কোথাও ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করলে প্রথমেই মাথায় আসে কক্সবাজার এর কথা। সমুদ্রের কথা ভাবলেই মনটা ভালো হয়ে যায়। একই সাথে সমুদ্রের গর্জন, সারি সারি ঝাউ বন, পাহাড়, দ্বীপ এর মিলনমেলায় যেন ভরপুর কক্সবাজার।সমুদ্রের কাছে বসে সমস্ত ক্লান্তি যেন নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কক্সবাজার। রয়েছে স্বচ্ছ নীল জলরাশির বিশাল সাগর, তার সামনে বিশাল বালিয়াড়ি। যার সৌন্দর্য মুগ্ধ করে সবাইকে।
এছাড়া প্রবাল দ্বীপ, পাহাড়ি দ্বীপ এবং পাহাড়-সমুদ্রের মিশেলের দীর্ঘ ৮০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ সড়ক। তাই একটু ফুরসত পেলেই দূর-দূরান্ত থেকে এই কক্সবাজারে ছুটে আসে হাজারো পর্যটক। এবার ঈদুল আযহার টানা ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন কক্সবাজারসহ এর আশে পাশের দর্শনীয় স্থান।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
পর্যটকদের প্রধান আকর্ষনই কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত। এখানে একইসাথে তিনটি সৈকত রয়েছে। লাবনী বীচ, সুগন্ধা আর কলাতলী বীচ। লাবনী বীচ কক্সবাজারের সবচেয়ে পুরোনো বীচ যা লাবনী পয়েন্ট নামেও পরিচিত।এছাড়া কলাতলী বীচ ডলফিন মোড় নামেও স্থানীয়দের কাছে পরিচিত।সমুদ্রের সবটুকু সৌন্দর্য উপভোগ করতে আপনাকে অবশ্যই সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময়টুকু সৈকতে কাটাতে হবে। ভোরের স্নিগ্ধ আলো আর ডুবে যাওয়া সূর্য সমুদ্র সৈকতের ভিন্ন রুপে আপনাকে বিমোহিত করবে।

কলাতলী, সুগন্ধা, লাবণী
কক্সবাজার শহরের কলাতলী, সুগন্ধা, লাবণী সমুদ্র সৈকতের সাথে কমবেশি সব পর্যটকরাই পরিচিত। শহর লাগোয়া হওয়ার এই সমুদ্র সৈকতগুলোতে হাজারো পর্যটকের ভিড় লেগেই থাকে। কিন্তু ভিড় এড়িয়ে ভিন্নরকম সমুদ্র দর্শনের জন্য যেতে হবে শহর থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে নাজিরারটেক সমুদ্র সৈকতে। সেখানে যেতে পাড়ি দিতে হবে নাজিরারটেক শুটকি মহাল। শুটকির গন্ধ নিতে নিতে টমটম (অটো) বা সিএনজিতে করে চলে যেতে পারেন কোলাহলমুক্ত নাজিরারটেক সমুদ্র সৈকতে। কলাতলী ডলফিন মোড় থেকে টমটম বা সিএনজির রিজার্ভ ভাড়া পড়বে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।
হিমছড়ি
একপাশে পাহাড় একপাশে সমুদ্র এই দৃশ্য দেখতে চলে যেতে হবে হিমছড়িতে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে অবস্থিত হিমছড়ি। হিমছড়ির প্রধান আকর্ষনই হল পাহাড় আর ঝর্ণা। পাখির চোখে সমুদ্র দেখতে প্রায় দুই শতাধিক সিড়ি পার হয়ে পাহাড়ে উঠতে ভুলবেননা যেন। পাহাড়ের চূড়া থেকে কক্সবাজারের সম্পূর্ণ সমুদ্র দেখে নিতে পারবেন এক পলকেই। কক্সবাজারের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান মেরিন ড্রাইভ সড়কেই দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানীর অবস্থান। কক্সবাজার শহর থেকে ২ কিলোমিটার দূরে দরিয়ানগর পার্ক। সেখানে ৩০ টাকা টিকিটে প্রবেশ করে দেখার সুযোগ পাবেন সুউচ্চ পাহাড়ের মাঝখানে গোহা। আর পাহাড়চূড়া থেকে দেখা যাবে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এবং মেরিন ড্রাইভের অপার সৌন্দর্য। দরিয়ানগর পার্ক দেখা শেষে মেরিন ড্রাইভ হয়ে আরেকটু দূরে গেলেই হিমছড়ি। সেখানে ৩০ টাকা প্রবেশমূল্যে গিয়ে দেখা যাবে ঝর্ণা। এছাড়া পাহাড় থেকে দেখা যাবে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য। এরপর সেখান থেকে বেরিয়ে কিছুদূরেই ইনানী সমুদ্র সৈকতের অবস্থান। সারাদিনের জন্য অটো বা সিএনজি ভাড়া নিতে পারে ১৫০০ টাকা।
রামু বৌদ্ধ বিহার
কক্সবাজারে প্রবেশের পূর্বে ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রামু এলাকা । বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র স্থান রামু। বলা হয়ে থাকে আরাকানের রাম রাজবংশের নামানুসারে এই এলাকার নামকরণ হয় রামু। রামুতে সর্বমোট ৩৫টি বৌদ্ধ মন্দির। উত্তর মিঠাছড়ির পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে গৌতম বুদ্ধের সিংহশয্যা মূর্তি যা দেশের সবচেয়ে বড় বুদ্ধ মূর্তি । এর দৈর্ঘ্য ১০০ফুট। বৌদ্ধবিহারের মূল দরজা দিয়ে প্রবেশ করে সামনের দিকে ৮৮ ধাপ সিঁড়ি বেয়ে উঠলেই দেখা মিলবে এই মূর্তির যা আপনার নজর কারবেই। আশে পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এমন আরো ছোট ছোট বৌদ্ধ মন্দির।
পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালী
কক্সবাজারে এসে দেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালী ভ্রমণে না গেলে কক্সবাজার ভ্রমণ একেবারেই যেন পূর্ণতা পাবে না। তাই কম খরচে চলে যেতে পারেন মহেশখালীতে। কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএর ৬ নং ঘাট থেকে নদীপথে যেতে হবে দ্বীপটিতে। জনপ্রতি ১১০ টাকা ভাড়ায় পার হওয়া যাবে নদী। স্পিডবোটে নদী পারাপারই সবচেয়ে মুগ্ধ করবে আপনাকে। এছাড়া সেখানে গেলে মহেশখালী আদিনাথ মন্দির, শ্যুটিং ব্রিজ, বৌদ্ধ মন্দির দেখার সুযোগ পাবেন। এছাড়া লবণের মাঠও দেখা যায় সেখানে। কিছুটা সুন্দরবনের ফিলও নেওয়া যাবে মহেশখালী থেকে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ
সেন্টমার্টিনের সোন্দর্য লিখে বা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন বা দারুচিনির দ্বীপ যে নামেই ডাকিনা কেন। কক্সবাজারের মতই পর্যটকদের ভীড় থাকে এখানে।প্রথমেই বলে রাখি সেন্টমার্টিন ঘুরতে গেলে দিনে গিয়ে দিনে ফেরত না এসে একদিন থেকে যেতে হবে সেখানে নয়তো অনেক কিছুই দেখা মিস হয়ে যাবে। কক্সবাজার শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে টেকনাফ হতে প্রায় ০৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মায়ানমার-এর উপকূল হতে ০৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত ১৭ বর্গ কিলোমিটারের একটি ছোট্ট দ্বীপ সেন্টমার্টিন।সারি সারি নারিকেল গাছ থাকায় স্থানীয়দের কাছে নারিকেল জিঞ্জিরা নামেও পরিচিত এই দ্বীপ।বলা হয়ে থাকে অনেক অনেক বছর আগে প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে দারুচিনি বোঝাই আরবের একটি বাণিজ্যিক জাহাজ পানির নীচে থাকা একটি বিশাল পাথরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ভেঙ্গে পড়ে, যার ফলে জাহাজে থাকা দারুচিনি এই দ্বীপের সবখানে ছড়িয়ে যায় এবং পরবর্তীতে সেন্টমার্টিন দ্বীপের নাম হয়ে যায় ‘দারুচিনির দ্বীপ’।এইতো গেল ইতিহাস। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সেন্টমার্টিনে যেন আকাশ নেমে পড়ে নীল জলে।আকাশ আর সমুদ্রের নীল মিশে একাকার।স্বচ্ছ পানিতে জেলি ফিশ, হরেক রকমের সামুদ্রিক মাছ, কচ্ছপ, প্রবাল বিশ্বরহস্যের জীবন্ত পাঠশালায় পরিণত করেছে এই দ্বীপকে। ভরা পূর্নিমায় খুজে পাবেন সমুদ্রে অন্য এক রুপ। চারিদিকে নীল পানি আর মাঝে চোখ ধাধানো সোন্দর্যে ভরপুর একটি সেন্টমার্টিন দ্বীপ।প্রাকৃতিক ও টাটকা রান্না করা সামুদ্রিক মাছ খেতে পারবেন এইখানে। ঘুড়ি উড়ানো, সাইকেল কিনবা বাইক রাইড অন্যদিক রোমাঞ্চকর ও এডভেঞ্চারপ্রিয় ভ্রমণপিপাসু্রা তাবু টানিয়ে থেকে যেতে পারেন সমুদ্রের পাড়েই।
কুতুবদিয়া দ্বীপ
কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা এই কুতুবদিয়া দ্বীপ যা আয়তনে প্রায় ২১৬ বর্গ কিলোমিটার। আশ্চর্য হবেন এই জেনে যে এই ২১৬ বর্গ কিলোমিটারের এই দ্বীপে কোথাও বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। জেনারেটর ও সৌর বিদ্যুৎ দিয়ে এখানকার বৈদ্যুতিক চাহিদা মেটানো হয়। ধারনা করা হয় চতুর্দশ শতাব্দীর শেষের দিকে সাগরের বুকে কুতুবদিয়া দ্বীপ জেগে উঠে। কোলাহলমুক্ত পরিবেশে সমদ্র উপভোগের সাথে সাথে দেখে নিতে পারেন বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র,কুতুব আউলিয়ার দরবার, কুতুবদিয়া বাতিঘর, লবণ চাষসহ প্রকৃতির নানান বৈচিত্র।
একুশে সংবাদ/এস কে