AB Bank
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী
বিশ্ব মা দিবস আজ

নাড়ি ছেড়া ধন আমি কী ফালাইতে পারি?


Ekushey Sangbad
মুহাম্মদ আসাদ
১২:৫২ পিএম, ১৪ মে, ২০২৩
নাড়ি ছেড়া ধন আমি  কী ফালাইতে পারি?

প্রতীকী ছবি

নাড়ি ছেড়া ধন আমার। বাসায় বাসায় কাজ করে খাওয়াই। বাপে দুই ছেলে-মেয়ে ফালাইয়া গেছে। আমি তো ফালাইয়া যাইতে পারিনা ’কথাগুলো বলছিলেন একুশ বছর বয়সী গৃহকর্মী রহিমা খাতুন।

 

রহিমা খাতুন গ্রামের বাড়ি ভোলার লালমোহন উপজেলায়। অল্প বয়সে বিয়ে হয় তাঁর। স্বামী ঢাকায় দোকানে চাকরি করতেন। বিয়ের পর ঢাকার যাত্রবাড়ী ভাড়াবাসায় নিয়ে আসেন। বিয়ের চার বছর পরে এক  গার্মের্টস কর্মীকেও বিয়ে করেন তাঁর স্বামী। এক পর্যায়ে রহিমা  ও দুই সন্তানের খোঁজখবর নেওয়া.ঘর ভাড়া বন্ধ করে দেন। সন্তানদের নিয়ে আয়েশা বিপাকে পড়েন। ঢাকার বিভিন্ন এলকায় ন স্বামীকে খুঁজতে থাকেন। তাতে ব্যর্থ হন। পরে জুরাইন এক  বাড়িতে ওঠেন। তার সহযোগিতায় বিভিন্নি বাসায় গৃহকর্মীর কাজে শুরু করে দেন।  রহিমা  বলেন, প্রতিদিন কাকডাকা ভোরে কাজ শুরু করেন। দুই সন্তানের জন্য খাবার তৈরি করেন। সাড়ে ৭টার মধ্যেই কাজে যেতে হয়। দুপুরে এক ঘণ্টার বিরতিতে হেঁটে আবার বাড়িতে যান। সন্তানদের খাইয়ে, ঘুম পাড়িয়ে আবারও ছোটেন কর্মস্থলে। রাতে ৯টায় বাসায় ফেরেন। সন্তানদের যত্ন নেন, লেখাপড়া করান। সব কাজ শেষে বিছানায় যান রাত সাড়ে ১১টায়। জীবনের চাকা এভাবেই ঘোরে তাঁর।

 

গবেষণা প্রতিষ্ঠান এশিয়ান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্টের (এসিডি) এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, পোশাক খাতে ২০২০ সালে নারী ও পুরুষ কর্মীর হার দাঁড়ায় যথাক্রমে ৬০ ও ৪০ শতাংশ। নিম্ন আয়ের নারীশ্রমিকের অধিকাংশই পারিবারিকভাবে সুখী হন না। স্ত্রী-সন্তান ছেড়ে চলে যান অনেক পুরুষ। সন্তানকে নানি-খালার কাছে রেখে কাজ চালিয়ে যান নারী। কেউ কেউ সন্তানদেরও শ্রমে যুক্ত করেন। শুধু পোশাকশিল্পেই নয়, উপকূলীয় অঞ্চলেও পুরুষদের বহুবিবাহের ঘটনা বেশি ঘটে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে স্বামী মারা গেলেও সংসারের হাল ধরেন নারী।

 

রাজধানীর সায়দাবাদে মালা বিক্রি করেন  সালেহা বেগম (৩০)। সংসারের কাজকর্ম শেষে মোতালেবের মা মালা গাঁথেন। সেই মালা  ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন তিনি। সে জানায়, দিনে ২০-২৫টি বিক্রি হয়। একেকটায় লাভ হয় ১০ টাকা। কুমিল্লার দেবিদ্বারে গ্রামে তার বাড়ি। তার বাবা পরিবার ছেড়ে চলে গেছেন। দিনে যা আয় হয়, তা দিয়ে চাল-আলু কিনে বাড়ি যায় সে।

 

রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন লুনা। একমাত্র সন্তান সামিয়া নিয়েই তাঁর সংসার। এক রাতে  হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে লুনা স্বামী মৃত্যুবরণ করেন। সামিয়ার বয়স তখন এক বছর । সেই থেকে শুরু একাকী সংগ্রাম। চাকরির পাশাপাশি একজন আদর্শ মা হিসেবে সন্তানকে দেখভাল করছেন।

 

জেন্ডার বিশেষজ্ঞ মনজুন নাহার বলেন,  গর্ভে সন্তান ধারণ করলেই যে একজন মা হন, তা নয়। তাঁকে মানসিকভাবেও মা হয়ে উঠতে হয়। শত বাধা-বিপত্তিতেও মানসিকভাবে শক্ত বলেই একজন প্রকৃত অর্থে মা।

 

শাশ্বত রূপের মায়েদের সম্মান জানাতেই আজ পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব মা দিবস’। আধুনিক বিশ্বে মে মাসের দ্বিতীয় রোববারটিকে ‘মা দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে, যার সূত্রপাত ১৯০৮ সালের ৮ মে। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে সবাই পালন করে মা দিবস। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ভরে ওঠে মায়ের সঙ্গে সন্তানদের ছবিতে, নানা লেখায়। বছরের অন্যান্য দিনের তুলনায় এদিন অনেক বেশি মানুষ নিজের মাকে ফোন করেন, তার জন্য ফুল কেনেন, উপহার দেন।

 

মাকে নিয়ে লেখা হয়েছে শত সহস্র কবিতা, গান। সেই গানে ব্যক্তি মা যেমন রয়েছে তেমনি দেশকে মা সম্বোধন করেও লেখা হয়েছে গান, কবিতা। বাংলা সাহিত্যে মাকে নিয়ে লেখা বিখ্যাত কয়েকটি কবিতা রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের  মনে পড়া , শামসুর রাহমানের  কখনো আমার মাকে , হুমায়ুন আজাদের আমাদের মা, আল মাহমুদের নোলক, কালিদাসের  মাতৃভক্তি  উল্লেখযোগ্য।

 

বর্তমানে প্রচলিত মা দিবসের সূচনা হয় ১৯০৮ সালে। গত শতাব্দীর শুরু দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার এক স্কুলশিক্ষিকা অ্যানা জারভিস সেখানকার পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা দেখে মর্মাহত হয়ে মায়ের জন্য বিশেষ দিন পালনের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি করার কথা ভাবলেন। তার সে ভাবনা বাস্তবায়নের আগে ১৯০৫ সালের ৯ মে তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর পর মেয়ে অ্যানা এম জারভিস মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণের উদ্দেশ্যে কাজ শুরু করেন। বন্ধুবান্ধবকে নিয়ে ১৯০৮ সালে তার মা ফিলাডেলফিয়ার যে গির্জায় উপাসনা করতেন, সেখানে সব মাকে নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মা দিবসের সূচনা করেন। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আনুষ্ঠানিকভাবে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে মায়েদের জন্য উত্সর্গ করে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করা হয়।

 

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা ‘মাকড়সা’

মা সন্তানের জন্য নিজেকে সম্পূর্ণ বিলিয়ে দেন সন্তানের বেঁচে থাকার এবং মঙ্গল কামনার জন্য এ চিরন্তন সত্যটি শুধু মানুষের মধ্যেই নয়, প্রকৃতির অন্য প্রাণিদের ক্ষেত্রেও এটি সত্যি। তেমন এক প্রাণির নাম মাকড়সা। মাকড়সার ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। মা মাকড়সা সেই ডিম নিজের দেহে বহন করে বাচ্চা না হওয়া পর্যন্ত। যখন বাচ্চা হয় তখন মা মাকড়সা বাচ্চাদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য নিজের শরীর বিলিয়ে দেয় তাদের খাবারের জন্য। বাচ্চা মাকড়সারা মা মাকড়সার দেহই খেতে শুরু করে ঠুকরে ঠুকরে। সন্তানের জন্য মা নীরবে হজম করে সব কষ্ট-যন্ত্রণা। এমনি করে এক সময় মায়ের পুরো দেহই চলে যায় সন্তানদের পেটে। মাকড়সা মায়ের সন্তানের জন্য এ আত্মত্যাগের কারণেই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা হিসেবে মাকড়সার স্থান অনেক ওপরে।

 

দেশে দেশে ‘মা’

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষায় ব্যবহৃত  মা  ডাকের শব্দগুলোর মধ্যকার উচ্চারণগত এই সাদৃশ্য কীভাবে ঘটল তা এক বিরাট রহস্য। তবে ভাষাবিদ রোমান জ্যাকবসন এর পেছনে যুক্তি দেখিয়েছেন যে, শিশুরা যখন তার মায়ের দুধ পান করে, তখন তারা তাদের মুখভর্তি অবস্থায় কিছু শব্দ করে। সেই শব্দগুলো নাক দিয়ে বের হয় বলে উচ্চারণগুলো অনেক ম -এর মতো শোনা যায়। তাই প্রায় সব ভাষায়ই মা ডাকে ব্যবহৃত শব্দগুলো  ম  বা  এম  দিয়ে শুরু হয়।

 

মা শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ মম, যা পূর্বে ব্যবহৃত শব্দ মাম্মা র পরিবর্তিত রূপ। ধারণা করা হয়, ইংরেজি শব্দ মাম্মা এসেছে ল্যাটিন শব্দ মাম্মা থেকে। যা  স্তন  বোঝাতে ব্যবহৃত হতো। এই শব্দ থেকে  ম্যামেল উত্পত্তি। যা কিনা স্তন্যপায়ী প্রাণীর ইংরেজি প্রতিশব্দ। মজার ব্যাপার হলো, পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই মা কে বোঝাতে ব্যবহৃত শব্দগুলোর উচ্চারণ প্রায় কাছাকাছি। আর সবগুলো শব্দের শুরুতেই ব্যবহৃত হয়েছে এম অথবা ম বর্ণটি। জার্মান ভাষায় মাট্টার, ওলন্দাজ ভাষায় ময়েদার, ইতালিয়ান ভাষায় মাদর, চীনা ভাষায়  মামা, হিন্দি ভাষায় মা, প্রাচীন মিশরীয় ভাষায় মাত, সোয়াহিলি ভাষায় মামা এবং আফ্রিকান্স ও বাংলা ভাষায় মা ।

 

একুশে সংবাদ/আ.জ.প্র/জাহাঙ্গীর

Link copied!