AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ঘর নেই, খাদ্য নেই, মেঘ দেখলে ভয় হয়


Ekushey Sangbad

০৪:০১ পিএম, জুলাই ৮, ২০১৫
ঘর নেই, খাদ্য নেই, মেঘ দেখলে ভয় হয়

একুশে সংবাদ : ‘ঘর নেই। খাদ্য নেই। জিনিসপত্র কিনার জন্য টাকা নেই। বৃষ্টির মেঘ দেখলে ভয় হয়। বৃষ্টি পড়লে ছাউনি ঘরের ভিতরে ফোটা ফোটা পানি পড়ে। স্যাত স্যাতে মাটিতে কেঁচো মাটি ফুরে উপরে আসে। ঝড়ো বাতাস আসলে সব ভিজিয়ে দেয়’। এ সব বলতেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন রাঙামাটির নানিয়াচরের বগাছড়ির ১৪ মাইল এলাকার সুরিদাশ পাড়া গ্রামের শান্তি রাণী চাকমা (৪৭)।   শান্তি রাণীর মতো ঘরহারা সবার অবস্থা একই। পোড়া ঢেউটিন দিয়ে অস্থায়ী ছোট ছাউনি ঘর বানিয়ে কোন রকম দিন পার করছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।গত বছর ১৬ ডিসেম্বর সকালে সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তরা বগাছড়ি আদিবাসীদের ৩ গ্রামে ৬১টি ঘরে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয়। ঘর হারানো চলা দেবী চাকমা (৩০) বলেন, ঘটনার পর এলাকায় এসে সরকারি লোকেরা বলেছিল আমাদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে। ৬ মাস গেলেও তাদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়নি। ঘটনার পর মানুষজন থেকে পাওয়া ত্রাণ তিন মাস আগে শেষ হয়েছে। এখন খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি।     ৬ষ্ঠ শ্রেণী পড়ুয়া ছাত্র ক্লিনটন চাকমা বলেন, বই স্কুল পোশাক পেয়েছি। ঘর না থাকায় পড়াশুনা করতে অসুবিধা হচ্ছে। বই খাতা ভিজে নষ্ট হচ্ছে। পোশাক ভিজে যাওয়ায় মাঝে মধ্যে স্কুলে যেতে পারছি না। সুরিদাশ পাড়ার গ্রাম প্রধান রাম কার্বারী বলেন, সরকারিভাবে কোন ত্রাণ এখনও দেওয়া হয়নি। উদ্যোগও নেওয়া হয়নি। ঘটনার পর প্রশাসনের কাছে আশ্বাস পেয়েছি কার্ডের মাধ্যমে রেশন দেওয়া হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন রেশন দেওয়া হয়নি।     পজেলা প্রশাসনের তথ্যমতে ক্ষতিগ্রস্ত ৬১টি পরিবারকে ২২ ফুট দৈর্ঘ্য ১১ ফুট প্রস্থ করে একটি ঘর নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ঘর প্রতি ব্যয় ধরা হয় ৫৭ হাজার ২০ টাকা। ঘটনার পর প্রথম পর্যায়ে ১৫টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে ১০টি ঘর নির্মাণ করার পর বরাদ্দ না থাকায় বাকীগুলোর নির্মাণ কাজ বন্ধ আছে। সম্প্রতি সরেজমিনে ১৪ মাইলে গিয়ে দেখা যায়, সম্পূর্ণ হওয়া বাড়ির তালিকা ২৫টির মধ্যে কিছু বাড়ি শুধু খুঁটি ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টিতে ভিজে পচে নষ্ট হচ্ছে খুঁটিগুলো। পোড়া ঢেউটিন দিয়ে অস্থায়ী ছাউনি দেয়া ঘরে গাদাগাদি করে কোন রকম বসবাস করছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজন। 1436341138 সুরিদাশ পাড়ার চিক্কোপুদি চাকমা (৩১) বলেন, ঘটনার কিছুদিন পর তাদের পোড়া ভিটায় ১০টি খুঁটি দিয়ে ঘর বানানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। পরে আর কোন কাজ করা হয়নি। এখন সেভাবে পড়ে আছে। আমরা খুঁটি পেলেও অধিকাংশ পরিবার সেই খুঁটিও পায়নি।এদিকে যারা বাড়ি পেয়েছেন তারা নিম্নমানের কাজের অভিযোগ তুলেছেন। ঘর নেই, খাদ্য নেই, মেঘ দেখলে ভয় হয় ছায়ারাণী চাকমা (৩০) বলেন, ঢেউটিনগুলো শুধু নামমাত্র। বাতাস হলে বেড়ার ঢেউটিনগুলো বাঁকা হয়। ছাউনিগুলোরও একই অবস্থা। বাড়িটি খুব ছোট হওয়ায় পরিবারে লোকেরা সবাই থাকতে পারে না। ছাউনি ঘরে থাকতে হয়।   এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা বাবুল কান্তি চাকমা বলেন, যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা খুব অপ্রতুল। এগুলো দিয়ে একটি মান সম্মত ঘর হয় না। প্রতিটি ঘরে ছাউনিতে ৩ বান এবং বেড়ায় ৪ বান ঢেউটিন লাগে। ঢেউটিনগুলোর দাম নির্ধারিত যথাক্রমে বান প্রতি ৪ হাজার এবং ২ হাজার টাকার। কাঠের দাম কাঠ ভেদে ফুট প্রতি ৭-৮শ টাকা। একটি ঘরে কাঠ লাগে ৪৮ ফুট। ঘর প্রতি শ্রমিক মজুরি ৮ হাজার টাকা। পরিবহন খরচ আছে। প্রথমে যা বরাদ্দ পাওয়া গেছে সেগুলো দিয়ে কাজ করার পর বর্তমানে বরাদ্দ না থাকায় কাজ বন্ধ আছে।   নানিয়াচর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কোয়ালিটি চাকমা বলেন, এই বর্ষাকালে ক্ষতিগ্রস্তরা যে কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। তাদের জন্য জরুরী ভিত্তিতে সরকারি সহায়তা প্রয়োজন। নানিয়াচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু ইউসুফ বলেন, নতুন দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। তারা খুব কষ্টে আছে। ৬১টি ঘরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১৫টি এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ১০টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।     এগুলোর অগ্রগতি প্রতিবেদন পাওয়া গেলে বাকীগুলোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি যোগদানের আগে সরকারিভাবে তাদের কি সহায়তা দেওয়া হয়েছে তা আমার জানা নেই। ঘরগুলোতে খুব কম বাজেট ধরা হয়েছিল। তবে এটি ঠিক ক্ষতিগ্রস্তরা মানবেতর জীবন যাপন করছে।   বহন করতে হচ্ছে মামলার বোঝা:১৪ মাইল এলাকার ইউপি সদস্য আনন্দ চাকমা বলেন, ৬১টি ঘরে অগ্নিসংযোগ সংক্রান্ত আদিবাসীরা ৯টি মামলা করে। এসব ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। উল্টো ঘরহারা ১৯৭ জনের নামে এবং বহু অজ্ঞাতদের নামে পৃথক ৫টি মামলা করেছে সাহাবউদ্দিন, কামাল, মোজাবফর, নুর ইসলাম, বাদশা। মামলাগুলো তিনটি আনারস বাগান ক্ষতি এবং দুটি জায়গা বিরোধ সংক্রান্ত।   উভয় মামলার বিষয়ে নানিয়াচর থানার ওসি মাহবুবুল আলম বলেন, নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। যতটুকু জানি কিছু মামলা থানায়, কিছু মামলা আদালতে হয়েছে। এগুলো দেখে বলতে হবে। কিন্তু পরে ওসির সঙ্গে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেনি।   উল্লেখ্য, গত বছর ১৫ ডিসেম্বর গভীর রাতে আদিবাসী অধ্যুষিত সুরিদাশ পাড়ায় ৪ একর ৭৫ শতক ভূমির উপর বাঙালীদের লাগানো আনারস চারা কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা। এটি আদিবাসীরা কেটে দিয়েছে অভিযোগ করে বাঙালীদের সংঘবদ্ধ একটি চক্র পরদিন ১৬ ডিসেম্বর সকালে আদিবাসীদের বাড়িঘর আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এতে ৬১টি বাড়ি সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়।     একুশে সংবাদ/এম/ইয়াসমিন/০৮/০৭/১৫
Link copied!