- বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির দূত শেখ হাসিনা
- নতুন নতুন রেলপথ ও স্টেশন নির্মাণ
- যমুনা নদীতে রেলসেতু নির্মাণ
- সারাদেশে ডাবলাইন নির্মাণের আরও একধাপ এগিয়ে
- বঙ্গবন্ধুর শুরু শেষ করছেন কন্যা হাসিনা
উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা বলয়ে জুড়লেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের ভঙ্গুর যোগাযোগ ব্যবস্থার মাথা উঁচু অবস্থানের মুকুট যদি কাউকে দিতে হয়, তাহলে চোখ বুঝে তা তুলে দিতে হবে শেখ হাসিনার মাথায়।
বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের ভারতীয় উপমহাদেশের সশস্ত্র বিপ্লবের মহানায়ক মাস্টার দা সূর্য সেন। ১৯৩০ সালে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার যে আন্দোলন হাত ধরে শুরু হয়েছিল, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য দিয়ে সেই আন্দোলন পূর্ণতা লাভ করে।
কিন্তু যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা সচলে বঙ্গবন্ধু সর্বপ্রথম ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথ সচলের উদ্যোগ নেন। তিনি চেয়েছিলেন সাধারণ মানুষ যেন অল্প পয়সায় পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি নিজেরা যাতায়াত করতে পারেন। কিন্তু ৭৫` পরবর্তী বঙ্গবন্ধুর বিজ্ঞান ভিত্তিক ভাবনাকে সরিয়ে স্বার্থান্বেষী মহলের সুবিধাকে আগবাড়িয়ে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, জনবান্ধব রেল-ব্যবস্থাকে পর্যায়ক্রমে বন্ধের তালিকায় তুলে দেওয়া হয়।
ইতিহাস হারিয়ে যায় ইতিহাসের পাতায়। ইতিহাসকে পূ্র্ণোদ্ধার করতে ২০০৮ সালে দেশ পরিচালনার মাধ্যমে মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের দায়িত্ব এসে পড়ে শেখ হাসিনার ওপর। তিনি গণরায়কে স্বপ্ন বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে অর্থনৈতিক মুক্তির পথে এগিয়ে নিতে শপথ নিলেন।
বললেন, আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা সভ্যতার প্রতীক। সড়ক, নৌ এবং রেলপথের দ্রত উন্নয়নে তার সরকার অগ্রাধিকার প্রকল্প হাতে নেয়। বন্ধ রেলপথ চালু, নতুন রেলপথ ও স্টেশন নির্মাণ এবং রেলকে জনবান্ধন পরিবহনের হিসাবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে `রেলপথ মন্রণালয়` নামে আলাদা মন্ত্রণালয় করে দিলেন।
উত্তাল পদ্মায় সেতু নির্মাণে সীমাবদ্ধ থাকলেন না, বললেন ওপরে দিয়ে যানবাহন আর নিচ দিয়ে ট্রেন চলাচল করবে। পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ! এপথে ট্রেন আসবে কোথা থেকে? পদ্মার দক্ষিণ তীরে বিল। ওখানে বছরের ৬ মাসই পানি। যতসব পাগলের প্রলাপ! কিন্তু নিন্দুকের কথায় থেমে জন্ম হয়নি শেখ হাসিনার। বললেন, বিল দিয়ে, বাড়ির ওপর দিয়ে রেল যাবে! পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন যাবে যশোর। মানুষের সময় ও কর্মঘণ্টা সশ্রয় হবে। এটি শুধু বাংলাদেশ নয়, আন্তঃএশিয় রেলপথ হব। একি বললেন শেখ হাসিনা!
অবশেষে তাই হলো। বিল দিয়ে এবং কমলাপুর থেকে বুড়িগঙ্গা সেতু পর্যন্ত অনেক জায়গায় বাড়িঘরের ওপর দিয়ে ছুটে চলছে ট্রেন। বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার সমৃদ্ধ ইতিহাস লেখার মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসকে জীবন্ত করে তোলার মহানায়ক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার ঢাকা ভঙ্গা রেলপথে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করবেন।
এই পথ দিয়ে আন্তর্জাতিক ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেস, খুলনা-ঢাকা, যশোর-ঢাকা এসব স্থান থেকে ঢাকায় যাত্রী ও পণ্য ট্রেন চলাচল করবে। সব কিছু ঠিক ঠাক থাকলে ফরিদপুর, মাদারীপুর ও আশপাশের এলাকার কর্মজীবী মানুষ ঢাকায় এসে নিত্য অফিস করে ফের বাড়ি ফিরতে পারবেন।
বাংলাদেশের মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতু রেলসংযোগ দিয়ে পরীক্ষামূলক ট্রেনচলাচল সম্পন্ন হয় ৭ সেপ্টেম্বর। এরপর আর কয়েক বার এ পথে ট্রায়াল রান করে রেলভবন। ঢাকা-যশোর রেলপথের এই মেগা প্রকল্পে ভাঙা পর্যন্ত সম্পন্ন করে নজির সৃষ্টি করলেন শেখ হাসিনা সরকার। শুধু তাই নয়, সেই সঙ্গে কলকাতা অভিমুখে অর্ধেক পথ এগুলো রেল। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি একটি আন্ত:দেশীয় যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম।
আন্ত:দেশীয় রেলসংযোগটি দিয়ে মোংলা বন্দর থেকে কোন পণ্যবাহী ট্রেন সরাসরি চলে যাবে ত্রিপুরা, আসামসহ ভারতের উত্তরপূর্ব রাজ্যে। এই বাধাহীন চলাচল সময় সাশ্রয়ী পণ্য-পরিবহন তরান্বিত করবে। উভয় দেশের বাণিজ্যে যোগ হবে নতুন মাত্রা। আগামী বছর থেকে ঢাকা-কলকাতার মধ্যে মাত্র ৪ ঘন্টায় যাতায়ত করা সম্ভব হবে।
কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গ থেকে পণ্যবাহীন ট্রেন সরাসরি ভারতের উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলোতে পরিবাহিত করা যাবে।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রথম ধাপে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৮২ কিলোমিটার রেলপথের কাজ প্রায় সম্পন্ন। সেই পথে ৭সেপ্টেম্বর ট্রায়ালরান সম্পন্ন করলো রেলমন্ত্রণালয়। সেদিন ভাঙ্গায় ব্রিফিংয়ে রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানালেন, সারাদেশে ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণের পাশাপাশি ইলেট্রিক ট্রেনের চিন্তাও করছে রেল মন্ত্রণালয়।
ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ কাজ সম্পন্নর পর সফল ট্রয়াল রান হল। এই প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছরের জুনে শেষ হবে। তার আগেই অর্ধেক রেলপথে ট্রায়াল রান সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে আরও একধাপ এগুলো রেল মন্ত্রণালয়।
প্রকল্পের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই যশোর পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হবার আশা করেন রেলপথমন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ এই রেল ব্যবস্থার সুফলভোগী হবেন।
এলাকার সাধারণ মানুষ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, বিলের ওপর দিয়ে ভাঙ্গায় ট্রেন এসেছে, তাতে আমরা কতটা খুশি তা বোঝাতে পারবনা। তারা কোন দিন ভাবেনি এই জায়গায় ট্রেন আসবে। বাড়ির ছাদে, রাস্তায়, ক্ষেতে-খামারে কারখানায় দাঁড়িয়ে মানুষ করতালি দিয়ে অহংকার প্রকাশ করে। মানুষের প্রাপ্তির এই উচ্ছাস অমূল্য। ট্রেনের হুইসেল শুনে অনেক মা ছোট্ট সন্তানটিকে বুকে আকড়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসেন এবং একমুখ হাসি দিয়ে নতুন অতিথিকে অভিনন্দন জানান।
বিপুল সংখ্যক মানুষ রেললাইনের দুই পাশে দাঁড়িয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। আসা-যাওয়ার পথে একই দৃশ্য বলে দেয় বঙ্গবন্ধু ডাকে এই বাঙালি ঘর ছেড়েছিল। সেই পুরষ্কার আজ এনে দিলেন তারই কন্যা শেখ হাসিনা
একুশে সংবাদ/আ.ভ.প্র/জাহা