AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

পুরুষ শূন্য ৩ ইউনিয়ন, নষ্ট হচ্ছে ৩ হাজার বিঘা জমির পাকা ধান


পুরুষ শূন্য ৩ ইউনিয়ন, নষ্ট হচ্ছে ৩ হাজার বিঘা জমির পাকা ধান

চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরাঞ্চলে দুটি হত্যাকান্ডের ঘটনায় ৫টি মামলায় পুলিশি গ্রেফতারের ভয়ে সাড়ে ৩ হাজার বিঘা ইরি-বোরো জমির পাকা ধান কাটতে পারছেনা এলাকাবাসী। গ্রেফতার এড়াতে এলাকা এখন পুরুষশূন্য।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সময়মত ধান কাটতে না পারলে ঝুঁকিতে পড়বে এসব জমির পাকা ধান। আর মামলার আসামীদের না ধরে উল্টো আসামীদের সাথে পুলিশের সখ্যতার অভিযোগ এলাকাবাসী ও নিহতের স্বজনদের। এত হয়রানি ও গ্রেফতার আতঙ্কে সাধারণ মানুষ।

 

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে প্রকাশ, গত ৯ এপ্রিল পদ্মা নদীর মাটি কাটাকে কেন্দ্র করে ইংলিশ মোড়ে একপক্ষ মনিরুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করে। এই হত্যাকান্ডে নিহতের স্ত্রী উজলেফা বেগম বাদী হয়ে ২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৫/৬জনের বিরুদ্ধে মামলা দাযের করেন। মনিরুল হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মোঃ ফয়সাল জানান, এখন পর্যন্ত  এ মামলায় ১ নং আসামীসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

 

এদিকে মনিরুল হত্যাকান্ডের কয়েকদিন পর (২৩ এপ্রিল) সদর উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের জনতার হাটে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্রে করে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে বোমাবাজিতে নিহত হয় জিয়াউর রহমান। এই হত্যাকান্ডে নিহতের স্ত্রী মিলিয়ারা বেগম বাদী হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদকের কালোতালিকাভুক্ত ও চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান শাহীদ রানা টিপুসহ ৪৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৩০/৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

 

মিলিয়ারা বেগম জানান, ‘পুলিশ তাঁর স্বামীর হত্যাকান্ডের মামলায় পক্ষপাত্বিত করছেন। পুলিশ আসামীদের না ধরে তাদরে সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন। আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদের গ্রেফতার করছেন না। উল্টো তাদের করা (বিষ্ফোরক মামলায়) আমাদের লোকজনকে ধরছেন। এমনকি আমার  দুই ছেলেও বাড়িতে থাকতে পারছে না পুলিশের ভয়ে। আসামীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ আমার স্বামীর হত্যাকারীদের গ্রেফতার করছেনা বলেও অভিযোগ করেন মিলিয়ারা।’

 

জিয়াউর রহমান হত্যা মামলার সাবেক তদন্তকারী কর্মকর্তা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক ওবাইদুল জানান, ‘এই হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। তবে, এই মামলাটি এখন ডিবির পরিদর্শক মোঃ শহিদুল ইসলামের কাছে তদন্তভার প্রদান করা হয়েছে।’

 

এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় উপ-পরিদর্শক আশিষ ও মোঃ ইলিয়াসের বাদীত্বে বিস্ফোরক আইনে ৪৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আর ১৫০-১৬০ জনকে আসামী করে পৃথক ২টি মামলা হয়েছে। আর এই দুটো মামলায় একণ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে ১৩ জন।

 

বর্তমানে ২টি হত্যা মামলাসহ ৫ টি মামলায় গ্রেফতার এড়াতে সুন্দরপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড, নারায়ণপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড এবং চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের ১ নং ওর্য়াডের প্রায় বাড়ির পুরুষ গ্রামছাড়া হয়েছে। জিয়াউর রহমান হত্যা মামলার বাদী মিলিয়ারা বেগম জানান, তার দায়েরকৃত মামলায় আসামীরা খুব প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ এই মামলায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। উল্টো পুলিশের বাদীত্বে মামলায় তাদের লোকজনকে গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মিলিয়ারা বেগম। অন্যদিকে নারায়ণপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের রুহুল মেম্বার গং এর আল-আমীন বাদী হয়ে আজিম মেম্বার, মতি চেয়ারম্যানের নাম উল্লেখ করে ৮৯ জনের বিরুদ্ধে কাউন্টার মামলা দায়ের করেন। এই মামলার তদন্তকারী অফিসার ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় উপ-পরিদর্শক মোঃ আজিম জানান, এই মামলায় ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পচিালক ড. পলাশ সরকার জানান, ‘সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড, নারায়ণপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড এবং চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের ১ নং ওর্য়াডের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বিঘা জমিতে ইরি-বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। আর গ্রেফতারী ভয়ে ৩ টি ইউনিয়নের বিশাল অংশের জমির পাকা ইরি-বোরো ধান কাটতে কেউ সাহস পাচ্ছে না। তিনি আরো জানান, আগামী ১৩ তারিখের মধ্যে এসব পাকা ধান কাটা না হলে ঝড়-ঝাঁপটার ঝুঁকিতে পড়বে।’

 

সুন্দরপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, হত্যা এবং বোমাবাজির ঘটনায় গ্রেফতার এড়াতে এলাকা পুরুষশূন্য হওয়ায় কিভাবে মাঠের ধান কাটা যায় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানো হয়েছে।

 

সরজমিনে সুন্দরপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওর্য়াডের মহারাগনগর, চন্দ্রনারায়নপুর, জনতার হাটসহ কয়েকটি গ্রামে গিয়ে এলাকার নারী পুুরষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দিনের বেলা মোড়ে মোড়ে পুলিশের টহল আর রাতের বেলা অভিযানে এলাকার নারী ও শিশুরা আতঙ্কিত। এমনকি এলাকার হাট-বাজার, ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠান সবকিছুই বন্ধ রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কমে গেছে শির্ক্ষার্থীর উপস্থিতিও। গ্রেফতার এড়াতে এবং আতঙ্কে অনেক বাড়িতে তালা মারাও দেখা গেছে। রাতের বেলা আসামী ধরতে গিয়ে মহিলা পুলিশ ছাড়াই; পুলিশ নারীদের সাথে খারাপ ব্যবহারেরও অভিযোগও জানিয়েছেন এলাকার নারীরা।

 

তারা আরও অভিযোগ করেন, এলাকায় পুরুষ মানুষ না থাকায় জমির পাকা ইরি-বোরো ধান কাটতে পারছেন না তারা। বাইরে থেকে শ্রমিক এনে ধানকাটার সুযোগ থাকলেও; অতিরিক্ত পারিশ্রমিকের কারনে সেটিও করতে পারছে না তারা।

 

চন্দ্রনারায়নপুর দারুল আমান দাখিল মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হক জানান, ‘গ্রেফতার এড়াতে এলাকা পুরুষ শূন্য হওয়ায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেক কমে গেছে। এমনকি মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে দেখা যায় দু’একজন বয়স্ক মুসল্লি ছাড়া মানুষের উপস্থিতি নেই।’

 

সদর উপজেলার সুন্দরপুর, নারায়ণপুর ও চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নে মাদকের ভয়াবহতা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। বাড়ি বাড়ি বোমা, ককটেল এবং বোমা তৈরীর সরঞ্জাম গান পাউডার দীর্ঘদিন ধরে মজুদ থাকলেও ইউনিয়ন বিট পুলিশিং এর দায়িত্বে আগে এবং বর্তমানে থাকা উপ-পরিদর্শক আশিষ, জালাল, ওবাইদুল, আকতারুল ও শরিফুলদের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এসব উপ-পরিদর্শকরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ও মাদকমুক্ত ইউনিয়ন গঠনে তেমন ভূমিকা না রেখে চিহ্নিত মাদক কারকারীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলায় তাদের কার্যক্রম নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যা বিট পুলিশিং এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে ভুলন্ঠিত করেছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাদ্রাসা শিক্ষক ক্ষোভের সাথে অভিযোগ করেন।

 

চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের মাদকের কালো তালিকাভুক্ত টিপ, আজিজুল, কাদির, গুধা, নাসির এবং আরেক মাদক সিন্ডিকেটের নেতা নুরুল, জুয়েল, ফটিক, ফাজেল ও ধুলু’র সাথে পুলিশের এসব কর্মকর্তাদের বেশী ধহরম মহরম এখন এলাকার জনশ্রুত। এমনকি ডিবি পুলিশের ২/১ জন উপ-পরিদর্শকের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ সামনে এসেছে। কেননা, চরবাগডাঙ্গা, আলাতুলি ও শাহাজাহানপুর ইউনিয়নে মাদকের এত ছড়াছড়ি থাকলেও; পুলিশের হাতে মাদকসহ আটক বা উদ্ধারের জব্দ তালিকা তেমন নেই।

 

এদিকে একটি সুত্রে প্রকাশ, চরাঞ্চলের সুন্দরপুর, চরবাগডাঙ্গা ও নারায়নপুর ইউনিয়নে আইনশৃংখলার অবনতি, হত্যাসহ বোমাবাজির নৈপথ্য রয়েছে, প্রভাশালী সিন্ডিকেটের পদ্মা নদীর মাটি ও বালু কাটা,  বালুমহল নিয়ন্ত্রণে রাখা, নারায়নপুর ইউপি’র ৯ নং ওয়ার্ডের রুহুল মেম্বারের সাথে সাবেক মেম্বার আজিমের দ¦ন্দ্ব ও ইউনিয়নে ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তারে মাদক সম্রাটদের প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রদর্শন।

 

আর দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরপুরে অবৈধভাবে নদীর মাটি কাটাতে সহায়তার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পূর্বের দায়িত্বরত উপ-পরিদর্শক জালালের বিরুদ্ধে। এই উপ-পরিদর্শক জালাল চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় দীর্ঘ ৫ বছর ধরে কর্মরত থাকার সুবাদে তার সাথে অনেকের সখ্যতা গড়ে উঠেছে। এমনকি সুন্দরপুর ইউনিয়নে তার এখন দায়িত্ব না থাকলেও জিয়াউর রহমান হত্যা মামলার বাদীপক্ষের লোকজনকে টাকা নিয়ে আসার জন্য ফোন দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 

আর জেলা প্রশাসক একে এম গালিভ খাঁন জানান, ‘মাঠে পাকা ধান কাটার বিষয়ে পুলিশ সুপারের সাথে কথা বলবেন।’

 

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম সাহিদ জানান, সদর উপজেলার ২টি ইউনিয়নে ২টি হত্যাকান্ডসহ আরো ৩টি মামলার আসামী গ্রেফতারে পুলিশ কাজ করছে। আর পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ সঠিক নয়। আসামী ছাড়া বাইরের শ্রমিক এনে ধান কাটলে পুলিশের আপত্তি নেই।’

 

এরকম পরিস্থিতিতে এলাকায় শান্তি চায় এলাকাবাসী।

 

একুশে সংবাদ/এসএপি

Link copied!