে করে সিলেট পৌঁছে সেখান থেকে সিএনজি বা বাসে করে তামাবিল যাবেন। সেখানে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে ডাউকি থেকে ট্যাক্সি নিয়ে বা লোকাল গাড়ি করে সরাসরি শিলং যেতে পারেন।
কোথায় থাকবেন:
পর্যটকদের বিপুল পরিমাণ আনাগোনার জন্য মেঘালয়ের আনাচে কানাচে নানা মানের নানা দামের হোটেল গড়ে উঠেছে। পুলিশ বাজার নামক জায়গাটায় বিশেষ করে নানা ধরনের অসংখ্য হোটেল দেখা যায়। ফোর স্টার বা মোটামোটি ভালো মানের হোটেল শহরে একটিই আছে যার নাম হোটেল পোলো টাওয়ার্স। ব্যাকপ্যাকারস দের জন্য রয়েছে বেশ অনেকগুলো বাজেট হোটেল।
শিলং ক্লাব গেস্ট হাউস, পাইন সুইটস হোটেল, হোটেল নাইট ইন এদের মধ্যে অন্যতম। আল্পাইন কন্টিনেন্টাল হল হোটেল মাঝারি বাজেটের হোটেল। ৯০০ থেকে ১২০০ রুপির মধ্যে বাজেট হোস্টেল পাওয়া যায় যেখানে রুম শেয়ার করে গ্রুপ ট্রাভেলারসরা একসাথে থাকতে পারবেন। ১৫০০ রুপি থেকে ৪৫০০ রুপির মধ্যে হোটেল ইয়ালানা, বুল্ভারড, এবং দি ই সি হোটেলে রুম পাওয়া যাবে।
কোথায় খাবেন ও কি খাবেন:
শিলং এর রেস্তোরা গুলোতে শূকরের মাংস ও মুরগীর মাংস বেশী পাওয়া যায়। হিন্দুরাষ্ট্র হওয়ায় এখানে গরুর গোশত দেখা যায় না। তবে সবখানে প্রচুর মাছ আছে যা প্রচণ্ড উপাদেয়। পুলিশ বাজার জামে মসজিদের পাশে মুসলিম রেস্তোরা সাভেরাতে হালাল গরুর গোশ পাওয়া যায়। ভিন্ন কিছু বা উপজাতীয় খাবারের স্বাদ নিতে হলে চলে যেতে হবে সিসেম নামের রেস্তোরায়। শেফস মাল্টি কুজিন মোটামোটি ধরনের বাজেটের মধ্যে ভাল খাবার এর সেবা দেয়। শিলং শহরে ফাস্টফুড চেইন শপ কে এফ সি, ডমিনস, সাবওয়ে দেখতে পাওয়া যায়। আর যেকোনো রেস্টুরেন্টেই ১৮০ থেকে ২০০ রুপির ননভেজ বা ভেজ থালি পাওয়া যায় যা একজনের খাবার হিসাবে যথেষ্ট। এছাড়া নানারকম স্ট্রিটফুড যেমন মোমো ও থোকমার জন্যও শিলং প্রসিদ্ধ।
কেনাকাটা:
কেনাকাটার জন্যে সবচেয়ে ভালো জায়গা হলো শিলং এর পুলিশ বাজার। কেনাকাটা করতে হলে তাই পুলিশ বাজারের বিকল্প নেই। লোকাল খাবার যেমন কমলালেবুর মধু, দারুচিনি, চেরি ব্র্যান্ডি ইত্যাদি কিনতে হলে সোহরাবাজার নামের জায়গায় যেতে পারেন। এই স্থানটি চেরাপুঞ্জি যাবার পথে পরবে।
একুশে সংবাদ//ভ.গ.ন//৩১.১২.২০১৯
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :