AB Bank
  • ঢাকা
  • শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

প্রয়াত এক প্রাণের বিরল দেশপ্রেম ‘প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ’


Ekushey Sangbad
তারিক আফজাল, অর্থনীতিবিদ
০২:২৪ পিএম, ২১ জুন, ২০২৫

প্রয়াত এক প্রাণের বিরল দেশপ্রেম ‘প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ’

২৭ মার্চ, ১৯৭১—চট্টগ্রামের কালুরঘাট থেকে মাতৃভূমি ও স্বাধীনতার জন্য এক বীরের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের সূচনা।

সংসারের মায়া ত্যাগ করে জীবন বাজি রেখে লড়াই করা সেই যোদ্ধা—শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বীর উত্তম।

বগুড়ার গাবতালির বাগবাড়ির সন্তান, যিনি ১৯৫৫ সালে ১২তম পিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে কমিশনপ্রাপ্ত হন। সেই শপথেই তিনি সার্বভৌমত্ব ও দেশমাতৃকার প্রতি অঙ্গীকার করেছিলেন।

পরবর্তীতে স্বাধীনতাকামী সেই বীর ‘জেড ফোর্স’-এর নেতৃত্ব দিয়ে বীরত্বের পরিচয়ে ছিনিয়ে আনেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
হানাদার বাহিনীর পরাক্রম চূর্ণ করে দিয়েছিল তার বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত ঘোষণা : ‘আমি জিয়াউর রহমান, বাংলাদেশের পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করছি।’

সংসার-পরিত্যাগী সেই বীর প্রমাণ করেছিলেন—‘সবার উপরে দেশ’।

১৯৭৬ সালে জাতির ক্রান্তিকালে তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত হন এবং ১৯৭৮ সালে ঐতিহাসিক নির্বাচনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের ইতিহাসে তার মতো একক বিজয়ের দৃষ্টান্ত, নিরপেক্ষতা ও জনগণের অংশগ্রহণ আজও বিরল।

নীতিনিষ্ঠ, মানবিক ও ন্যায়পরায়ণ সেই মানুষটি জীবনের শেষদিন পর্যন্ত মূল্যবোধে অবিচল ছিলেন।

তিনি প্রণয়ন করেন ১৯ দফা উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনা, যার মধ্যে ছিল অর্থনীতির বিকাশ, আত্মনির্ভরতা, গ্রামীণ উন্নয়ন, প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ, খোলা বাজারনীতি এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ।

কৃষিকে অগ্রাধিকার দিয়ে তিনি কৃষকের জীবনমান উন্নয়ন, রপ্তানিমুখী কৃষি, খাদ্যে স্বনির্ভরতা এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে দেশীয় শিল্প প্রসারে আন্তরিক ছিলেন।

দুর্ভাগ্যবশত, পরবর্তীতে শিল্প প্রসারের নামে দুর্নীতি, নামমাত্র কিছু উদ্যোক্তার ব্যাংক লুট ও অর্থপাচার দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়।

১৯৭৮–৭৯ সালে তার গ্রামভিত্তিক অর্থনীতির দর্শন আমাকে (লেখক) গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। সেই থেকেই আমি কৃষি উন্নয়ন ও ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পে আগ্রহী হয়ে উঠি।

‘গ্রামসরকার’ ও ‘গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী’ প্রবর্তনের মাধ্যমে তিনি স্থানীয় প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণের পথ সুগম করেন। তার প্রবর্তিত বৈদেশিক নীতি এবং জাতিসংঘে উপস্থাপিত দর্শন আজও বিশ্বের দরবারে প্রশংসিত।

ইসলাম ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সমন্বয়ে তিনি সংবিধান সংশোধন করেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বহুমাত্রিক অংশগ্রহণের ভিত্তিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ছিল তার এক অসামান্য অবদান, যার অভাব জাতি আজও অনুভব করে।

‘খাল খনন’ কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষি পুনরুদ্ধার ও গ্রামীণ উন্নয়নে তার অবদান আজও দেশের মানুষের মনে গেঁথে আছে।

গ্রামভিত্তিক অর্থনীতি ও পরবর্তীতে শহরভিত্তিক উন্নয়নের সমন্বয়ে তিনি সামগ্রিক অর্থনৈতিক গতিপথের নিয়ন্ত্রণের একটি সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেন।

আজ তার অনুপস্থিতিতে জাতি হতাশ, দিকভ্রষ্ট, ঋণগ্রস্ত এবং অনেক ক্ষেত্রে অসহায়।

জাতীয় মর্যাদা ও আত্মসম্মানের প্রতীক সেই বীর আজ আমাদের মাঝে নেই। তবে তিনি রেখে গেছেন আদর্শ ও অনুপ্রেরণার এক উজ্জ্বল ইতিহাস।

১৯৮১ সালের মে মাসে দেখা সেই দৃশ্য—‘একটি লাশের পাশে সমগ্র বাংলাদেশ’— আজও স্মৃতিতে অমলিন। সেই মুহূর্তে ফিরে গেলে হৃদয় ভিজে ওঠে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায়।

সার্থক সেই মুক্তিযোদ্ধা, রাষ্ট্রনায়ক—একাধারে সৎ, সাহসী, কর্মঠ ও প্রচারবিমুখ, সেই প্রাণ আজ নেই।

শ্রদ্ধা ও শপথ- তোমার মহিমায় শপথ করি—তোমার আদর্শে অবিচল থেকে কখনও তোমার প্রতি বিমুখ হব না। নিঃস্বার্থভাবে সংগ্রামী হব, হব আগামীর জন্য সার্থক।

‘তুমি রবে নীরবে’

— তারিক আফজাল

 

একুশে সংবাদ/এ.জে

Link copied!